পানির সবচেয়ে নিরাপদ উৎস বৃষ্টি। বৃষ্টির ফলেই উর্বর হয় মাটি। শুধু জীবিকাই নয়, আমাদের চারপাশে জমে থাকা আবর্জনা, রোগ-জীবাণু ধুয়ে-মুছে করে দেয় পরিষ্কার। বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও বৃষ্টির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যে বৃষ্টির স্বাভাবিক ধারা নিয়ামত তথা রহমত অতিবর্ষণের ফলে তা-ই পরিণত হয় গজবে। অতিবৃষ্টিও মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়। অতিবৃষ্টির ভয়াল রূপই বন্যা নাম ধারণ করে। জলাবদ্ধতা তৈরি করে। প্লাবিত হয় রাস্তা-ঘাট সবকিছু। গাছপালা, শস্য, ফসলের মাঠ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। রোগ-জীবাণু পরিষ্কার হওয়ার বিপরীতে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ।
অতিবৃষ্টির একটি কারণ বৃষ্টি হওয়ার পর আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া আদায় না করা। কোনো নিয়ামত পেয়ে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় না করার ফলেই অনেক সময় তা গজবে পরিণত হয়। আমরা অনাবৃষ্টির সময় মসজিদে মসজিদে বৃষ্টির প্রার্থনা করে দোয়া করলেও বৃষ্টি পাওয়ার পর আল্লাহর দরবারে আদায় করি না কোনো শুকরিয়া। অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো মানুষের পাপের কারণেও হয়। আল কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদাপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ সুরা শুরা, আয়াত ৩০। শহুরে এলাকায় জলাবদ্ধতার বড় একটি কারণ হলো পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার প্রতি আমাদের অবহেলা। আমাদের বাড়ির আশপাশের ড্রেনগুলো আমরা ‘সরকারের জিনিস’ মনে করে এতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখি। ময়লা আটকে থাকায় ড্রেন ও খালের স্বাভাবিক পানি চলাচল ব্যাহত হয়। অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় চরম জলাবদ্ধতা। ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব তো আমাদের। কোটি কোটি মানুষ বোতল, ময়লা-আবর্জনা ফেললে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কী করে তা পরিষ্কার রাখবেন? আমাদের ফেলে দেওয়া পলিথিন, বোতল যখন ড্রেন ও খালগুলো বন্ধ করে দেয় তখনই তা লাখো মানুষের কষ্টের কারণ হয়। মানুষের জন্য কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া ইমানের পরিচায়ক। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমানের ৭০টির বেশি শাখা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সবচেয়ে নিম্নের শাখাটি হলো রাস্তায় কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া।’ বুখারি, মুসলিম। কষ্টদায়ক কোনো জিনিস সরিয়ে দেওয়া যদি ইমানের অংশ হয় তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে রাস্তায় মানুষের জন্য কষ্টদায়ক কোনো বস্তু রেখে দেওয়া ইমানের বিপরীত। ইমানের বিপরীত বিষয়টিই কুফর।
মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এমন জিনিস ফেলে রাখা ইমানের বিপরীত আর অন্য কেউ তা ফেলে রাখলে তাও সরিয়ে দেওয়া ইমানি দায়িত্ব। কষ্টদায়ক বস্তু সরানো আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার অসিলা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একবার রাস্তার ওপর একটি গাছের ডাল পড়ে ছিল, যা মানুষের জন্য কষ্টদায়ক ছিল, এক লোক তা সরিয়ে দিল। এর ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করেন।’ বুখারি। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতের লাল গালিচায় গড়াগড়ি খেতে দেখলাম। (জান্নাতে তার এ পুরস্কার লাভের কারণ) মানুষের চলাচলের পথে একটি গাছ ছিল, যার কারণে চলাচলে কষ্ট হচ্ছিল। এ ব্যক্তি তা কেটে দিয়েছিল (ফলে আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে জান্নাতে এ পুরস্কার দান করেন)।’ মুসলিম।
লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।