মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাই যথেষ্ট

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাই যথেষ্ট

২০/৩০ বাবর রোডে উঠেছিলাম ১৯৭২-এর এপ্রিলে। তার আগে প্রায় চার মাস ঢাকায় এলে উঠতাম গণভবনে। গণভবন তখন এমন ছিল না। স্কুলঘরের মতো লম্বা চমৎকার ১০-১৫টি রুম। নাম ছিল সেন্ট্রাল গেস্টহাউস। মানে পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এলে সেখানে থাকতেন। এপ্রিলের কোন দিন বাবর রোডে উঠেছিলাম এখন আর মনে নেই। বাবর রোডের বাসিন্দা দুবার। একবার স্বাধীনতার পর এপ্রিলে। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে বাবর রোডের বাড়ি থেকে প্রতিরোধযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। দীর্ঘ ১৬ বছর লেগেছিল দেশে ফিরতে। এ ১৬ বছর বাবর রোডে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বসবাস করেছেন। তীব্র গণআন্দোলনে এরশাদের পতনে ১৬ ডিসেম্বর আমি দেশে ফিরেছিলাম। তখন বাবর রোডের বাড়িতে আইবুর রহমান নামে এক অতিরিক্ত সচিব ওপর তলায় এবং নিচতলায় এক পুলিশ কমিশনার থাকতেন। তারা ১৭ তারিখ কাউকে কিছু না বলে সবকিছু নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আমি বাবর রোডে পাকাপাকিভাবে আবার উঠি ২০ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে। বঙ্গবন্ধু বাড়ি দিয়েছিলেন। কাগজপত্র যা দিয়েছিলেন তা সব পূর্ত মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য জায়গা থেকে হারিয়ে গেছে। যদিও আমার কাছে প্রায় সব কাগজই আছে। সরকারি জরিপে ২০/৩০ বাবর রোডের বাসায় আমি যে বাস করি তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তার পরও সংসদে মাননীয় মন্ত্রী আমাকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ ১৫ বছর সরকারি আমলাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাসের বিল নেয়নি। একসময় ’৭৫ থেকে ১৯৯৩-৯৪ সাল পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকার বিল পাঠিয়ে দেয়। আমি আপত্তি জানালে পাঁচ সদস্যের এক কমিটি করে। তারা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটা বিল করে। আমি সে বিল দিয়ে দিই। এরপর কোনো মাসে ১,৭০০/-, কোনো মাসে ২,০০০/-, কোনো মাসে ৮,০০০/-, এক মাসে ৪৮,০০০/- বিল আসে। বিদ্যুৎ বিভাগকে বললে তারা এই অসামাঞ্জস্য বিলের পুরো কপি পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এ ধরনের বিরাট অসংগতি ধরা পড়ে। জানি না কে যেন তখন ডেসার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি এ অসামঞ্জস্য দেখে ভীষণ বিরক্ত হন এবং সঠিকভাবে বিল করতে বলেন। এরপর প্রিপেইড মিটার বসানোয় তবু একটা রক্ষা পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানেও ঘ্যাগের ওপর তারাবাতির মতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রথম ২০০ ইউনিট ফ্রি। খুব সম্ভবত প্রাথমিক ০-১০০ ইউনিট ৩.৫০ টাকা, ১০০-২০০ ইউনিট ৪ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাথমিক ২০০ ইউনিট বাদ দিয়ে পরের স্তরে ২০১-৩০০ ইউনিট ৫.৭০ পয়সা, ৩০১-৪০০ ইউনিট ৬.০২ পয়সা, ৪০১-৬০০ ইউনিট ৯.৩০ পয়সা, ৬০০ ইউনিটের ওপরে ১০.৭০ পয়সা। আমি হিসাব করে দেখেছি মুক্তিযোদ্ধা না হলে আমার বিল ১৭০০ টাকা কম হতো। এই বিদ্যুৎ বিলের জন্য বিদ্যুৎ আদালতেও আমাকে যেতে হয়েছে। বিদ্যুৎ আদালতে গিয়ে দেখি যে ছেলেকে কোলে নিয়েছি আমার এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। পরে সে বিদ্যুতের ঝামেলাও মোটামুটি সমাধান হয়েছে। গত পরশু পানির লাইন কাটতে বীরদর্পে কয়েকজন এসেছিলেন। ঢাকা শহরে পানির লাইন না থাকলে সেটা কারবালার চাইতে মর্মান্তিক। বছর দশেক আগে পানির যখন যেমন তখন তেমন বিলের প্রতিকারে এমডির কাছে গিয়েছিলাম। ভদ্রলোক খুবই সম্মান দেখিয়েছিলেন এবং একটা কমিটি করে সামাঞ্জস্যপূর্ণ বিল করে দিয়েছিলেন। সে বিল সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিলাম। আগে বিল ছিল মাসে ৪০০-৫০০ টাকা, এখন সেটা ২-৩ হাজার। আবার বিলের মাথায় লিখে দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মওকুফসহ। এই কদিন হলো ৬০-৭০ হাজার টাকা বকেয়া বিল পাঠিয়েছে। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ এক মাস বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছিলাম। অসুস্থ হওয়ায় বাবা-মার কবর জিয়ারত করতে মনটা ছটফট করছিল। তাই গত পরশু টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম বাবা-মার কবর জিয়ারত করতে। সে সময় পানির লাইন কাটতে এসেছিল। যারা পানির লাইন কাটতে এসেছিলেন তারা বলছিলেন আমাদের স্যারকে জানালে আমরা চলে যাব। আমি তাদের স্যারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। ভদ্রলোক হয় রাজা-বাদশা-র বংশের কেউ, না হয় ঘোরতর মুক্তিযোদ্ধা-বিরোধী। তার কথা, বিল বাকি থাকলে লাইন কাটা হবে। তার কথা শুনে বলেছিলাম, বেশ লাইন কেটে দিন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তে আমার যতটুকু পানি পাওয়ার কথা দয়া করে সেটুকু দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এরপর লোকজন লাইন না কেটেই চলে গেছেন। আসলে পানির লাইন কাটতে অনেকটা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। বিদ্যুৎ বা গ্যাসের মতো ওপর থেকে কাটা যায় না। যা হোক আগামীকাল ঢাকা ফিরব। ফিরে যা করার করব। কিন্তু বিল বকেয়া থাকলেই লাইন কেটে দেওয়া যায় এটা আমার কল্পনায়ও ছিল না। তাই মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে সরকারি লোকজনের কাছে কী মর্যাদাই-না আমরা পাচ্ছি! অথচ সেদিনও সেনাদিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সে যে দলেরই হোক মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে।’

আমার রাজনৈতিক গুরু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আধ্যাত্মিক গুরু হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। প্রতিবারই হুজুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কবর জিয়ারত করি। হুজুরের কবরে গেলে একটা শান্তি অনুভব করি। এবার যেতে পারিনি। কিন্তু মারাত্মক অপ্রীতিকর এক ঘটনা ঘটেছে হুজুরের মৃত্যুদিনে সন্তোষে তাঁর মাজারে। নতুন দল গণঅধিকার পরিষদ গঠনের পর ভিপি নুরুল ও রেজা কিবরিয়া কর্মীদের নিয়ে হুজুরের মাজারে ফুলমালা দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নাজিম, রূপক, মানিক, শিপন, রবিউল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক নিবিড় পালের নেতৃত্বে মারামারি করেছে। হুজুরের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া লোকদের ওপর আক্রমণ- এ তো পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়ে জঘন্য। আমি অনেকবার বলেছি, হুজুরের জন্মদিন, মৃত্যুদিন তেমন মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয় না। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অনেকবার দেখেছি মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নেই। তারা বোধহয় সেদিন একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। ছাত্রছাত্রীরা যেমন পুকুরের ঘাটে গল্পগুজব করে, শিক্ষকরাও তেমন গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা আসে না। জেলা আওয়ামী লীগ নেতারাও খুব একটা যান না। ছাত্রলীগের তো খবর নেই। মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রলীগ আছে তাই তেমন জানা ছিল না। নামধারী যারা দু-চার জন আছে তাদের কাজ চাঁদাবাজি অথবা নিজেরাই কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া। এর আগে সরিষাবাড়ীর এক ভদ্রলোক ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তার যোগ্যতা কী, কীভাবে ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছিলেন তা তিনিই জানেন। বছরখানেক আগে করোনার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ তিন-চার জনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তারা মন্ত্রীর ঘরে ছিলেন। আমি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে বিদায় করে দেওয়ার সময় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এদের চেনেন? সত্যিই আমি তাদের চিনতাম না। মাননীয় মন্ত্রী পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, ইনি ভিসি, ইনি রেজিস্ট্রার, ইনি অধ্যাপক। আমি তখন বলেছিলাম, সন্তোষে গাছ কাটার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে মিছিল হচ্ছে। আপনারা কেন গাছ কাটছেন? তারা যে একটা কাজের কাজ করছে এ রকম ভাব নিয়ে ভিসি সাহেব বলেছিলেন, গাছ না কাটলে দালানকোঠা করব কী করে? বলেছিলাম, হুজুর মওলানা ভাসানী যে গাছগুলো নিজ হাতে লাগিয়েছেন, দু-একটা গাছ বঙ্গবন্ধুর হাতেও বোনা। আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মাননীয় মন্ত্রী বলেছিলেন, আপনারা হুজুরের এবং বঙ্গবন্ধুর বোনা গাছগুলো না কাটলেই তো পারেন। জানি না, তারপর কী হয়েছে। তবে সন্তোষে যে জায়গা আছে তাতে হুজুরের হাতে বোনা গাছ না কেটেও দালানকোঠা করা যায়। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেতনায় এমন দীনতা সেখানে যারা পড়ে তাদের চেতনা আর কত হবে। তাই তারা হুজুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া লোকদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। হুজুর মওলানা ভাসানীর পবিত্র অঙ্গনে ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ নামধারী বিপথগামী নতুন দলের নেতা-কর্মীকে ফুলমালা নিয়ে অভিনন্দন জানালে কেমন হতো। একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সেটা একটা মহান দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারত। তা না করে এমন গুন্ডামি করে সরকারের, দলের, দেশের কোনো কল্যাণ না করে সমাজের চরম ক্ষতি সাধন করেছে। যে ছাত্রলীগ স্বাধীনতার আগে ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের মাথার মুকুট, মুকুটের কহিনুর সেই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী দেখলে মানুষ এখন দূরে সরে যায়। সন্তোষে ছাত্রলীগের এই নিন্দনীয় ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাননীয় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যথার্থ বলেছেন। ওবায়দুল কাদেরকে আগাগোড়াই ভালোবাসি, ¯ন্ডেœহ করি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে দিল্লির এ্যাপোলো হসপিটালসে ভর্তি ছিলেন। মোহাম্মদ নাসিম, আবদুর রাজ্জাক, মমতাজ হোসেন, নজরুল ইসলাম বাবু, অজয় কর খোকন, বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম ও ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি আমার হাত চেপে ধরে পরম মমতায় বলেছিলেন, ভাই আমরা কি শেষ হয়ে যাব? আজও সে কথা মনে হলে শিহরণ জাগে। সেই ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘যারা দোষী তাদের যথাযথ বিচার করা হবে, শাস্তি দেওয়া হবে। আমরা এসব জঘন্য কাজকে সমর্থন করি না। আমরা জনগণের সেবক, আমাদের মনোবৃত্তি সেবকের মতোই থাকা উচিত।’ আমার মনে হয় এ যাবৎকালে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ রুচিশীল নেতার মতো বক্তব্য তিনি দিয়েছেন। উচ্ছৃঙ্খল কর্মী কখনো দলের সম্পদ নয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা চরম শৃঙ্খলার পরিচয় দিতে পেরেছি বলেই জয়ী হয়েছি। নেতার নির্দেশের বাইরে আমরা থু-থুও ফেলিনি। আমাদের কাছে নেতার আহ্বান ছিল চরম সত্য। আশা করব, হুজুর মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উচ্ছৃঙ্খলতার সুষ্ঠু বিচার সারা দেশের ছাত্রলীগকে সংযত, সহনশীল ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলবে।

ইদানীং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করার ভীষণ তোড়জোড় চলছে। এমনকি সংসদে বিএনপির যে কজন আছেন তারা পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন। এসবে কতটা কী হবে জানি না। কিন্তু সাধারণ মানুষের এসবে খুব একটা আগ্রহ নেই। সেজন্য তাদের তেমন সম্পৃক্ততাও নেই। তেলের দাম একবারে ১৫ টাকা বাড়ানোয় সর্বত্র যে প্রভাব পড়েছে তার জন্য যদি বিএনপি বা তার জোট এর অর্ধেক সক্রিয় হতো তাহলে অনেক কাজের কাজ হতো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি দেশ সফর করে এসে সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রায় সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তিনি যা যা বলেছেন তার একটি কথার সঙ্গেও আমি দ্বিমত করি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বিএনপি এবং জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন তার একটি কথাও মিথ্যা নয়। কিন্তু তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ কথাগুলো না বলতেন দেশবাসী খুশি হতো। তাঁর সত্য কথাও প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন থাকার কারণে বেশ কিছুটা বেমানান মনে হয়েছে। তিনি তো শপথ নিয়েছেন অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে কিছু করবেন না- এটাই সংবিধানের নির্দেশ। বিএনপি নেতা-নেত্রীরা খারাপ করেছেন বলে তিনিও করবেন এমন হলে বলার কিছু নেই। কিন্তু তিনি অন্যদের মতো অন্যায় করবেন না, সংবিধান সমুন্নত রাখবেন, মানবতার নতুন নতুন নিদর্শন সৃষ্টি করবেন এমনটা যদি হয় তাহলে তাঁর বুকের ভিতর আগ্নেয়গিরির আগুন জ্বললেও তাঁকে তা হজম করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবেন কি না। মাননীয় মন্ত্রী আনিসুল হক যেভাবে আইনের পাঁচ পা দেখাচ্ছেন তা ঠিক নয়। তাঁর বাবা সিরাজুল হক একজন অত্যন্ত গুণী মানুষ ছিলেন। ’৯০-এর আন্দোলনের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পক্ষের উকিল হয়েছিলেন বলে তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন তাঁর ছেলে আইনমন্ত্রী। যে যত কথাই বলুন, সরকার সব করতে পারে। কালকেই যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেবেন তা পানির মতো সহজেই করতে পারেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য এক লাইনের একটা নোট পাঠালেই যথেষ্ট। তাই আইনের কোনো বাধা নেই। এসব কথা মূল্যহীন। আর এটা তো সত্য, বিএনপির রাজপথে যদি শক্তি থাকত তাদের দাবি-দাওয়ার মূল্য থাকত। সেদিন আবার কোনো এক নেতা বললেন হরতাল দেবেন। বিএনপি লাগাতার হরতাল দিয়ে অবরোধ দিয়ে ২০১৫ সালেই মানুষের আস্থা হারিয়েছে। সেটা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। বিএনপির আহূত কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোক হলে সরকারকে অবশ্যই অন্য রকম ভাবতে হতো। তাই এটা সত্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সত্যিই অনেকটা মানবতা দেখিয়েছেন। কিন্তু সেটা সংবাদ সম্মেলনে ওভাবে বলা মনে হয় খুব একটা ভালো হয়নি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি চান বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবেন দিতে পারেন। তবে এটা ঠিক, ২-৪ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেওয়া সাধারণ মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। শত শত হাজার হাজার কোটি টাকার ঘুষ তছরুপের কত ঘটনা পড়ে আছে সেখানে ২ কোটি টাকা সেটা তছরুপও নয়, ব্যাংকেই জমা আছে। সেই অনুদানের ২ কোটি টাকা খুব সম্ভবত এখন ৭-৮ কোটিতে পরিণত হয়েছে। তাই বিষয়টা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। এখানে আরেকটা কথা বলা চলে, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল করা হয়েছে। আপিল যে মুহূর্তে গ্রহণ করা হয়েছে সেই মুহূর্তে তাঁকে জামিন দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। সেখানে আইনের কোনো বাধা নেই। তবে যা কিছু হোক শুধু সদিচ্ছার দরকার। দেশে হানাহানি-হিংসা-বিদ্বেষ কমিয়ে আনতে হলে যা কিছু করার মানবিক গুণাবলির দিক থেকে সর্বোচ্চ নিদর্শন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দেখাতে হবে। তবে মুক্তি চাইলে বেগম জিয়াকেও রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা চাইতে হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাই যথেষ্ট। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ ছাড়া চিকিৎসা হবে না, যদি এটাই শেষ কথা হয় তাহলে বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা হয় না এমন যেন না হয়। এমন হলে বাংলাদেশের চিকিৎসার সঙ্গে যারা জড়িয়ে আছেন ডাক্তার, নার্স অন্যদের মনোবল ভেঙে পড়তে পারে। সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নন, সবার বিদেশে যাওয়ার সামর্থ্যও নেই।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর