শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

হজের ফজিলত ও গুরুত্ব

মো. আমিনুল ইসলাম

হজের ফজিলত ও গুরুত্ব

আরবি শব্দ হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, দৃঢ় সংকল্প করা। ইসলামী শরিয়ত মতে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট কার‌্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে কাবাঘর জিয়ারত করাই হজ। প্রত্যেক সম্পদশালী সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর এটা ফরজ। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা প্রচার করে দাও যাতে তারা তোমার কাছে হেঁটে এবং দুর্বল উটের পিঠে করে আসবে দূরদূরান্তের পথ অতিক্রম করে।’ সুরা হজ, আয়াত ২৭। ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করবে তার জেনে রাখা উচিত যে আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭। এ আয়াত থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। আর সামর্থ্যরে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তির হাতে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ থাকতে হবে যা দ্বারা সে কাবাঘর পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে, যার মধ্যে সে কোনো অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কাজ করেনি সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন।’ বুখারি। সুবহানাল্লাহ!

একজন হাজীর জন্য এর চেয়ে আর বড় মরতবা কী হতে পারে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ ও ওমরাহ পালন কর।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৬। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ওপর ইমান আনা। তারপর? তিনি বললেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। জানতে চাওয়া হলো, তারপর কী? তিনি বললেন, কবুল হজ। বুখারি।

তাওয়াফ হজের অন্যতম অনুষঙ্গ। সুরা হজের ২৯ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘এরপর তারা যেন এখানে এসে যাবতীয় ময়লা কালিমা দূর করে, নিজেদের মানতসমূহ পূরণ করে, বিশেষ করে তারা যেন এই প্রাচীন ঘরটির তাওয়াফ করে।’ রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন।’ মুসনাদে আহমদ।

হজের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতে অবস্থান। কোনো হজ পালনকারী ব্যক্তি মুজদালিফার রাতে সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার আগে আরাফাতের ময়দানের সীমানায় উপস্থিত হলে তার হজ আদায় হয়ে যাবে। রসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফাতে অবস্থানই হজ।’ তিরমিজি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি পবিত্র উপার্জন দ্বারা হজ করতে রওনা করে এবং জমিনে পা রাখে এবং লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলতে থাকে তখন আকাশ থেকে আহ্বানকারী বলতে থাকে আমি হাজির এবং তোমার পুরস্কার দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। তোমার উপার্জন হালাল ও বরকতপূর্ণ। তোমার হজ কবুল হবে এবং তা প্রত্যাখ্যাত হবে না।’ বুখারি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সব সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীকে হজ করার তৌফিক দান করুন। কারণ এর মাধ্যমেই আমরা ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধগুলো বাস্তব জীবনে অনুসরণ করতে পারব। আল্লাহ হাজীদের হজ কবুল করে নিন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর