রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ডা. বুলবুলের খুন, এ আর রহমান ও বঙ্গবীর হাসপাতালে

নঈম নিজাম

ডা. বুলবুলের খুন, এ আর রহমান ও বঙ্গবীর হাসপাতালে

মিছে মরীচিকার পেছনে একটা জীবন কাটিয়ে দিই আমরা। ডা. আহমেদ মাহি বুলবুল ছিলেন আমার ডেন্টিস্ট। হুট করেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় ১২ বছর আগে দাঁত দেখাতে গিয়ে। তারপর তিনি নিজেই তৈরি করে নেন আমার ছোট ভাইয়ের স্থান। ফরিদার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। হুটহাট অফিসে আসতেন। চলে যেতেন কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে। বুলবুলের সঙ্গে আমাদের পুরো অফিসের ভালো সম্পর্ক। সবার সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতেন। সবার চিকিৎসা করতেন। সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ কার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল না? মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করতাম, বুলবুল তুমি কর বিএনপি। হাবিব-উন নবী সোহেল তোমার পাশের বাড়ির। সম্পর্কে তোমার কাজিন। আওয়ামী লীগের লোকজনও তোমাকে খুব পছন্দ করে। বিষয় কী? বুলবুল হাসতেন। বলতেন, ‘ভাইয়া! আমাকে সবাই পছন্দ করে আপনাদের দোয়ায়। আমি সবার ডাক্তার। চিকিৎসকের সম্পর্ক সবার সঙ্গে থাকবে।’ আসলেও তাই। বন্ধু প্রয়াত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাকিবুল হাসান লিটুর মতো বুলবুলও ছিলেন সবার ডাক্তার। ধনী-গরিব সবার চিকিৎসক। কাউকে ফেরাতেন না। কার পকেটে পয়সা আছে, কার পকেটে নেই দেখতেন না। এভাবে সবাই পারে না। আমরাও রোগী পাঠিয়ে দিতাম। রোগী বুঝে ফি ধরতেন। গরিব হলে একদম ফ্রি। ওষুধের টাকাও দিয়ে দিতেন। এ যুগে এমন মানুষ পাওয়া যায় না। অধ্যাপক লিটু মারা গেলেন হৃদরোগে। অন্যের হৃদরোগ চিকিৎসা করতেন, নিজের দিকে তাকানোর সময় পাননি। আর ডা. বুলবুলকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছি না এটা শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনা। মানতে পারছি না বুলবুলকে কেউ হত্যা করতে পারে। তিনটি হাসপাতাল আহত অবস্থায় তাঁর চিকিৎসা করেনি নানা অজুহাতে।

সাদামাটা যুবক ছিলেন বুলবুল। মাঝেমধ্যে বলতেন, ‘ভাই, ডাক্তারি হলো আমার সেবা। ব্যবসা করার চেষ্টা করছি। ব্যবসা করে জীবন ধারণ করতে হবে। সংসার চালাতে হবে।’ ছোট ছোট দুটি বাচ্চা বুলবুলের। মায়ের কাছে ‘বিকাশ’-এ টাকা পাঠিয়েছিলেন সন্তানদের জন্য দুধ কিনে রাখতে। বুলবুলের মা সে সুযোগ পেলেন না। তার আগে বুলবুলকে খুন করল ওরা। তার দুই সন্তানের কী হবে এখন? বুলবুল ব্যবসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁকে আমার ব্যবসায়ী মনে হতো না। যাঁর জন্ম হয়েছিল মানবসেবায় তিনি কী করে ব্যবসায়ী হবেন? মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বুলবুল মানুষের সেবা করে গেছেন। বুলবুলের হত্যারহস্য অবশ্যই উন্মোচন করতে হবে। বের করতে হবে এটা নিছক ছিনতাই, না অন্য কিছু? বুলবুল চিকিৎসক ছিলেন, ছুরিকাঘাতের পর রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন চিকিৎসা নিতে। কেউ দায় নেয়নি। চিকিৎসা দেয়নি একজন চিকিৎসককে! ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশি কেসের কথা বলে। শুনে মর্মাহত হলাম। পায়ের ওপরের অংশে একটি মাত্র ছুরিকাঘাতের ক্ষত। এই একটি ক্ষতে রোগীর মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। সময়মতো চিকিৎসা পেলে বুলবুলের জীবন হয়তো রক্ষা পেত। আজ আর আমাদের সবাইকে আফসোস করতে হতো না। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের দুই দিন আগে ১৩ মার্চ বুলবুল ফোন করলেন। বললেন, ‘ভাই, একটা আলাপ ছিল। কাল আসতে চাই।’ বললাম পরশু আমার অনুষ্ঠান। তুমিও এসো। বুলবুল এসেছিলেন। আমাকে ফুল দিলেন। বললন, ‘আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল। দু-চার দিন পর আসব।’ বললাম ঠিক আছে। সমস্যা নেই। এসো। বুলবুলের আর আসা হলো না। জানা হলো না কী কথা বলতে চেয়েছিলেন।

এ জগৎ-সংসারে দুই ধরনের মানুষ থাকে। এক দলের জন্ম শয়তান হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াতে। অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বিকৃত আনন্দ নিতে। আরেক দলের জন্ম কাজ করতে। মানবতার পাশে দাঁড়াতে। অধ্যাপক ডা. লিটু ও ডা. বুলবুল মানবসেবার জন্য জন্ম নিয়েছিলেন। মানুষের জন্য কাজ করতেন। কিন্তু তাঁরা বেশি দিন থাকলেন না। চলে গেলেন। পীর হাবিবের শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এর মধ্যে ডা. বুলবুলের মৃত্যু আবার আঘাত হানল হৃদয়ের গহিনে। আপনজনরা, শুভানুধ্যায়ীরা খুব দ্রুত চলে যান কেন? খারাপ মানুষ জগৎকে বিষময় করতে বেঁচে থাকে। আর ভালো মানুষ চলে যান সবাইকে কাঁদিয়ে। ডা. লিটু বাংলাদেশ মেডিকেলের উত্তরার হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ছিলেন। শুধু হৃদরোগী নয়, সব অসুস্থ গরিব রোগীর পারলে চিকিৎসা দিতেন। আমরাও তাঁর কাছে গরিব রোগী পাঠাতাম। শুধু আমি নই, ঢাকা শহরের অর্ধেক সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এ কাজ করতেন। সবাই যেতেন লিটুর কাছে। আবার অসহায় রোগীও পাঠাতেন। তাঁর দরজা সবার জন্য খোলা। লিটু ছিলেন গরিবের ডাক্তার। নিজের কাছে পয়সা নেই, ধার-কর্জ করে গরিব মানুষকে চিকিৎসা দিতেন লিটু। ঢাকা শহরে কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক চিকিৎসকরা অতিরিক্ত ফি নিলে, অকারণে অপারেশন করালে লিটু প্রতিবাদ করতেন। কোনো ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করলে সাংবাদিকদের দিয়ে নিউজ করাতেন। এ কারণে অনেক গরিবমারা ডাক্তার তাঁকে পছন্দ করতেন না। ঝগড়া-বিবাদ লেগেই ছিল। বলতাম, নিজের কমিউনিটির বিপক্ষে কেন? জবাবে বলতেন, ‘কমিউনিটির বিরুদ্ধে নই। যারা কমিউনিটির ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমি লড়ছি।’ সব সাংবাদিকের ডাক্তার ছিলেন লিটু। পীর হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরস্পরকে ‘তুই’ বলতেন ছাত্রজীবন থেকে। আমরা তিনজন একসঙ্গে আড্ডা জমাতাম। তাঁরা দুজন মজা করতেন অনেক বেশি। পীরের হৃদরোগ ছিল। হৃদরোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার বিকল্প নিয়ে আমরা কথা বলতাম। মাঝেমধ্যে পীর উপমা টানতেন ল্যাবএইডের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব ভাইয়ের। বলতেন, ‘মাহবুব ভাই বলেছেন রোমান্টিকতা হৃদরোগ কমায়।’ লিটু আরেক ধাপ এগিয়ে একটা কিছু বলতেন। প্রাণ খুলে হাসতাম আমরা। আমাদের সেই দিনগুলো হারিয়ে গেল। প্রথমে গেলেন লিটু। তারপর পীর হাবিব। দুজনই এখন ওপারে, হয়তো আড্ডা দিচ্ছেন হৃদরোগ নিয়ে। দুই দিনের দুনিয়া। আজ আছি কাল নেই। আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। কেউ থাকব না।

জীবিতকালে কেউ বুঝি না এ জীবন বড্ড বেশি ক্ষণস্থায়ী। করোনার ভয়াবহতায় অনেক কিছু জেনেছি। মানুষের ভয়াবহ চরিত্র দেখেছি। স্বার্থপর এ দুনিয়ায় কেউ কারও নই। করোনার প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছিলাম। হাসপাতাল তখন রোগী নেয় না। কোনোভাবে দুটি হাসপাতালের যাত্রা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে ভয় পেয়ে যাই। বাড়ি ফিরে আসি আবার। তখন এক বাড়িতে করোনা রোগী থাকার খবরে পাড়ার মানুষ উৎসাহ নিয়ে সেই বাড়িতে টানিয়ে দিত লাল পতাকা। এক ভয়াবহ অবস্থা। মৃত্যুভয়ের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা বসবাস। আমার আক্রান্তের খবরও ২২ দিন গোপন রেখেছিলাম। চারদিক থেকে পাচ্ছিলাম নিষ্ঠুরতার খবর। আমার স্ত্রী, সন্তানরা পাশে দাঁড়ালেন। আত্মীয়স্বজন খোঁজ নিতেন। টেলি চিকিৎসা দিতেন প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ও ডা. তানিয়া। সবাই আমার মতো ভাগ্যবান ছিলেন না। তখন আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হতো সমাজ থেকে। হাসপাতালে চিকিৎসা ছিল না। সামাজিক মাধ্যম ছিল গুজবের কারখানা। সন্তানরা মাকে রাস্তায় রেখে আসে করোনা সন্দেহে। একজন মানুষের মৃত্যুর পর জানাজা, দাফনে কেউ অংশ নিত না। আপনজনরাও না। সামাজিক প্রতিষ্ঠান পালন করেছিল শেষ বিদায় জানানোর দায়িত্ব। নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর খোরশেদ শত শত লাশ দাফন করেছেন। ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একই কাজ করত। বাসাবো কবরস্থানের ভিডিও দেখছিলাম একদিন। সাদা অ্যাপ্রোন পরা দুজন মানুষ কবর খুঁড়ছেন। অ্যাম্বুলেন্সে লাশ এলো। তিনজন মিলে কবরে লাশ রাখলেন। সেই সব দিনের কথা আজ সবাই ভুলে গেছে। মানুষই পারে সবকিছু এভাবে ভুলে যেতে।

মির্জা গালিব লিখেছেন, ‘কিতনা খাওফ হোতা হ্যায় শামকে আন্ধারো মে/পুছ উন পারিন্দোছে জিনকো ঘর নেহি হোতে।’ অর্থাৎ- ‘সন্ধ্যার অন্ধকার কতটা ভয়ংকর, তা সেই পাখিকে জিজ্ঞাসা কর; যার কোনো ঘর নেই।’ আল্লাহ সবাইকে সব দেন আবার অনেক কিছুই রেখে দেন নিজের হাতে।

শিল্পী এ আর রহমান ঢাকা সফর করলেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কানায় কানায় পূর্ণ দর্শকের সামনে দীর্ঘ সময় গান করলেন। গাইলেন... ‘কুন ফাইয়াকুন কুন ফাইয়াকুন... সাদাকাল্লাহু আলিউল আজিম...’। অর্থাৎ, ‘তিনি (আল্লাহ) চাইলে সবকিছু সৃষ্টি হয়ে যায়, তিনি চাইলে সব শেষ হয়।’ কুন ফাইয়াকুন আল কোরআনের সুরা ইয়াসিন থেকে নেওয়া। সুরা ইয়াসিনে আছে, ‘ইন্নামা আমরুহু ইজা আরাদা শাইআন আইইয়াকুলা লাহু কুন ফাইয়াকুন’। অর্থ হচ্ছে- ‘তিনি (আল্লাহ) যখন কিছু করতে চান তখন তাকে শুধু বলে দেন হও এবং হয়ে যায়।’ এ গানটি হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে (রহ.) বন্দনা করে। তাঁর মাজারে একদিন গানটা শুনেছিলাম। এক রাতে নিজামুদ্দিনের মাজার জিয়ারত শেষে বেরোনোর সময় দেখলাম হারমোনিয়াম বাজিয়ে একজন গানটি গাইছেন। থমকে দাঁড়ালাম। গানের শুরুটা এমন- ‘ইয়া নিজামুদ্দিন আউলিয়া/ইয়া নিজামুদ্দিন সরকার/কদম বাধা লে/হ্যাডন কোন মিটা লে/আজা খালিপান মেইন নেই কা ঘর তেরা/তেরে বিন খালি আজা খালিপনে মেইনে/তেরে বিন খালি আজা খালিপনে মেইনে...।’ কিছু ঘটনা মানুষকে বদলে দেয়। গানটির গায়ক এ আর রহমানের জীবনটাও ছিল অনেক দুঃখ-কষ্ট আর বেদনার। হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছেন। এ এস দিলীপ কুমার থেকে হয়েছেন আল্লাহ রাখা রহমান বা এ আর রহমান। ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি জন্ম ভারতের মাদ্রাজে। তাঁর বাবা রাজগোপালা কুলাসেখরন একজন সংগীত পরিচালক ছিলেন। নয় বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। সংসারের খরচ জোগাতে ১১ বছর বয়সে বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা গ্রুপে কি-বোর্ড বাজাতেন। কঠিন সংগ্রামী জীবনে ১৯৮৮ সালে দিলীপের বোনটি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকেন। চিকিৎসকরা সব আশা ছেড়ে দেন। বললেন, বাঁচানো সম্ভব নয়।

মৃত্যুর অপেক্ষার সময় একদিন অসুস্থ বোনকে নিয়ে তাঁরা যান আবদুল কাদের জিলানি নামে একজন পীরের কাছে। তাঁর অসুস্থ বোনের রোগমুক্তির জন্য পীরের কাছে দোয়া চান। পীর বললেন, ওপরে যিনি আছেন তিনি রক্ষা করবেন। আবদুল কাদের জিলানি প্রার্থনা করলেন আল্লাহর দরবারে। ধীরে ধীরে সুস্থ হলেন বোনটি। পিতা ও বোনের অসুস্থতার সময় থেকেই এ সমাজের প্রতি বিরক্তি ছিল দিলীপের। কারণ সবাই তাঁদের অবহেলা করেছেন। তাই বোনের সুস্থতার পর সিদ্ধান্ত নিলেন এ পীরের কাছেই তিনি ইসলামের দীক্ষা নেবেন। ধর্ম বদল করলেন। নাম পরিবর্তন হলো। পীর বললেন, নতুন নামের অর্থ খ্যাতিমান। বিশ্বখ্যাতি আসবে তাঁর। তাই-ই হলো। সুরকার নওশাদ আলীর সংস্পর্শে বদলে গেল এ আর রহমানের জীবন। অস্কার জয় করলেন তিনি। শুধু এ উপমহাদেশ নয়, বিশ্বে আজ খ্যাতিমান নাম। সুর সংগীত আর প্রার্থনাকে তিনি এক করেছেন। ‘কুন ফাইয়াকুন’। ‘হয়, হয়ে যায়’।

সেদিন হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমকে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি তিনি। একাত্তরের এই বীর যোদ্ধা অনেক কিছু নিয়ে কথা বললেন। শেয়ার করলেন চলার পথের নানা সুখ-দুঃখ। বললেন, একবার ওবায়দুল কাদেরের ফোনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন করোনার আগে। অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ সালে নিয়াজির আত্মসমর্পণ ডায়াসের পাশে। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি উপস্থিত ছিলেন সেদিনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ভারতীয় বাহিনী তাঁর অধীনস্থ মুক্ত এলাকায় প্যারাসুটে নেমে তাঁকে নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। স্মৃতিচারণা করতে করতে বললেন, ভালো লেগেছিল ৭ মার্চের অনুষ্ঠানে যেতে পেরে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তাঁকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন দাদা ফিরে আসুন। হাসপাতালের বেডে বসে কাদের সিদ্দিকী বললেন, দেশ এগিয়ে চলেছে আবার অনেক সমালোচনাও আছে সত্য। তার পরও শেখ হাসিনা না থাকলে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ থাকে না। আর বঙ্গবন্ধু না থাকলে আমি থাকি না। দেশ থাকে না। সর্বশেষ বললেন, আর্থিক সংকটে থাকলেও হাজারো মানুষ এখনো সাহায্যের জন্য ছুটে আসে। কাউকে ফেরাতে পারি না নিজের কাছে কিছু না থাকলেও। টেলিফোন করে কোনো অনুরোধ করলে মানুষ এখনো সম্মান দেয়, এটাই ভালো লাগে। সর্বশেষ বললেন, মওলানা ভাসানীর মেয়ে তাঁকে ফোন করেছেন। জানিয়েছেন তাঁর সন্তানকে মেডিকেলে ভর্তি খরচ নিয়ে বিপাকে আছেন। বঙ্গবীর বললেন, যারা দেশটা গড়েছেন, লড়েছেন তাঁদের জন্য বছরে একটা বাজেট কি রাষ্ট্র রাখতে পারে না? দেশ তো অনেক দূর এসেছে ৫০ বছরে। তার পরও কেন এমন অবস্থা? বললেন, সুস্থ হয়ে এ নিয়ে তোমার কাগজে লিখব একদিন বিস্তারিত। জবাবে বললাম, প্রার্থনা করছি আল্লাহর কাছে- আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে লিখুন। সেই লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর