মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

উত্তরাঞ্চলের নদনদী

অস্তিত্ব হারানো উদ্বেগজনক

দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ৩ শতাধিক নদনদী। উত্তরাঞ্চলে পানির অভাবে গভীর সংকটও দেখা দিয়েছে ইতোমধ্যে। নদনদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ায় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে দেড় হাজার কিলোমিটার হারিয়ে যাওয়া জলপথ এখন ইতিহাসের অংশ। উজানে ভারতের একতরফা নদীশাসনের পরিণতিতে উত্তরাঞ্চলের নদনদীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। গত ৫০ বছরে ছোট-বড় ৩ শতাধিক নদনদী অস্তিত্ব হারিয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, প্রাণী, উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়েছে। নদীতে পানি না থাকায় জমিতে সেচ বাবদ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার বেশি। কমে গেছে গাছপালা। রংপুর  মহানগর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার ১০টির মধ্যে সাতটি ইউনিয়নই তিস্তা নদী বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে তিস্তায় থাকে হাঁটুজল। ডালিয়া থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা-জুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। বগুড়ার প্রমত্তা করতোয়া এখন ক্ষীণ। গাইবান্ধার ঘাঘট, কুড়িগ্রামের ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদী শুকনো মৌসুমে হেঁটে পার হওয়া যায়। একসময়ের পদ্মা নদীরও একই অবস্থা। এখন  নদীতে দুই চোখ যেদিকে যায় শুধু বালি আর বালি।  উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় একসময় ৪ শতাধিক নদনদীর অস্তিত্ব ছিল। নদনদীর তীরে গেলে শোনা যেত নৌকার মাঝিদের কণ্ঠের ভাটিয়ালি, মারফতি, মুর্শিদি গান। সে দৃশ্য এখন অতীতের ব্যাপার। উত্তরের তিন-চতুর্থাংশ নদনদীই হয় বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তির পথে। দেড় হাজার কিলোমিটারের নৌপথ ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে স্থায়ীভাবে। যেসব এলাকায় নৌপথই ছিল চলাচলের একমাত্র মাধ্যম সেখানে এখন স্থলপথই ভরসা। উত্তরাঞ্চল থেকে একের পর এক নদনদী বিলুপ্ত হয়ে পড়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যও হুমকির সম্মুখীন। ইচ্ছা করলেই হারিয়ে যাওয়া নদনদীগুলো উদ্ধার করা হয়তো যাবে না। তবে যেসব নদনদী টিকে আছে সেগুলো রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই। এজন্য নদনদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে। তিস্তানদীর প্রতিশ্রুত চুক্তিতে ভারত যাতে আবদ্ধ হয় সেজন্য রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর