তুরস্কের জঙ্গি রাজবংশের শেষ শাসক, বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা নুরুদ্দিন আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে ইমাদউদ্দিন জঙ্গি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জেনগি রাজবংশীয় শাসক। ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের সিরিয়া প্রদেশ শাসন করেছেন। তাঁকে দ্বিতীয় ক্রুসেডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য, নুরুদ্দিনের বাবা সিরিয়ায় ক্রুসেডারদের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন এবং ক্রুসেডারদের হাতে তিনি নিহত হন। নুরুদ্দিন ক্রুসেডারদের ঘাঁটি প্রিন্সিপালিটি অব অ্যান্টিয়ক আক্রমণ এবং সিরিয়ায় বেশকিছু ঘাঁটি দখল করেন। অচিরেই মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে উত্তর ইরাকের প্রতিবেশীদের সঙ্গে মৈত্রীতে আবদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের সপ্তম লুই ও জার্মানির তৃতীয় কনরাডের ক্রুসেড বাহিনীকেও তিনি ব্যর্থ করে দেন। তাঁর নেতৃত্বে ব্যাটল অব ইনায়ে মুসলিম বাহিনী ক্রুসেডারদের নাস্তানাবুদ করে দেয়। ১১৫০ সালে তিনি দ্বিতীয় জসেলিনকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। ফোরাত ও নীল নদের মধ্যবর্তী সব মুসলমানকে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ করে রাখার নিরন্তর প্রয়াস ছিল নুরুদ্দিনের। মিসর জয়ের পর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এক করা ও বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরায় মুসলমানদের হস্তগত করা-ই নুরুদ্দিনের স্বপ্ন ছিল যা অর্জনের জন্য সারা জীবন তিনি জিহাদ করে গেছেন। পরে তাঁর এ স্বপ্ন প্রিয় সাগরেদ সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি সমাপন করেছিলেন। ক্রুসেডাররা সম্মুখসমরে তাঁকে হটাতে না পেরে গোপনে তাঁর খাদ্যে বিষাক্ত স্লো-পয়জন প্রয়োগ করে যাতে তিনি অসুস্থ হয়ে শাহাদাতবরন করেন। তিনিই ছিলেন জেরুজালেম বিজেতা ও ক্রুসেডদের দাম্ভিক মস্তিষ্ক চূর্ণকারী সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির অভিভাবক, তিনিই আইয়ুবিকে জিহাদের ময়দানে এনেছেন। গাজি সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়বির আমলে নৌপথে মক্কা ও মদিনায় হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করেছিল খ্রিস্টানরা (যা ছিল ঐতিহাসিক ‘হিত্তিন’ যুদ্ধের নেপথ্য কাহিনি)। নৌপথে তারা মুসলমানদের চলাচল বিপজ্জনক করে তোলে, অনেককে বন্দি করে, হাজিদের কাফেলা লুট করে, অনেককে হত্যা করে। খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের এ আগ্রাসী তৎপরতার বিবরণও ইতিহাসে রয়েছে। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন।
জাফর খান।