শিরোনাম
শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আসুন নেকি অর্জন করি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

সব ভাষা আল্লাহর দেওয়া হলেও তিনি সমগ্র মানব জাতির হেদায়াতের জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কিতাব (কোরআন মাজিদ) আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন। সুরা বাকারার ২ নম্বর আয়াতে তিনি বলেন, এ সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, সাফল্য লাভকারীদের পথপ্রদর্শক। এ কিতাবের ভাষা আরবি। আমরা আরও জানি কবরের, হাশরের প্রশ্ন হবে আরবিতে এবং জান্নাতের ভাষাও হবে কোরআনের ভাষা। বোঝা ও আমল করার জন্য প্রতিটি জাতির ভাষাভাষী মানুষের অর্থ স্ব স্ব ভাষায় করবেন। এতেও স্রষ্টার নির্দেশনা রয়েছে। তবে তিনি ইবাদতের ক্ষেত্রে যে যে ইবাদতের যে যে নামকরণ করেছেন তা পরিবর্তন করার বা এর অন্য নামকরণের মাধ্যমে ফায়দা আছে বলে মনে হয় না। আল্লাহর দেওয়া নামের চেয়ে উত্তম নাম নেই বলে আমরা কোরআনের অন্য কোনো নামকরণ করছি না। এ ক্ষেত্রে সবাই একমত। একইভাবে ইসলাম আমাদের ধর্ম, আল্লাহর নামকরণই বহাল আছে।

এবার আসা যাক আল্লাহ সুবহানুতায়ালার নাম প্রসঙ্গে। সুরা আল ফাতিহার সূচনাসহ প্রতিটি সুরার (সুরা তওবা ছাড়া) প্রারম্ভে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি)। অন্যদিকে সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৮-তে আল্লাহ স্বয়ং এভাবে তাঁর নাম দিচ্ছেন, ‘নিশ্চয় তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোনো সত্যিকার মাবুদ নেই। এখন প্রশ্ন আসে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা স্বয়ং তাঁর নাম আল্লাহ উল্লেখ করা সত্ত্বেও আমরা এখনো কেউ কেউ ‘খোদা’ আবার কেউ কেউ OH GOD বলছি কেন? কোরআনুল কারিমে তিনি ২ হাজার ৫৮৪ বার তাঁর নাম ‘আল্লাহ’ উল্লেখ করা সত্ত্বেও আমরা কেন নিজেরা তাঁকে অন্য নাম দিয়ে ডাকব। ‘আল্লাহ’ নামের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান আর কোনো নাম থাকতে পারে না। এরপর যে ৯৯ নাম রয়েছে এগুলো হচ্ছে আল্লাহর গুণবাচক নাম। যেমন আল্লাহ রাহমানুর রাহিম, গফুরুর রাহিম ইত্যাদি। আল্লাহ নামের ব্যাখ্যা হচ্ছে, মহিমাময় আল্লাহ! তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকুলের ইবাদত ও দাসত্বের অধিকারী। তিনিই ইবাদতের জন্য একমাত্র মাবুদ। তাঁর কাছে বিনীত হতে হয়, রুকু-সিজদাসহ যাবতীয় ইবাদতের বিষয়গুলো তাঁকেই নিবেদন করতে হয়। কাজেই আল্লাহকে তাঁর নিজের দেওয়া নামে ডাকব। আল্লাহর গুণবাচক ৯৯ নামের মধ্যেও যেহেতু খোদা বলতে কোনো শব্দ নেই সেহেতু ওই নামে তাঁকে ডাকব কেন, বরং আল্লাহকে ‘আল্লাহ’ বলে ডেকে আল্লাহ শব্দের সঙ্গে মিশ্রিত প্রতিটি হরফের বিনিময়ে ১০টি করে নেকি অর্জন করে নেকির পাল্লা ভারী করব।

দ্বিতীয়ত আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব কোরআনের নামকরণ করেছেন কোরআনুল কারিম, কোরআনুল হাকিম, কোরআনুল মাজিদ। তা সত্ত্বেও আমরা তাঁর নামকরণ অনুসরণ না করে লিখছি কোরআন শরিফ। শরিফ শব্দটি বাংলা নয়, কোরআনের কোনো শব্দ নয়। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা তাঁর কিতাবের যে মর্যাদাসম্পন্ন নাম দিয়েছেন এর চেয়ে আধিক মর্যাদাসম্পন্ন নাম দেওয়ার সাহস আমরা না করে খেতে বসলে যেমন বলি বিসমিল্লাহ, শুকরিয়া আদায়ের জন্য আলহামদুলিল্লাহ, আশ্চর্যজনক সংবাদ ও আনন্দের সময় যেমন সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং সালাম দিতে গেলে যেমন সবাই আসসালামু আলাইকুম, জবাবও আরবিতে দিই এমন আরও অনেক নাম যেমন ইসলাম ধর্ম বাংলা ভাষায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, তেমনি কোরআনুল কারিম, কোরআনুল মাজিদ এবং কোরআনুল হাকিমও আমাদের ভাষারূপে গণ্য করে আল্লাহর দেওয়া নামের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করি।

এবার আসা যাক সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সালাত প্রসঙ্গে। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম সবাই জানি এবং মান্য করি, সুরা আলে ইমরান-১৯ এই ইসলাম শব্দ যেহেতু অন্য কোনো নামে নামকরণ করা যায়নি সেহেতু ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভ ইমানের পরে সালাত, যে সালাত শব্দটি আল্লাহ ৮২ বার কোরআনে উচ্চারণ করেছেন। এ সালাত সাবালক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব মানুষের ওপর ফরজ করা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে না পারলে বসে, বসে না পারলে শুয়ে, শুয়ে সম্ভব না হলে ইশারায় আদায় করতে হবে। এত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত ৮২ বার কোরআনে সালাত হিসেবে নাজিল হওয়ার পরও কীভাবে নামাজ শব্দে রূপান্তর হলো বড় আফসোস! জানি না আল্লাহ প্রশ্ন করলে কী জবাব দেব! এজন্য বলছি যে জাকাত শব্দ এসেছে ৩২ বার, হজ শব্দ এসেছে জাকাতের অনেক কম অথচ জাকাত জাকাতই এবং হজ হজই আল্লাহর নামকরণেই বহাল আছে। আমরা এর জবাবে বলে থাকি নামাজ তো সালাতই দোষের কী? প্রশ্ন যদি আসে ইসলাম ইসলাম রইল কেন? জাকাত জাকাত এবং হজ হজ নামে রইল কেন? এ ছাড়া সালাত শব্দের গুরুত্ব না থাকলে আমরা যখন নিয়ত শিখিয়েছি নাওয়াইতুআন সল্লিআলিল্লাহে রাকাই সালাতিল শিখিয়েছি কেন? আল্লাহ আমাদের হেদায়াত দাও আমরা যেন তোমার দিকে তোমার কোরআনের দিকে এবং তোমার বান্দা ও রসুল খাতামান নাবিয়িন মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে পারি। আমরা চেষ্টা করব ইবাদতের অন্য নাম যেমন রোজাকে রোজা না বলে সওম বা সিয়াম, রমজানকে রমজান না বলে রমাদান বলব। তেমনি আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ যে যে মর্যাদাপূর্ণ নামে ভূষিত করেছেন যেমন খাতামান নাবিয়্যিন, রহমাতাল্লিল আলামিনসহ আরও যে যে মর্যাদা আছে তা ছাড়া তাঁর নামের আগে হজরত শব্দটি ব্যবহার করার কোনো কারণ আছে কি না! তা-ও আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে। যেহেতু আরবি খুতবা প্রদানকালে আমরা নবী এবং তাঁর সাহাবিদের নাম উচ্চারণকালে এ শব্দটি সংযোজন করে খুতবা দিচ্ছি না, তাহলে ওই শব্দটি কেন অন্য সময় লিখতে বলতে ব্যবহার করছি। আল্লাহ আমাদের বুঝদার হওয়ার তৌফিক দিন।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর