শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শাওয়ালে রমজানের রেশ ধরে রাখবেন যেভাবে

আবদুুল্লাহ আল মামুন আশরাফী

শাওয়ালে রমজানের রেশ ধরে রাখবেন যেভাবে

সময়ের পালাবর্তনে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিল রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসা ১৪৪৪ হিজরির পবিত্র রমজানুল মোবারক। রমজানের পবিত্র আমেজ আর স্নিগ্ধ আবেশ এখনো প্রত্যেক রোজাদারের মনন-মানসে বিরাজ করছে। এ পবিত্র স্নিগ্ধ আবেশময় মুহূর্তে একজন মুমিনের উচিত নিজের চেতনাকে শানিত করা। যাপিত জীবনের ছত্রে ছত্রে রমজানের পবিত্র রেশ ধরে রেখে নিজেকে সফলতার রৌদ্রময় প্রান্তরে অবিচল রাখা একজন সচেতন বুদ্ধিমান মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তো শাওয়াল মাসে এবং বছরজুড়ে রমজানের রেশ ধরে রাখতে পাঁচটি মৌলিক কাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার বিকল্প নেই। ১. রমজানের আমলগুলো নষ্ট না করা। রমজানজুড়ে একজন মুমিন প্রচুর পরিমাণে নেক আমল করে থাকেন। তো এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে সেই আমলগুলো নষ্ট না করা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য কর। আর তোমরা তোমাদের আমলগুলো নষ্ট করো না। (সুরা মুহাম্মদ-৩৩)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘আর তোমরা সেই নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতা শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে’। (সুরা নাহাল-৯২)।

আর আমল নষ্ট হওয়ার মৌলিক কারণগুলোর অন্যতম শিরক। ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই তোমাকে এবং তোমার পূর্বের নবীগণকে ওহির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তুমি যদি শিরক কর, তবে নির্ঘাত তোমার সব কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’। (সুরা জুমার-৬৫)। ২. শয়তানের ধোঁকার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। শয়তান মানুষকে সব সময় জাহান্নামের দিকে ডাকে। ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এ জন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়’। (সুরা ফাতির-৬)। শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় গমন করার ক্ষমতা রাখে।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত :

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাদের স্বামী উপস্থিত নেই সেসব মহিলার কাছে তোমরা যেও না। কেননা তোমাদের সবার মধ্যেই শাইতান (প্রবাহিত) রক্তের ন্যায় বিচরণ করে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি। তিনি বলেন : হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহতায়ালা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ। (জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ১১৭২)।

৩. নামাজ না ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করা।

রমজানে সাধারণত নামাজের প্রতি আমাদের যথেষ্ট অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়। এ আগ্রহ-উদ্দীপনা রমজানের পরও বজায় রাখতে হবে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হও। বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজ (আসর)। আর আল্লাহর ইবাদতে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে যাও। (সুরা বাকারা-২৩৮)। কেয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাবনিকাশ নেওয়া হবে। যদি সালাত পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায় তবে তা পরিপূর্ণ লেখা হবে। যদি কিছু কম পাওয়া যায় তাহলে আল্লাহ বলবেন, তার নফল সালাত কিছু আছে কি না? (যদি থাকে) এগুলোর দ্বারা ফরজ সালাতের ক্ষতিপূরণ করে দেওয়া হবে। তারপর অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রেও এরূপ করা হবে’। (সুনানে নাসায়ী, হাদিস নম্বর ৪৬৬)।

৪. কোরআন তিলাওয়াত পরিত্যাগ না করে অব্যাহত রাখা। রমজানজুড়ে আমরা প্রচুর পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করে থাকি। রমজানের পরে এ পবিত্র অভ্যাস পরিত্যাগ না করে সাধ্যানুযায়ী তিলাওয়াত অব্যাহত রাখা উচিত। কোরআন পরিত্যাগ করা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক একটি কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কোরআন পরিত্যাগ করা নিয়ে যারপরনাই আক্ষেপ করতেন। পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর রসুল বলেন, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কোরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’। (সুরা ফুরকান-৩০)। কোরআন চর্চা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দের।

আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান রব্বুল ইজ্জাত বলেন, কোরআন (চর্চার ব্যস্ততা) ও আমার জিকির যাকে আমার কাছে কিছু আবেদন করা হতে নিবৃত্ত রেখেছে আমি তাকে আমার কাছে যারা চায় তাদের চেয়ে অনেক উত্তম বকশিশ দেব। সব কালামের ওপর আল্লাহতায়ালার কালামের গৌরব এত বেশি যত বেশি আল্লাহতায়ালার সম্মান তাঁর সব সৃষ্টির ওপর। (জামে তিরমিজি- ২৯২৬)।

৫. শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা

রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা। এ রোজাগুলো প্রচুর সওয়াব ও ফজিলত বয়ে আনে। আবু আইয়ূব আল আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : রমজান মাসের সিয়াম পালন করে শাওয়াল মাসে ছয় দিন সিয়াম পালন করা সারা বছর সওম পালন করার মতো। (সহিহ মুসলিম-১১৬৪)। তাই আসুন উপরোক্ত আমলগুলো সম্পাদন করে যাপিত জীবনে রমজানের পবিত্র রেশ ধরে রাখি। ভোরের স্নিগ্ধ আলোর ন্যায় জীবনকে আলোকিত করি।

লেখক : খতিব- আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর