বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বন ও মানবসভ্যতা

আফতাব চৌধুরী

চারপাশে অজস্র গাছের ভিড়। কালের বিশালদেহী পুরনো সব মহিরুহ, গায়ে গায়ে জড়িয়ে রয়েছে লতাগুল্ম। লতাগুল্মের কারুকার্যময় থামের ওপর আকাশ যেন ছাদ। এ নির্জন চড়াই-উতরাইয়ের শান্ত বনতলে ঘুরে বেড়ানোয় কোনো অবকাশ নেই। দারুণ বাতাস, বনফুল আম-কাঁঠালের গন্ধে শরীর-মন ভেসে বেড়ায়। প্রখর দাবদাহের ক্লান্তি কোনোভাবেই ছুঁতে পারে না। এখন এসব বনানীর সঙ্গে দেখা পাওয়া ক্রমে যেন ধূসর পান্ডুলিপির মতো। বদলে যাচ্ছে চারপাশ, পাল্টে যাচ্ছে আমাদের খুব চেনা পরিবেশটা। বর্তমানের এ আধুনিক থেকে আধুনিকতর সভ্যতার মাঝে দাঁড়িয়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি বনানীকে। মাঝে মাঝে যখন প্রচ- দাবদাহে কিংবা ভূমিকম্পে, বন্যায় আমাদের জীবন বিপর্যস্ত হয় তখন আমরা বনানীর ছায়া আর আলুথালু হাওয়া প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। শুধু আমরাই কেন? পৃথিবীর সব মানুষ এমনিভাবে বনানীকে জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। মৃত্যুর পথে পা রাখছে। এ দুঃসময়ের ছবি তো আমরা মাঝে মাঝে দেখতে পাচ্ছি। সুনামি হলে শহরে হঠাৎ করে নেমে আসা জলস্রোতের ঘটনা, ভূমিকম্প ছাড়াও পৃথিবীর উত্তর মেরুতে বরফ গলে যাওয়া, ক্রমে সমুদ্রের পানিস্তর বেড়ে গিয়ে সন্নিকটের স্থানগুলো পানিতে ডুবে যাওয়া অথবা অন্য স্থানগুলোয় পানিস্তর মাটির নিচে নেমে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় এখন আমাদের ক্রমে চিন্তিত করছে। পাশাপাশি সূর্যতাপ ক্রমে বেড়ে যাওয়া, বৃষ্টির অভাব এগুলো আমাদের উৎকণ্ঠিত করে। এ পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য মানবসমাজ সব ভেদাভেদের গন্ডি ছাড়িয়ে একবোধে জাগরিত হচ্ছে। ১৯৭০ সালে পৃথিবী দিবস পালনের মধ্য দিয়ে গ্রিনহাউস এফেক্ট বিষয়টি প্রাধান্য পায়। যাতে ধরা পড়ে প্রতি ১০ বছরে ২ ডিগ্রি করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দু-তিন দশকে পৃথিবীর ৫০ কোটি একর অরণ্য বিনষ্ট হয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে বা হচ্ছে। এখন জীবনের জন্য পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য চাই বনভূমিকে। আমরা বাঁচতে চাই, প্রজন্মের জন্য সাজিয়ে যেতে চাই এক সুন্দর সুস্থ ভুবন। সেদিক থেকে আমাদের দেশের লোকজন পিছিয়ে নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানজুড়ে এখন চলছে বিভিন্ন কর্মোদ্যোগ। বন দফতর থেকে নদীর তীর, বিদ্যালয়, অফিস রাস্তার পাশ সর্বত্র বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি বসত-ভিটায়ও বৃক্ষরোপণের জন্য চারাগাছ দিয়ে জনগণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর