শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অন্যকে তুচ্ছ মনে করাই অহংকার

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

অন্যকে তুচ্ছ মনে করাই অহংকার

সৃষ্টিজগতে সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। সবকিছুই তাঁর হাতে গড়া। এ দিক থেকে সব সৃষ্টিই সমান। অর্থবিত্ত, জ্ঞান-গরিমা ও দামি পোশাকের কারণে কেউ বড় হয় না। কেউ যদি নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় বা শ্রেষ্ঠ মনে করে তাহলে সে আসলে আল্লাহর দেওয়া সমতাকেই অস্বীকার করল। অন্যকে তুচ্ছ মনে করা হাদিসের পরিভাষায় অহংকার। ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, ‘অহংকার শিরকের চেয়ে নিকৃষ্ট গুনাহ। কেননা অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের বিরুদ্ধে অহংকার করে। আর মুশরিক আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাঁর সঙ্গে অন্যকেও শরিক করে।’ (মাদারেজুস সালেকিন, দ্বিতীয় খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা) অহংকারের কারণে মানুষ শুধু অন্যকেই নয় বরং আল্লাহর আয়াতকেও অস্বীকার করে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের আয়াতগুলো মিথ্যা বলে ও তা থেকে অহংকার ভরে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সুচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৪০) অহংকার এত বড় পাপ যে এর কারণে বান্দার নসিব থেকে জান্নাত উঠে যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার মনে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। একজন সাহাবি প্রশ্ন করল, ইয়া রসুলল্লাহ! মানুষ তো চায় তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, তার মানে কি এসব কাজও অহংকার হিসেবে গণ্য হবে? জবাবে হুজুর (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। কারও জামা বা জুতা সুন্দর হওয়ার ইচ্ছার নাম অহংকার নয়। অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সঙ্গে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।’ (মুসলিম, মিশকাত) অহংকারীদের পরিণতি সম্পর্কে অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘অহংকারীর দল কেয়ামতের দিন উঠবে পিঁপড়ার মতো ক্ষুদ্র হয়ে। চার দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদের ঘিরে রাখবে। বিচার শেষে তাদের বুলাস নামক জাহান্নামের কারাগারের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যেখানে লেলিহান আগুন তাদের ঢেকে ফেলবে। সেখানে তাদের জাহান্নামিদের গলিত পুঁজ-রক্ত পান করানো হবে।’ (তিরমিজি) আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি অহংকারবশে মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং মাটির ওপর দম্ভ নিয়ে চলাফেরা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা লোকমান, আয়াত ১৮) তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার প্রদর্শন করে তারা দ্রুত জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’ (সুরা মোমিন, আয়াত ৬০) এ আয়াতের তাফসিরে ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘আল্লাহর ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থ হলো তাঁর সাহায্য প্রার্থনা না করা। আবু দাউদের ১৪৭৯ নম্বর হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, “আদদুয়াউ হুয়াল ইবাদাত। অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাই ইবাদত।” সুতরাং আল্লাহর ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার মানেও তাই। এসব লোক আল্লাহর কাছে দোয়া করার বদলে নিজেদের অনুসরণীয় ব্যক্তিদের মূর্তির কাছে গিয়ে দোয়া করে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর