ডেঙ্গুর আগ্রাসন বেড়েই চলেছে এবং এডিস মশা নামের ক্ষুদ্র কীটের কাছে এখন শুধু রাজধানীবাসী নয়, দেশের আরও অনেক জনপদের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। বলা হয়, মশার অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা ঐশ্বরিকভাবেই প্রাপ্ত। রাজা নমরুদের দম্ভ চূর্ণ করতে নাকি পৃথিবীতে মশার আগমন। আর মশার হাতেই দাম্ভিক রাজার কুপোকাত। আমাদের দেশেও মশা নামের ক্ষুদ্র কীটটি সেই পাকিস্তান আমল থেকে সাড়ে সাত দশক ধরে দৌরাত্ম্য দেখিয়ে চলেছে। পাকিস্তান আমলে ঢাকায় মশার উপদ্রব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী শুধু নয়, ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছিল। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ হানিফের মেয়র পদে জয়ী হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে মশা ইস্যু। শত চেষ্টা করেও ঢাকার প্রথম মেয়র রাজধানীবাসীকে স্বস্তি দিতে পারেননি। কালের বিবর্তনে রাজধানীসহ দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে আগ্রাসন চালাচ্ছে আফ্রিকা থেকে আসা এডিস মশা। প্রাণঘাতী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জনের মৃত্যুই হয়েছে চলতি মাসের ২০ দিনে। ৪ হাজার ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২৪৩ জনের দেহে। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ৫.৮২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে করোনার সংক্রমণ হার, রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু কমেছে। আগের দিন ৩০০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। শনাক্তের হার ছিল ৭.১৮ শতাংশ। মারা গেছেন দুজন। করোনা রোগী শনাক্ত কমলেও বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ১৯ অক্টোবর এক দিনে ৮৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তির খবর এসেছিল। ২০ অক্টোবর ভর্তি হয়েছেন ৮৯৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৮ হাজার ৬৯৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৫ হাজার ৪১৪ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ১৭৪ জন। গত এক দিনে ভর্তি রোগীর মধ্যে ৫৩৭ জন ঢাকায় ও ৩৫৯ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে। ডেঙ্গু জনস্বাস্থ্যের জন্য সাক্ষাৎ হুমকি হয়ে উঠেছে। এ হুমকি মোকাবিলার একমাত্র উপায় মশা নিধন। সে বিষয়ে দুই সিটির কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। অতএব, কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে তারা জেগে উঠবেন- আমরা এমন আশাই করতে চাই।