রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

চা শ্রমিকের আন্দোলন

মানবিক মজুরি নিশ্চিত করুন

বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের বর্তমান দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা, যা ৩০০ টাকায় উন্নীত করার জন্য বহুদিন থেকেই তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা মালিকপক্ষের কাছে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে ১ আগস্ট একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া না মেলায় ৮ আগস্ট থেকে তাঁরা প্রতিদিন ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন। ১৪ আগস্ট থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করছেন। চা শ্রমিকদের এ যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে চা বাগান মালিকদের এত গড়িমসি কেন? ১৩ বছরের ব্যবধানে দেশে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে বেড়েছে ১২৬ টাকা। প্রতি হালি ডিমে বেড়েছে ২৮-৩০ টাকা। সেখানে ১৩ বছরে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বেড়েছে মাত্র ৭২ টাকা। চা পাতার বোঝা কাঁধে সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেও জেলখানার একজন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির চেয়েও কম খাবার খান চা শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। একজন ‘এ’ ক্যাটাগরির চা শ্রমিক প্রতিদিন ২৩ কেজি চা পাতা তুলতে পারলে তাঁর সর্বোচ্চ মজুরি ১২০ টাকা। এ সামান্য অর্থ দিয়ে বর্তমান বাজারে কোনোভাবেই জীবিকা নির্বাহ সম্ভব নয়। মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের জন্য মজুরির যে অর্থ নির্ধারণ করে আসছে, সে ক্ষেত্রে বরাবরই সবচেয়ে নিচে থেকেছে চা শ্রমিকদের মজুরি। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় চা শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি যথাক্রমে ২৮০ ও ৬২০ টাকা। আমাদের চা বাগানগুলোয় ঔপনিবেশিক আমলের দাসপ্রথা বিদ্যমান। ফলে এখানে বংশপরম্পরায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত হওয়াটাই স্বাভাবিকতা পেয়েছে। বাগান শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চনার ব্যবস্থাপনা এ পরম্পরাকে টিকিয়ে রেখেছে। এখানকার শ্রমিক ও তাঁর পরিবার-পরিজন প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা সভ্যসমাজে কাম্য হতে পারে না। চা বাগান শ্রমিকদের জীবনযাপন উপযোগী মানবিক মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর