শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

তারাবির নামাজ ২০ রাকাত সাহাবিদের সর্বসম্মত মত

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

রসুলে পাক (সা.)-এর আমল সম্পর্কে কোনো প্রকার বিতর্কের সৃষ্টি হলে এ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হলো- এ বিষয়ে সাহাবিদের আমল, মতামত ও সিদ্ধান্তকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সাহাবিদের এ অধিকার পবিত্র কোরআন ও হাদিস কর্তৃক স্বতঃসিদ্ধভাবেই স্বীকৃত। এ কারণেই অসংখ্য বিষয়ে সাহাবিদের সিদ্ধান্তাবলি ও মতামতকেই সুন্নত ও শরিয়ত বলে উম্মতে মুসলিমা গ্রহণ করেছেন। এর মূল কারণ ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই যে, সাহাবিগণ রসুলে পাক (সা.)-এর সুন্নতের বিপরীত কোনো কাজে ঐকমত্য পোষণ করতে পারেন; এ ধরনের আকিদা কোনো মুসলমানের থাকতে পারে না। তারাবির বিষয়ে সাহাবিদের মতামত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা এ মূলধারাটি অনুসরণ করতে পারি। কেননা আমরা দেখছি যে, ‘তারাবি ২০ রাকাত’। এ বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম একমত, তাদের এ বিষয়ে কোনো ভিন্নমত নেই। উদাহরণস্বরূপ এ সম্পর্কে কতিপয় উদ্ধৃতি পেশ করা হলো-

আল্লামা কাসানি বলেন, ‘হজরত ওমর সব সাহাবিকে উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে একত্রিত করেছেন। হজরত উবাই প্রত্যেক রাতে ২০ রাকাত করে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। হজরত ওমরের এ পদক্ষেপের ওপর কেউ প্রতিবাদ করেনি।’ আল্লামা কাসানি এরপর বলেন, ‘এর দ্বারা ২০ রাকাতের ওপর সাহাবিগণের ঐকমত্য বোঝা যায়।’

আল্লামা ইবনু আবদিল বার বলেন, ‘তারাবি ২০ রাকাত হওয়াই বিশুদ্ধ মত, হজরত উবাই ইবনে কাআব  থেকেও এটাই বর্ণিত হয়েছে; এ বিষয়ে সাহাবিদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ ছিল না।’ হাম্বলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক ইবনে কুদামাও এ বিষয়ে সাহাবিদের ঐকমত্য উদ্ধৃত করেছেন।

শায়খুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা হেদায়েতুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘হজরত ওমর (রা.) সব সাহাবিকে এক ইমামের পেছনে তারাবি ২০ রাকাত পড়ার নির্দেশ দেন এবং হজরত উসমান ও হজরত আলীসহ সব সাহাবি কোনো প্রকার মতবিরোধ না করে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত হওয়াকেই গ্রহণ করেছেন।’ হজরত ওমর ফারুকের এ নির্দেশের কারণ কী ছিল? এ সম্পর্কে বুখারিন্ডে নিচের হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আবদুর রহমান (রা.) বলেন, একদিন রমজানের রাতে আমি হজরত ওমরের সঙ্গে মসজিদে হাজির হলাম। মসজিদে লোকেরা একা একা এবং অনেকে ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়ছিল। হজরত ওমর বললেন, আমার ধারণামতে লোকদের একজন ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়ালে অতি উত্তম হবে। এরপর এ ধারণাকে চূড়ান্ত করে সবাইকে উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে জমায়েত করলেন।’ প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত সাইদ বিন ইয়াজিদ (রা.) বলেন, ‘হজরত ওমরের যুগে সব সাহাবি রমজানের তারাবি ২০ রাকাত আদায় করতেন।’ মুহাদ্দিস বায়হাকি বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ। শরহে মিহাজে আল্লামা সুবকিও বায়হাকির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

হজরত সাইদ বিন ওয়াহাব বলেন, ‘প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত ইবনে মাউদ আমাদের তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়াতেন।’

হজরত হাসান বলেন, ‘হজরত আলী (রা.) এক ব্যক্তিকে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়াতে আদেশ করেন।’ বায়হাকি বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বারা বোঝা যায়, প্রসিদ্ধ সাহাবি সুওয়ায়েদ বিন গাফালা (রা.) ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন। মোটামুটি কথা হলো, তারাবি ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে সাহাবিদের মাঝে কোনো মতবিরোধ নেই। সুতরাং রসুল পাক (সা.)-এর আমল কী ছিল তা সহজেই অনুমেয়।

তারাবি ২০ রাকাতের বিষয়ে যেমন সাহাবিগণ একমত ছিলেন তেমনিভাবে তাবেয়িন, তাবে-তাবেয়িনগণও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। বরং প্রতি যুগেই উম্মতে মুসলিমা একই মত পোষণ করে আসছেন। শায়খুল ইসলাম মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরি (রহ.) বলেন, ‘তাবেয়িনদের মধ্যে ইবনু আবি মুলাইকা, আতা, আবুল বাখতারি, হারিস হামদানি, সাইদ বিন আবুল হাসান, আবদুর রহমান বিন আবু বকরসহ অন্যরাও এ মত পোষণ করেছেন।’ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনু আবদিল বার বলেন, ‘তারাবি ২০ রাকাত- অধিকাংশ উলামাদের এটাই চূড়ান্ত মত।’ আল্লামা নববী (রা.) বলেন, ‘কাজী আয়াজও ২০ রাকাতকে জমহুরের মতামত বলে ব্যক্ত করেছেন।’ সাহাবা ও তাবেয়িনদের চূড়ান্ত মতামত ওপরে উল্লেখ করা হলো। এতে বোঝা যায়, তারাবি নামাজ ২০ রাকাতের বেশি হতে পারে এ ধরনের মতামত কেউ কেউ পেশ করেছেন, কিন্তু বিশের কম কেউ মতামত পেশ করেননি। বিশের কমের কথা যেসব হাদিসের দ্বারা বোঝা যায় ওগুলো হয়তো তাহাজ্জুদের নামাজ, অথবা সাহাবিদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগের মতামত। কিন্তু হজরত ওমরের যুগে ২০ রাকাতের ওপর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নির্ভরযোগ্য কেউ ২০ রাকাতের কম মত পোষণ করেননি। আর সাহাবিদের বিপরীত মতামত কেউ প্রকাশ করলেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। চার ইমামের মতেও তারাবি ২০ রাকাত। এ ব্যাপারে কিছু উদ্ধৃতি প্রণিধানযোগ্য।

শায়খুল ইসলাম আল্লামা বিন্নুরি বলেন,  ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর আস্হাবগণ, ইমাম মালিক তাঁর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী ইমাম শাফেয়ি, দাউদে জাহেরি ও অন্য সবাই বিতর ছাড়া শুধু তারাবি নামাজই ২০ রাকাত বলে মত পোষণ করেছেন।

মুহাক্কিক ইবনু কুদামা বলেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বলও তারাবি ২০ রাকাত হওয়াকেই চূড়ান্ত মত বলে গ্রহণ করেছেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর