মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মাথা নত না করার শিক্ষা

মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী

মাথা নত না করার শিক্ষা

নবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় মেয়ে ফাতিমাতনয় ইমাম হোসাইন (রা.)। শিশুকাল থেকেই নবীজির আদর- ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। নবীজির হেরা গুহায় প্রাপ্ত আলোর প্রস্রবণ পেয়ে আর ইকরার প্রতিধ্বনি শুনে আলোকিত হয়েছেন। ছিলেন অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সত্য প্রতিষ্ঠায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার সুদৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও বুকভরা সাহস ছিল তার। চলনে বলনে কর্মে ও ধ্যানে যেন নানার প্রতিচ্ছবি। সাহাবায়ে কিরাম তার মধ্যে নবীজি (সা.)-কে খুঁজে পেতেন। রসুল (সা.)-এর মতো ও ইনসাফভিত্তিক আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা সম্পর্কে তার ছিল সুস্পষ্ট জ্ঞান। তাই নবীজির ইন্তেকালের পর খলিফাগণ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। নাগরিকদের পারস্পরিক পরামর্শ এবং স্বাধীন মতামতের আলোকেই পরিচালিত হতো রাষ্ট্র। কিন্তু ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসে খিলাফতের সব চিহ্ন একে একে মুছে ফেলতে থাকে। শুরু হয় রাজতান্ত্রিক শাসন। জনমত উপেক্ষা করে নতুন নতুন রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি হতে থাকে। ধীরে ধীরে শাহি মহলের ভিতরের জৌলুশ বাড়তে থাকে। রাজকীয় দেহরক্ষীদের প্রহরায় আয়েশি জীবনের সূচনা ঘটে রাষ্ট্র-প্রশাসকদের মধ্যে। জনগণের সঙ্গে প্রশাসকের দূরত্ব বাড়তে থাকে। কমতে থাকে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা। অব্যাহত দমন-নিপীড়নের ফলে সাহাবি ও তাবেয়িদের মধ্য থেকে অনেক বিজ্ঞ আলেম নিজেদের রাষ্ট্র থেকে গুটিয়ে নিয়ে জ্ঞান সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। অনেকে আবার ইয়াজিদের রাষ্ট্র ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাওয়াতি মিশন নিয়ে ছুটে যান। এভাবে রাষ্ট্রের সর্বত্র নবীজির কোরআনি আদর্শের বিপরীতে ইয়াজিদি আদর্শ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইমাম হোসাইন (রা.) গর্জে ওঠেন সত্য প্রতিষ্ঠায়। জুলুম-নির্যাতনের মূলোৎপাটনে প্রতিবাদের সুর তোলেন তিনি। ক্ষমতার মোহে অন্ধ ইয়াজিদকে বারবার সতর্ক করেন। তবু ইয়াজিদ সতর্ক হয়নি। উল্টো অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয় নবী পরিবার ও সত্যপন্থি সাহাবিদের ওপর। অবর্ণনীয় জুলুম-অবিচার চালানো হয় মক্কা-মদিনার প্রতিটি ঘরে। সত্যের পথে অবিচল থেকে ইয়াজিদের পাপকর্মের তীব্র বিরোধিতায় অবতীর্ণ হন ইমাম হোসাইন (রা.)। ফলে ইয়াজিদের চূড়ান্ত রোষানলে পড়ে ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে নিজ পরিবার ও সঙ্গীদের নিয়ে ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন ইমাম। তাই মুসলিম বিশ্বের কাছে এটি যেমন বেদনার তেমনি ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়সংকল্প গ্রহণের দিন।

কারবালার এ নির্মম শাহাদাত সত্যপ্রেমীদের চোখ খুলে দেয়। যুগে যুগে সত্যের সেনানীরা অনুপ্রেরণা লাভ করে- জীবন যায় যাবে তবু মিথ্যার কাছে, অসত্যের কাছে মাথা নত করা যাবে না। বাতিলের কাছে মাথা নত করা সত্যপ্রেমীদের ধর্ম নয়। সত্যপ্রেমীরা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্যের জয়গান গায়। জুলমাত ও জাহিলিয়ার দেয়াল ভেঙে সর্বত্র ইনসাফ ও ন্যায়ের ধ্বনি তোলে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পথে নিজেকে পরিচালিত করে। সর্বদা ইয়াজিদি ভন্ডামি, কপটতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে।

হায়! বিশ্ব মুসলিম আজ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শিক্ষা ভুলে গেছে। হোসাইন-প্রেমীদের দায়িত্ব হচ্ছে এসব অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলা। হৃদয়ে হোসাইন (রা.) ও আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা লালন করা। হে প্রভু! আমাদের বেহেশতের সর্দারের কাফেলায় অন্তর্ভুক্ত করে নিন।

লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্টার জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর