গ্যাস ও বিদ্যুৎ ঘাটতি দেশের উৎপাদনব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে তুলছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, সিরামিক, সিমেন্ট, ইস্পাত, সার ও ইলেকট্রনিক্স নির্মাতারা সংকট মোকাবিলায় বিপাকে পড়েছেন। গ্যাস ঘাটতি ও লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনও কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্প খাত গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। ২০২০ সালে করোনা মহামারির আঘাতে বিপন্ন হয়ে পড়েছিল দেশের শিল্প খাত। সে সময় বিপর্যস্ত অর্থনীতি টেনে তুলতে সরকার নানাভাবে সহায়তা দিলেও অনেক শিল্পোদ্যোক্তাই ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। করোনার আঘাত কেটে ওঠার আগেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ছে হুহু করে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও জ্বালানিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়েছে। সংকট সামলাতে সরকার কিছু কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিং ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে শিল্পের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে শিল্পকারখানা চালু রাখাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত। এতে শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে শিল্প মালিকদের অনেকেই বাধ্য হবেন কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত নিতে; যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ব্যর্থ হবেন। এ বিপজ্জনক অবস্থার অবসানে যেভাবেই হোক কলকারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদনব্যবস্থা সচল রাখা শুধু নয়, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের স্বার্থে সঠিক ও ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই।