সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আলিমুল গায়েব হচ্ছেন আল্লাহ

সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন

আলিমুল গায়েব হচ্ছেন আল্লাহ

পবিত্র কোরআন শরিফে গায়েব শব্দটি ৩৫টি সুরায় ৫৯ আয়াতে ৬০ বার রয়েছে। আমি ৫৯টি আয়াতকে একত্রিত করে বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করছি, যাতে বিদগ্ধ পাঠক আল্লাহর দেওয়া সিদ্ধান্ত অবলোকন ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য প্রজ্ঞা ও এলহামের দুটি আয়াত যথাক্রমে ৯১:৮ ও ২:২৬৯-সহ ৬১ আয়াত এবং ভূমিকায় দুই আয়াতসহ ৬৩টি আয়াত চার পর্বে বিভক্ত করে প্রথম পর্ব উপস্থাপন করলাম। ধারাবাহিকভাবে চার পর্ব উপস্থাপন করা হবে। বিষয়ের নামকরণ ব্যতীত আয়াতগুলো হুবহু পেশ করেছি যাতে সব সময় সব মানুষের চিন্তার সুযোগ উন্মুক্ত থাকে। আল্লাহ বলেন, আমি তো আপনার প্রতি কোরআন (কিতাব) নাজিল করেছি এ উদ্দেশে যে, আপনি সুস্পষ্টভাবে তাদের বুঝিয়ে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করে এবং এটা বিশ্বাসী লোকদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ (আল কোরআন ১৬:৬৪)। আল্লাহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন : আর আমি প্রতিটি বিষয়কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি (আল কোরআন ১৭:১২)। তাই গায়েবের আয়াতগুলো একত্রিত করে উপস্থাপন করছি যেন মানুষ নিজের ভ্রান্ত ধারণা দূর করে স্বীয়জ্ঞানে আল্লাহর সিদ্ধান্ত মানতে পারে। আল্লাহ হচ্ছেন ‘আলিমুল গায়েব বা গায়েবের মূল সত্তা : (আয়াত ১৭টি) আল্লাহ বলেন, আর তিনিই যথাযথভাবে আসমানগুলো ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেন, হয়ে যা, তখনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার করা হবে, সেদিনের সর্বময় কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই। তিনি সব অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন, (আল কোরআন ৬:৭৩)। আর আল্লাহর কাছেই আছে আসমান ও জমিনের অদৃশ্যের (গায়েব) তথ্য; আর সব কাজের প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে; অতএব, তাঁরই বন্দেগি কর এবং তাঁর ওপর ভরসা রাখ, আর তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে তোমার পালনকর্তা কিন্তু বেখবর নন। (আল কোরআন ১১:১২৩)। তারা কি জেনে নেয়নি যে, আল্লাহ তাদের রহস্য ও সলাপরামর্শ সম্পর্কে অবগত এবং আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন সমস্ত গোপন (গায়েব) বিষয়। (আল কোরআন ৯:৭৮)। হে নবী আপনি বলে দিন, তোমরা কাজ (আমল) করে যাও। তারপর আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ (আমল) এবং তাঁর রসুল ও মুমিনগণও (আমল) দেখবে। অতঃপর তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে গোপন (গায়েব) ও প্রকাশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে, তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে। (আল কোরআন ৯:১০৫)। আর তারা বলে, ‘কেন নাজিল করা হয় না তার ওপর কোনো আয়াত তার রবের তরফ থেকে?’ আপনি বলে দিন, গায়েবের খবর তো কেবল আল্লাহরই আছে। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষায় রইলাম। (আল কোরআন ১০:২০)। তিনি সব গুপ্ত (গায়েব) ও প্রকাশ্য বিষয় জ্ঞাত আছেন। তিনি সুমহান, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। (আল কোরআন ১৩:৯)। আসমান ও জমিনের যাবতীয় গুপ্ত (গায়েব) বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং কেয়ামতের ব্যাপারে তো চোখের পলকের ন্যায়, বরং তার চেয়েও দ্রুততর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (আল কোরআন ১৬:৭৭)। বলুন, তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভালো জানেন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরিক করেন না। (আল কোরআন ১৮:২৬)। তিনি পরিজ্ঞাতা, তারা যাকে শরিক করে তিনি তার বহু ঊর্ধ্বে। (আল কোরআন ২৩:৯২)। তিনিই অদৃশ্য (গায়েব) ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (আল কোরআন ৩২:৬)। বলুন, নিশ্চয় আমার রব সত্যের দ্বারা অসত্যকে আঘাত করেন। তিনি আলেমুল গায়েব বা গায়েবি বিষয় পরিজ্ঞাত। (আল কোরআন ৩৪:৪৮)। আল্লাহ আসমান ও জমিনের অদৃশ্য (গায়েব) বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত। (আল কোরআন ৩৫:৩৮)। বলুন, হে আল্লাহ, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, গুপ্ত ও প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা, আপনিই আপনার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত। (আল কোরআন ৩৯:৪৬)। নিশ্চয় আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য (গায়েব) বিষয় জানেন, তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (আল কোরআন ৪৯:১৮)। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে (গায়েব) জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। (আল কোরআন ৫৯:২২)। বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াও তা এক দিন তোমাদের এসে পাকড়াও করবেই। তারপর তোমাদের উপস্থিত করা হবে অদৃশ্য (গায়েব) ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর সমীপে এবং তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে সে সবকিছু, যা তোমরা করতে। (আল কোরআন ৬২:৮)। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের (গায়েব) জ্ঞানী, পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (আল কোরআন ৬৪:১৮)।

লেখক : চেয়ারম্যান, তাসাউফ ফাউন্ডেশন।

সর্বশেষ খবর