বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা

মাজহারুল ইসলাম

উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগোচ্ছে। আইএমএফের মতে, বর্তমানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। ২০৩০ সালে হবে ২৫তম। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ ২১তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে। মালয়েশিয়া এখন এ দেশের লাখ লাখ মানুষের কাছে স্বপ্নের দেশ, তারাও এখন বাংলাদেশের পেছনে থাকবে। এটি কোনো কল্পকথা, সরকার কিংবা সরকারি দলের ভাষ্য নয়, পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস। দেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। নতুন বন্দর তৈরি হয়েছে পায়রায়। চট্টগ্রামের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। সমুদ্রবন্দরটি চালু হলে ট্রানজিট ভোগান্তি ছাড়াই ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবহন ব্যয় কমবে ৩০ শতাংশ। সাশ্রয় হবে সময়েরও। আগামী ছয় মাসের মধ্যে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। এ বন্দরটি চালু হলে ১৬ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে। ট্রানজিট ভোগান্তি ছাড়াই বিভিন্ন বন্দরে সরাসরি পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবহন ব্যয় ও সময় দুটোই সাশ্রয় হবে। এ বন্দর চালু হলে আমদানি-রপ্তানির জন্য সিঙ্গাপুর, কলম্বো কিংবা কেলাং বন্দর ব্যবহার করতে হবে না ব্যবসায়ীদের।  বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতিতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।

উন্নয়নের জন্য পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আর স্থিতিশীলতা একান্ত জরুরি। একই সঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও থাকতে হবে। কেননা, এক দেশের অশান্তি অন্য দেশকে আক্রান্ত করে। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ প্রতিবেশী সম্পদশালী দেশ মিয়ানমার। শান্তিপূর্ণ পরিবেশের অভাবে গৃহযুদ্ধে ধুঁকছে তারা। এমনকি বাংলাদেশের জন্যও বিড়ম্বনা ডেকে এনেছে মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাত। সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বরাবরই সক্রিয় ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে অনুধাবন করতেন, উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে যে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে, তার সুফলও দেশবাসী পাচ্ছে হাতে হাতে। বিগত ১৪ বছরের ধারাবাহিক শাসনামলে দেশকে উন্নতির চরম শিখরের দিকে নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনার সরকার। এক সময় যা অকল্পনীয় ছিল এ দেশে, তা এখন পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের ঘরের দোরগোড়ায়। স্বাধীনতার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। বতর্মানে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। বর্তমান সরকার কর্তৃক দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মতো কর্মসূচি দারিদ্র্যবিমোচন এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পথে এগোচ্ছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি-জামায়াত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাত বছরের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে এবং সেই সময়কার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি সুপরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার অর্জনের পাশাপাশি নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদেরই শুধু নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ আঘাত সত্ত্বেও ২০২১ সালে তা ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যহারের ব্যাপক অগ্রগতি সূচিত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। বর্তমানে সেই দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে এবং অতিদরিদ্রের হার ১০.৫%। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব মতে, ২০১০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে।

                লেখক : প্রাবন্ধিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর