মহান সাধক সুফি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি ৪৭০ মতান্তরে ৪৭১ হিজরির ১ রমজান ইরাকের বাগদাদের জিলান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সাইয়েদ মহিউদ্দিন আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদির আল-জিলানি আল হাসানি ওয়াল হুসাইনি। বাবার দিক থেকে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) হজরত আলী (রা.)-এর ১১তম বংশধর। মায়ের দিক থেকে তিনি হজরত আলী (রা.)-এর অষ্টাদশ বংশধর। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) স্বীয় বাবা-মায়ের মাধ্যমেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ঘরে বসে শেষ করেন। বলা হয়, তিনি মাতৃগর্ভে থাকাকালেই ১৮ পারা কোরআন মুখস্থ করেন। মক্তব পড়া শেষ হতে না হতেই তাঁর বাবা মারা যান। বাবার ইন্তেকালের পর সাংসারিক যাবতীয় ভার পড়ে বড়পীরের ওপর। কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। তাঁর মায়ের পরামর্শে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ৪৮৮ সনে ১৮ বছর বয়সে বাগদাদে রওনা হন। সফরে ডাকাতের কবলে পড়লে ডাকাত সর্দারের সঙ্গে সত্য বলে নিজের কাছে থাকা ৪০টি মুদ্রার কথা জানিয়ে দেন। কেননা মা তাঁকে সর্বদা সত্য বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বড়পীরের সত্যবাদিতা দেখে ডাকাতের ৬০ সদস্য মুসলমান হয়ে যান। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি বাগদাদে গিয়ে শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মুবারক মাখজুমি হাম্বলি, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকিল ও আবু মুহাম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ (রহ.)-এর কাছে ইলমে ফিকাহ; শায়েখ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানি, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আবদুল করিম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ (রহ.) প্রমুখের কাছে ইলমে হাদিস এবং শায়েখ আবু জাকারিয়া তাবরেয়ি (রহ.)-এর কাছে সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। বড়পীর অল্প বয়সেই মাদ্রাসার পরীক্ষা দিয়ে শ্রেষ্ঠ সনদ অর্জন করেন। মাত্র নয় বছর শিক্ষা অর্জন করে ১৩টি বিষয়ের ওপর সনদ লাভ করেন। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্ণতা অর্জনের পর বসে রইলেন না। তিনি নিজেকে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেন। তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করেন। তা ছাড়া বড়পীর দাওয়াত ও তাবলিগ এবং বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ইসলামের সুমহান আদর্শ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় উপস্থাপন করেন। তাঁর যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য শুনে অসংখ্য অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি রাতের একটা সময় জিকির ও মুরাকাবা করে কাটান। যৌবনের অধিকাংশ সময় রোজা রেখে কাটান।
বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) শুধু শরিয়ত ও মারিফাতের প-িত ছিলেন না, তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল বিষয়েরও প-িত ছিলেন। বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) হিজরি ৬৬২ সনের ১১ রবিউস সানি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তাঁর ওফাতের দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও গুরুত্বের সঙ্গে ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম হিসেবে পালিত হয়। (সূত্র : ফতহুর রববানি, বড়পীরের পরিচয়)
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।