মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিপন্ন নদ-নদী

এ আত্মঘাতী প্রবণতার অবসান কাম্য

বাংলাদেশকে বলা হয় নদ-নদীর দেশ। মাত্র ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গকিলোমিটারের এই দেশে যত নদ-নদী রয়েছে তা দুনিয়ার অন্য কোনো দেশ নেই। নদ-নদীর কল্যাণে বাংলাদেশে মিঠা পানির উৎসও গর্ব করার মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, দেশের সবচেয়ে মূল্যবান এ সম্পদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা এতটা যত্নবান নই। যে কারণে দেশের নদ-নদীগুলো দখল-দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। নদ-নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। পলি জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রবাহ। অনেক স্থানে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদ-নদীর অস্তিত্ব। একসময়ের নদীকেন্দ্রিক জীবিকাধারীরা পেশা বদলে ভিন্ন পেশায় টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। নদ-নদীর প্রবাহ বন্ধ করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন স্থাপনা। বেশির ভাগ নদ-নদীই ভরা যৌবন হারিয়ে এখন মরা খাল। মাদারীপুরের প্রধান নদ-নদী পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার এখন বেহাল দশা। স্রোতস্বিনী সুরমা একসময় ছিল সিলেটের লাইফলাইন। এ নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে ওঠে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাইকারি হাট, মোকাম। সেগুলো এখনো সরব। পাড়ের এ কোলাহল দেখে নীরবে কাঁদে একসময়ের প্রমত্তা সুরমা। দখল-দূষণ আর ভরাটে সুরমা বিপন্ন। খুলনায় চলছে নদী দখলের উৎসব। প্রভাবশালীরা মহানগরীর রূপসা, ভৈরব, ময়ূর, ডুমুরিয়ার ভদ্রা, হরি, সুখ ও হামকুড়া নদ-নদীর জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা, ইটভাটা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, হাঁস-মুরগির খামার তৈরি করেছেন। রাজশাহীতে পদ্মা নদী দখল রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৯১ অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করলেও উচ্ছেদ করতে পারছে না। শহরের গৃহস্থালি সব ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদীও দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদ-নদীর সঙ্গে বৈরী আচরণ দেশের পরিবেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। অস্তিত্বেও স্বার্থে এ আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর