বাংলাদেশের সিলেট এলাকায় বসবাস জয়ন্তিয়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। পুরুষরা বাঙালির মতোই তাদের পোশাক পরিধান করে। অবশ্য মহিলাদের আলাদা ঐতিহ্যবাহী পোশাক রয়েছে। হাজং ও কোচ মহিলাদের মতো তারা উজ্জ্বল বর্ণে চিত্রিত এক প্রস্থ কাপড় বুকের ওপর পেঁচিয়ে পরে। তবে জয়ন্তিয়া মহিলারা আরেক প্রস্থ কাপড়ের সাহায্যে কাঁধের এক পাশে গিঁট দিয়ে ওড়নার মতো ব্যবহার করে; যা খাসি মহিলারাও করে থাকে। অবশ্য অধিকাংশ জয়ন্তিয়া মহিলা বর্তমানে শাড়ি- জামা পরতেই অভ্যস্ত। কিন্তু ঘরোয়া পরিবেশে তারা তাদের নিজস্ব পোশাক পরিধান করতেই বেশি পছন্দ করে। সোনা ও রুপার তৈরি গহনা জয়ন্তিয়া মহিলারা পছন্দ করে। জয়ন্তিয়ারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যসচেতন।
জয়ন্তিয়া সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারে মায়েরাই প্রধান। পরিবারের ছেলেমেয়েরা মায়ের পদবি ধারণ করে এবং মেয়েরাই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। জয়ন্তিয়ারা ধর্মবিশ্বাসে সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী হলেও তাদের মধ্যে হিন্দুধর্মের প্রভাব স্পষ্ট। প্রধান উপাস্য জয়ন্তী দেবী, যিনি দেবী দুর্গার ভিন্নরূপ। হিন্দু দেবদেবীর পাশাপাশি তারা তাদের আদিধর্মের দেবদেবীকেও বেশ গুরুত্বসহকারে পূজা-আরাধনা করে। তাদের নির্দিষ্ট কোনো উপাসনালয় নেই। তারা প্রকৃতির মাঝেই তাদের আপন আপন দেবদেবীকে খুঁজে পায় এবং প্রকৃতির উন্মুক্ত কোলেই সেসব দেবদেবীকে পূজা-আরাধনা করে। তাদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর একজনই আছেন এবং তিনি অনাদিকালব্যাপী ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকালব্যাপী থাকবেন। আদিতে ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির সরাসরি যোগাযোগ ছিল। কিন্তু কালক্রমে মানুষ যখন স্বার্থপর হয়ে উঠল ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও ক্রমান্বয়ে ছিন্ন হতে থাকল। শেষ পর্যন্ত মানুষ ঈশ্বরকে চর্মচক্ষু দিয়ে আর দেখতে পেল না এবং এভাবেই মানুষ ঘোর সংসারী হয়ে উঠল আর ঈশ্বরচিন্তা থেকে ক্রমে দূরে সরে গেল। ফলে ঈশ্বর মানুষকে সঠিক পথে, নীতির পথে রাখার জন্য কিছু কিছু নীতিবাক্য শোনালেন আর অবাধ্য মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছুসংখ্যক অনিষ্টকারী দেবদেবীরও সৃষ্টি করলেন, যাদের মূল কাজই হলো রোগশোক, জরাব্যাধি প্রদানের মাধ্যমে মানবজাতিকে শায়েস্তা করা এবং এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা। জয়ন্তিয়ারা নিয়ম করে সেসব দেবদেবীর ক্রোধ প্রশমনের লক্ষ্যে তাদের পূজা-আরাধনা শুরু করল। পাপপুণ্য, স্বর্গ-নরক, শাস্তি-পুরস্কার প্রভৃতি সম্পর্কে জয়ন্তিয়া সমাজের একটা স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে।