শনিবার, ২১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সুরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

সুরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

আল কোরআন ১১৪টি সুরা নিয়ে পরিপূর্ণ আল্লাহর কিতাব। তার মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী সুরা ফাতিহা। এ সুরার প্রথম চারটি আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের প্রশংসা এবং শেষ তিন আয়াতে বান্দার প্রার্থনার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কোরআন বা কোরআনের জননী হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটি এত মর্যাদাপূর্ণ সুরা, যে সুরার মাধ্যমে আল কোরআন শুরু করা হয়েছে। একে সংক্ষেপে আল কোরআনের সারসংক্ষেপও বলা হয়। এ সুরার বিশেষ মর্যাদা হলো আল্লাহ রব্বুল আলামিন একে নিজের ও তাঁর বান্দাদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, সব প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর, দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে তিনি দয়াময় দয়ালু, তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি কর্মফল দিবসের মালিক। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সুরা ফাতিহা পড়। কোনো বান্দা যখন বলে আলহামদুলিল্লাহ হি রব্বিল আলামিন; তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বান্দা বলে, আর রহমানির রহিম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণাবলির প্রশংসা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদার প্রশংসা করেছে। বান্দা যখন বলে ইয়্যাকানাবুদু ওয়া ইয়্যাকানাসতাইন। আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে কথোপকথন। অর্থাৎ আমার বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে যা সে চায় (মুসলিম)। এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সাতটি বারবার পাঠ করার জন্য আয়াত কোরআনে আজিম প্রদান করেছি’ (সুরা আল হিজর, আয়াত ৮৭)। ‘সুরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ অসম্পূর্ণ।’ (মিশকাত) সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করা সহজ নয়। সেজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘উম্মুল কোরআন’ বা কোরআনের জননী। এটি কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সুরা। চার আসমানি কিতাবের মধ্যে কোনো কিতাবে এ সুরার তুলনীয় কোনো সুরা নেই। (বুখারি, মিশকাত) সুরা ফাতিহা ও বাকারার শেষ তিনটি আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নুর; যা এর আগে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (মুসলিম) যে ব্যক্তি সুরা ফাতিহা পাঠ না করে সালাত আদায় করল, তার সালাত অসম্পূর্ণ থেকে গেল। রসুল (সা.) এ কথাটি তিনবার বললেন (মিশকাত) তিনি বিচার দিনের মালিক। এ বিচারের দিনটি কী? তা কীসে আপনাকে জানাবে? আবার আপনাকে জিজ্ঞাসা করি, কীসে আপনাকে জানাবে বিচারের দিনটি কী? তা এমন একটি দিন, যেদিন কেউই নিজের রক্ষার জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না। এবং সমগ্র ব্যাপার নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত হবে। (সুরা আল ইনফিতার, আয়াত ১৭-১৯)। মোট কথা আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, তিনি কেবল রব্বুল আলামিন, আর রহমান, আর রহিমই নন তিনি মালিকি ইয়াওমিদ্দিন। আর সিরাতুম মুস্তাকিম হচ্ছে এমন পথ যা সোজা প্রশস্ত ও সুগম। তাই আল্লাহর দাসত্ব কবুল করে তাঁরই বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করাই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকিম। এ পথে চলার ফলেই মানুষ জীবনের প্রকৃত ও চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করতে পারবে। আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত লোকদের চলার পথ ও অনুসৃত জীবনই হলো বিশ্বমানবতার জন্য একমাত্র পথ ও পন্থা। কোনো মুসলমান যখন এ সুরাটি পাঠ করে তখন সে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং তাঁর রচিত জীবনধারা ও বিধানকে স্বীকার করে জীবন পরিচালিত করার সংকল্পে উপনীত হয় এবং মুক্তির পথ হিসেবে স্বীকার করে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে সুরা ফাতিহার মর্যাদা, বিষয়বস্তু, ভাব ভাষা অন্য সুরার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এর গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সুরা ফাতিহা বেশি বেশি করে পড়া এবং সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

সর্বশেষ খবর