বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রযুক্তি আসক্ত যুবকদের নিয়ে আমার ভাবনা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রযুক্তি আসক্ত যুবকদের নিয়ে আমার ভাবনা

আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিময়।

প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। এর ফলে মানুষের জীবন- জীবিকা আরও সহজ ও বর্ণিল হয়ে উঠেছে। সন্দেহ নেই, প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত আমাদের পৃথিবী। প্রদীপের নিচে অন্ধকার বলেও একটা কথা আছে। তেমনি এ প্রযুক্তির আছে কালো দিক। কথা ছিল প্রযুক্তি দিয়ে কালো ফেলে ভালো নিয়েই এগিয়ে যাব আমরা। আফসোস! কেন যেন মানুষের মনের ঝোঁক ভালোর চেয়ে কালোর দিকেই বেশি। তাই তো বিশ্বজুড়ে আজ কল্যাণের হাতিয়ার প্রযুক্তিকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে অকল্যাণের মাধ্যম। প্রযুক্তি যত উৎকর্ষতা লাভ করেছে, মানুষের নিরাপত্তা ও জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ততোই ফ্যাকাশে হয়ে পড়েছে। এ যেন নিজের হাতে নিজেই কুড়াল মারার মতো। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ নানান মাধ্যম আজ তারুণ্যের সময়খেকো দানবে পরিণত হয়েছে। এ বড় নির্মম সত্য। বিষয়টি নিয়ে আরও আগেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা এমন, বিষফোঁড়া ফুলে-ফেঁপে পেকে গেলে হুঁশ হয়। ব্যথা হলে বলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কিন্তু এর আগে যে দীর্ঘ সময় বিষফোঁড়া যন্ত্রণা দিচ্ছিল তখন ডাক্তার-বদ্যির খবর নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি না। এটা আমাদের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আনন্দের কথা হলো, অনেক দেরি করে হলেও আমরা বুঝতে পেরেছি, নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হলেও আসলে এগুলো চরম অসামাজিক এবং অমানবিক মানুষ বানানোর বড় হাতিয়ার।

প্রশ্ন ফাঁস থেকে শুরু করে দেহব্যবসা এবং মাদকের আদান-প্রদানে পর্যন্ত ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুকসহ নানান মাধ্যম। তা ছাড়া ফেসবুক ও বিভিন্ন ভিডিও অ্যাপস যে কীভাবে নোংরামি আর অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে তা ভাবতে গেলেও আঁতকে উঠতে হবে। পরকীয়া, আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন-ধর্ষণসহ যেসব সমস্যা আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল করে দিয়েছে, স্বাভাবিক জীবন করেছে বিপর্যস্ত। তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে এসবের পেছনে অনলাইনভিত্তিক চ্যাটিং সাইটগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের দুয়ারে বাংলাদেশ মুসলিম দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তর এখন অনায়াসেই ‘না’ বলে দেওয়া যায়। মুসলিম তরুণরা মাদক-নারী আর ইন্টারনেটের নেশায় ডুবে রয়েছে। হারিয়ে ফেলেছে গবেষণা-শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অবদান রাখার কথা। তাহলে কীভাবে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি একটি সমৃদ্ধ দেশ-জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকার? স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ বন্ধুটি পর্যন্ত ইন্টারনেটের লাল-নীল জগতে ডুবে থাকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে। কর্মজীবীরা চ্যাটিং-গেমিং করে নষ্ট করছে কর্মঘণ্টা। সংসার ভেঙে যাচ্ছে অনলাইন ডেটিং সাইটগুলোর কালো থাবায়। এই যখন দেশের অবস্থা তখন স্বাভাবিকভাবেই কপালের ভাঁজ পুরু থেকে আরও পুরু হচ্ছে দেশদরদি, সমাজদরদি মানুষের। তারা তাদের অবস্থান থেকে বারবার বলছেন, এখনই সময় ইন্টারনেটভিত্তিক চ্যাটিং ও গেমিং সাইটগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার। মহান সংসদের ২২তম অধিবেশনেও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। আমরা আলেমসমাজও মনে করি ইন্টারনেট এবং চ্যাটিং সাইটগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমেই সম্ভব অশ্লীলতা নামক দানবের হাত থেকে দেশ-জাতি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা। এতে আগামীর বাংলাদেশ স্বনির্ভর-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে ইনশা আল্লাহ। এর জন্য আরও একটি সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। আমরা দেখেছি, শত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন।

তাই আমরা বিশ্বাস করি ইন্টারনেটের ব্যাপারেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি সুন্দর-ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বের বুকে অনুকরণীয়-অনুসরণীয় মডেল দেশ বানাবেন বাংলাদেশকে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সময়খেকো ও ঘরভাঙা এই দানবীয় অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর