আজ আবার এক নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস সৃষ্টি করছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুতে রেল উদ্বোধনের সরকারি চিঠি পেয়েছি। যদিও দেশে এখন তেমন আদবকায়দা নেই, সরকারি রাষ্ট্রাচার বলতে কিছু নেই। চিঠি পাব, চিঠিতে আসন লেখা থাকবে। কিন্তু গিয়ে আসন পাওয়া যাবে না। কেউ যদি ভালোবেসে সম্মান দেখিয়ে বসতে দেন তাহলে বসা যাবে, না হলে নয়। বেশ কিছুদিন একে তো সর্দিকাশি, তার ওপর আবার প্রচন্ড ছোটাছুটি। ৬ তারিখ কুমিল্লার দেবিদ্বার, ৭ তারিখ টাঙ্গাইল, ৮-৯ তারিখ ময়মনসিংহ, ১০ তারিখ সকালে মাওয়া পদ্মা সেতুতে রেলের শুভযাত্রা। শুভকাজ সেজন্য কষ্ট হলেও যাব। এমন জাতীয় ঘটনায় শরিক হতে পারা এক পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। গত বছর পদ্মা সেতু উদ্বোধনেও গিয়েছিলাম। সেদিন বেশ ভালো লেগেছিল। তবে অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ক্যাবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ার করেছিলেন। খন্দকার আনোয়ার আমার এলাকার মানুষ। তাদের বাড়ির কাছে আমি ছেলেবেলায় লেখাপড়া করেছি। আনোয়ার আমার দুই ছোট বোন, দুই ছোট ভাইয়ের পরের জন বেল্লালের সঙ্গে লেখাপড়া করতেন। খন্দকার আনোয়ারের ভাই ক্রীড়া সাংবাদিক দিলু খন্দকারকে আমি সন্তানের মতো ভালোবাসি। সেই খন্দকার আনোয়ার পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেছিলেন। ইসলামী শিক্ষাদীক্ষায় তার অসাধারণ জ্ঞান। নারীদের নিয়ে তার এক বক্তৃতা শুনে আমি ভীষণ অভিভূত হয়েছি। এক প্রসূতির প্রতি খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর দায়িত্ব এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা সবাইকে স্পর্শ করবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনে তাকে দিয়ে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত না করালেও চলত। জাতীয় মসজিদের ইমাম রয়েছেন তাঁকে দিয়েই এসব করানো ভালো। জানি না, আজ আবার কী হবে। অনেকে আমাকে খুবই ভালোবাসেন। অনেকে ভাবেন, ভয়ভীতিহীনভাবে যখন যা বলার তা বলতে কখনো কৃপণতা করি না। দুনিয়ায় যা পাওয়ার অনেক পেয়েছি। পৃথিবীতে কত কোটি মানুষ কজন কতজনকে জানে চেনে? পরম দয়ালু আল্লাহ আমাকে কত দিয়েছেন। যতটা কষ্ট সহ্য করা যায়, সহ্য করে বেঁচে থাকা যায় তার বেশি কষ্ট কখনো দয়াময় আমাকে দেননি। ছেলেবেলায় মায়ের বুকের ধন ছিলাম, ভাই-বোনের ছায়া ছিলাম। এখন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, দেশের মানুষকে নিয়ে সত্যিই আনন্দে আছি। হ্যাঁ, কষ্ট হয় যখন দেখি মানুষ কষ্টে আছে। মানুষের কষ্টই আমার কষ্ট, মানুষের আনন্দই আমার আনন্দ। তবে যখন চোখে যা পড়ে হৃদয় থেকে উৎসারিত হয় তখন তা অবলীলায় বলার চেষ্টা করি। বলতে কখনো দ্বিধা করি না। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য এক মহাবিস্ময়, গর্বের বিষয়। তার ভিতর দিয়ে রেলসড়ক, সে আরও এক অভাবনীয় সাফল্যের নিদর্শন। কিন্তু এত বড় ৬৩ ফুট পাশ সেতুতে শুধু একটি রেললাইন কেন? আজ হয়তো কারও চোখে পড়বে না। কিন্তু আগামী ১০ বছর পর যখন এ লাইন দিয়ে হাজারো গাড়ি যাওয়া-আসার প্রয়োজন হবে তখন কী হবে? একটি গাড়ির সেতু পার হতে ৭-৮ মিনিট প্রয়োজন হয়। অন্য দিক থেকে আরেকটি গাড়ি একই লাইনে আসতে আরও ৭-৮ মিনিট লাগবে। তাতে ঘণ্টায় ৪-৫টি গাড়ির বেশি তো সেতু পারাপার হতে পারবে না। তাতে কী হবে? প্রয়োজন হবে হাজার-দুই হাজার গাড়ি পারাপার হওয়ার, সেখানে সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তো ১০০ গাড়ির বেশি পার করা যাবে না। এসব বলা কি অন্যায়? ছেলেবেলা থেকেই তো শুনে আসছি, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। তাহলে এখানে ভাবনা কোথায়? একা নেত্রী আমার বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই শুধু ভাববেন আর কারও ভাবার বা দেখার প্রয়োজন নেই? কেন যেন বড় বেশি অস্বস্তিতে আছি।
গত কয়েক মাস সরকার এবং সরকারি দলের তেমন কারও প্রশংসনীয় কথাবার্তা শুনিনি। মাননীয় সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব কী বলছেন? উনি খুব কি ভেবে বলছেন, ওয়াশিংটনে শেখ হাসিনা তলে তলে সব ঠিক করে ফেলেছেন? আসলে তলে তলে কোনো কাজ করা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য কি সম্মানজনক? করাটা কি তাঁর জন্য ঠিক? আর তিনি কি কখনো অন্ধকার পথে হাঁটাচলা করেন? বা করেছেন? মাননীয় মন্ত্রী, সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর প্রশংসা করছেন, নাকি অন্য কিছু ভালোভাবে বুঝতে পারছি না বলেই প্রশ্নগুলো করলাম।
গত শুক্রবার দেবিদ্বারের হোসেনপুর রাখাল চন্দ্র নাহার বাড়িতে গিয়েছিলাম। রাখাল চন্দ্র নাহা হিন্দু, আমি মুসলমান। রাখাল চন্দ্র নাহা দেবদেবী-ভগবানে বিশ্বাসী, আমি আল্লাহ-রসুলকে অন্তরাত্মা-হৃদয়ে লালন করি। রাখাল চন্দ্রও মানুষ, আমিও মানুষ। মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, সব সৃষ্টির মালিক আল্লাহ। তাই নাহাও আল্লাহর মালিকানার একজন। রাখালকে আমি চিনতাম না, জানতাম না। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমাদের এক সভা ছিল। সভার মধ্যেই কিছু মানুষ পাগলের মতো ছুটে এসেছিল। একেবারে গরিবদুঃখী পরিবার। কথা শুনে তাদের বাড়ি আসতে বলেছিলাম। ওরা ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের বাড়ি এসেছিল। কথাবার্তার চাইতে কান্নাকাটিই বেশি হয়েছিল। কিছু কাগজপত্র দেখে বলেছিলাম, তোমরা যাও আল্লাহর রহমতে নাহার ফাঁসি হবে না। রাত ৯টায় বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। পূর্বনির্ধারিত সময় ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করা যায় এটা আমার জানা ছিল না। জনাব ইয়াজউদ্দিন আহমেদ একজন শিক্ষক মানুষ। সেই ভরসাতেই গিয়েছিলাম। কেন যেন সবাই সহযোগিতা করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ পাইয়ে দিয়েছিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি নাহার কথা শুনে বলেছিলেন, ‘সিদ্দিকী সাহেব, দেশের প্রতি আপনার অবদান কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, ইতিহাস স্বীকার করবে। আপনাকে উপযুক্ত সম্মান করার মতো সম্মানবোধও যে আমাদের নেই। আপনি হয়তো মনে করেন, আমি সবকিছু করতে পারি। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারি না। আপনি যখন এসেছেন তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যান।’ পরদিন সকালে গিয়েছিলাম ফখরুদ্দীন আহমদের কাছে। তিনিও মহামান্য রাষ্ট্রপতির মতো একই কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘ভাই স্বাধীনতার সময় থেকে আপনার কথা কত শুনেছি, গর্বে বুক ভরে গেছে। আপনারা না হলে বাংলাদেশ হতো না। আমার কিছুই করার নেই। যা কিছু করার সবই ক্যান্টনমেন্টে।’ সেই তখনই ছুটে গিয়েছিলাম ক্যান্টনমেন্টে। ক্যান্টনমেন্টের প্রধান রাস্তা ছাড়া আমি ডানে বাঁয়ে চিনি না। ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ প্রথম গিয়েছিলাম ফরটিন ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে নিয়াজির গুহায়। তারপর একবার জেনারেল মাহবুব সেনাপ্রধান থাকতে তাঁর অনুরোধে সপরিবার গিয়েছিলাম। আর এই নাহার ফাঁসি রদে মইন উ আহমেদের কাছে। ভদ্রলোক আমার কথা শুনে বলেছিলেন, ‘আমরাও একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনহানি চাই না।’ ওইদিনই রাত ১১টার পর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা। রাত ১০টায় জানানো হয়েছিল ফাঁসি স্থগিত করা হয়েছে। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম, যাক শেষ পর্যন্ত একটা প্রাণ বেঁচে গেল। সে ঘটনায় নাহার সঙ্গে একটা সখ্য তৈরি হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যাঁকে আমি ভাইয়ের মতোই ভালোবাসি, স্নেহ করি। সেদিন যে নাহাকে কয়েকটি টাকা দিয়ে এসেছি, সেখানে কামালেরও ভূমিকা আছে। তিনিও নাহাকে দেওয়ার জন্য আমাকে সাহায্য করেছিলেন। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর হাত দিয়ে যখন প্যাকেটে লুকানো অর্থগুলো দেওয়া হয় তখন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেছিলেন, লিডার, কত টাকা? আমি বলিনি। তবে একসময় আমার বক্তব্যে বলেছিলাম, রাখাল চন্দ্র নাহাকে আমরা কত অর্থ দিলাম এটা শুনতে চেয়ে ভালো করেননি। ওর চাইতে কেউ আমাকে জুতো মারলেও আমার কাছে ভালো লাগত। কোনো কাজ আমি বা আমরা প্রচারের জন্য খুব একটা করি না। বিশেষ করে কাউকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। ওসব আল্লাহর.jpg)
রাখাল চন্দ্র নাহা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন জেল থাকার পরও সরকারি তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন। সেজন্যই বীরনিবাস পেতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি অনুরোধ করেছিলাম। আমার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বীরনিবাসটি দিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি নির্মাণ হবে তত তাড়াতাড়িই একটি আশ্রয় জুটবে। রাখাল চন্দ্র নাহাকে প্রথম কুমিল্লা জেলে দেখতে গিয়েছিলাম টাঙ্গাইলের অনেক চমচম নিয়ে। তখন মেজর হায়দার নামে একজন ডিআইজি প্রিজন ছিলেন। তিনি খুব যত্ন নিয়েছিলেন। তাঁর পর কুমিল্লা হাসপাতালে তখন শাজাহান আহমেদ নামে কুমিল্লার জেল সুপার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়ান-টুতে পড়তেন। দেলদুয়ারের লাউহাটির কাছে বাড়ি। তারপর ঢাকার কেরানীগঞ্জের জেলে দেখতে গিয়েছি। আমাদের ভাগনিজামাই মাহাবুব সেখানকার জেলার। নাসিম ওসমানের ভাগনি বিয়ে করেছেন। তারপর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে, ঢাকা জেলে নানা সময় নানাভাবে দেখাসাক্ষাৎ করেছি, খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি। হাই কোর্টে রিট করিয়েছিলাম। কামাল ভাইয়ের একজন কর্মী কাজটা করেছিলেন। পরে আর তিনি কিছু জানাননি। ১০ বারের কম হবে না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি। ভদ্রলোক ১০ বারই আইনমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠিয়েছেন। তাঁর এক কথা, কোনো আইনে একবারের বেশি রেয়াত করার সুযোগ নেই। জানি, আনিসুল হকের বাবা সিরাজুল হক যদি আইনমন্ত্রী থাকতেন তাহলে এক দিনে রাখাল চন্দ্র নাহাকে মুক্ত করে আনা কোনো কঠিন কাজ ছিল না। আমার বাবা মৌলভী মুহাম্মদ আবদুল আলী সিদ্দিকী প্রায় ৭০ বছর আইনজীবী ছিলেন। তাঁর কোলে বসেও আমরা কিছু শিখেছি। যাক ওসব বলে লাভ নেই। সরকার পারে না এমন কিছুই নেই। কত জাতীয় অনুষ্ঠান গেছে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইচ্ছা করলেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া যেত। দেয়নি, সেটা আইনমন্ত্রীর ব্যাপার। একজন ভালো আইনমন্ত্রী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু। বড় ভালো ছিলেন। তাঁর বকশীবাজারের বাড়ি কয়েকবার গিয়েছি। তাঁর স্ত্রীর আমার মতো গরু পালার অভ্যাস। অনেক বড় বাড়ি। তাতে অনেক গরু। কী হবে! আল্লাহর দয়ায় শেষ পর্যন্ত রাখাল চন্দ্র নাহা জুলাইয়ের ২ তারিখ মুক্তি পেয়ে বাড়ি গেছেন। ২৪ বছর জেলে থাকলে কারও সংসার থাকে? রাখাল চন্দ্র নাহারও সংসারের অবস্থা সে রকম। ভালো করে পেট পুরে খেতে পারেন না। মুক্তি পেয়ে আমার বাড়ি এসেছিলেন। সেদিনই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়েছিলাম, দয়াময় আল্লাহ আপনি কত মহান একজন মানুষকে মৃত্যু থেকে জীবন দিয়েছেন। তাই আমার স্ত্রীর খুবই আগ্রহ রাখালের বাড়ি যাবেন। তাঁকে কিছু সহযোগিতা করবেন। শাড়ি, মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলাম। কুমিল্লার রসমালাই, কিন্তু টাঙ্গাইলের চমচম জগদ্বিখ্যাত। ১৯৮০-’৮২ সালে দিল্লিতে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে টাঙ্গাইলের চমচম দিয়ে ১০৮ বা ১০৯ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে আপ্যায়ন করা হয়েছিল। সেই চমচম নিয়ে গিয়েছিলাম। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে সঙ্গী হতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রাজি হয়েছিলেন। হঠাৎই তিনি ৬ অক্টোবর (শুক্রবার) কালিহাতীর বীরবাসিন্দা ইউনিয়নে এক জমায়েতের কথা বলেছিলেন। তাই তাঁর তাড়া ছিল। তিনি তাঁর গুলশানের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সকাল ৭টায়। আমি সাড়ে ৭টায় মোহাম্মদপুরের বাবর রোড থেকে বেরিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে আবুল হোসেন এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার শরিক হয়েছিলেন। অন্যদিকে টাঙ্গাইল থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক আমার সঙ্গেই ছিলেন। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফেরদৌস আলম ও আবদুল্লাহ বীরপ্রতীক, সখিপুর থেকে সাবেক পৌর মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব এসেছিলেন। ছিলেন আরও অনেকেই। প্রচন্ড বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ছিল একেবারে ভাঙা। এক রাতের বৃষ্টিতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তার কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মেরামত না করলে কয়েক শ কোটি কয়েক হাজারে গিয়ে ঠেকবে। কুমিল্লার টিপড়াপাড়া থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাস্তায় দেবিদ্বার। রাস্তা মোটামুটি ভালোই ছিল। আমরা ৮-১০টি গাড়িতে ছিলাম। প্রায় ১৫ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট কর্মসূচি পালনের পথে রাখাল চন্দ্র নাহার বাড়ি গিয়েছিলাম। বাড়িটা আমার রাস্তার পাশেই মনে হয়েছিল। কিন্তু ৬ তারিখ তেমন মনে হলো না। মনে হলো বেশ দূরে চলে গেছে। এক-দেড় কিলোমিটার তো হবেই। তবু গিয়েছিলাম। কাদামাটিতে একাকার। শামিয়ানা টাঙিয়েছে, বাড়ির ভিতর ছোট্ট মঞ্চ করেছে। যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বৃষ্টি কখনো বাড়ছিল, কখনো কমছিল। তাই শামিয়ানার নিচে বসাও কঠিন ছিল। প্রথম ঘরে বসেছিলাম, তারপর মঞ্চে। লতিফ ভাইয়ের তাড়া। তাই প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ১১টায় তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনিও যথাসময়ে কালিহাতীর বীরবাসিন্দার কস্তুরীপাড়ায় এক জমায়েতে হাজির হয়েছিলেন। বিপুল লোক হয়েছিল সেখানে। নাহার বাড়িতে ছোট্ট একটি সভার মতো হয়েছিল। আমার যা তেমন পছন্দ ছিল না। এলাকার অনেকেই এসেছিলেন। তাঁর মধ্যে দুজন চেয়ারম্যান ছিলেন। অনেক সাংবাদিক ছিলেন। যাঁরা নাহার মুক্তির জন্য সত্যিই অনেক ভালো কাজ করেছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি আল্লাহ যেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহাকে তাঁর পরিবারসহ হেফাজত করেন। চলে আসার পথে দেবিদ্বার থানার ওসি দেখা করতে এসেছিলেন। আমরা বয়সী মানুষ। দেশ ভালো চললে ওসি অনেক আগেই আসতেন। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। যাক, এখন আর ওসব নিয়ে ভাবি না। আল্লাহ দেশ ও দেশবাসীকে হেফাজত করুন মনেপ্রাণে এটাই চাই।
বৃষ্টির কারণে রাস্তা খারাপ ছিল। টিপড়াপাড়ার রাস্তার পাশে মিয়ামীতে খেতে বসেছিলাম। যেহেতু অনেক গাড়ি সেহেতু অনেক লোকজন। খাবার আগের মতো ভালো ছিল না। আগে কুমিল্লার দিকে গেলে বেশ কয়েকবার সেখানে খেয়েছি। খুবই ভালো খাবার ছিল। তবে শুনলাম আগের ম্যানেজার নাকি নেই। ম্যানেজার রান্নাবান্না করেন না। কিন্তু তিনি না থাকায় খাবার পরিবেশন থেকে স্বাদ সবই অনেকটা ওলটপালট হয়েছে। ভালোভাবেই বাড়ি ফিরেছিলাম। ফেরার পথে তেমন খুব একটা যানজট ছিল না। ৭ তারিখ টাঙ্গাইল যাওয়ার আগে দৈনিক সমকালের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শরিক হয়েছিলাম। মজার কথা হলো, অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে বহুদিন পর অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হক ও বাসদের কমরেড খালেকুজ্জামানের সঙ্গে দেখা। খালেকুজ্জামানের অফিসেও গিয়েছি। সব সময়ই আমাকে সমাদর করেন, আমিও তাঁকে পছন্দ করি। শাহেদ চৌধুরী নামে সমকালের একজন সিটি এডিটর আমার খুবই প্রিয়। ওরা যখন বেশ ছোট তখন আমার খবর সংগ্রহ করতে এদিকওদিক যেত। ওর কথাতেই গিয়েছিলাম। চলে আসার পথে সমকালের প্রাণপুরুষ এ কে আজাদ ও শাহেদ চৌধুরী ছুটে এসে আটকে ধরেন। এর আগেও একবার অমনটা করেছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংবর্ধনা সভায়। আমরা তো কেউ মরে গেলে তারপর তা নিয়ে অনেক রকম কথা বলি। সেটা ছিল জাফরুল্লাহর জীবদ্দশাতেই। এ কে আজাদের সেদিনের বক্তৃতা আমার খুবই ভালো লেগেছিল। বিত্তবানদের চিত্ত হয় না, চিত্ত থাকে না। কিন্তু এ কে আজাদের কৃষ্টি-সভ্যতা-চিত্ত সবই আলোচনা করার মতো। সে আলোচনাও করেছি। ও রকম অনুষ্ঠানে অনেকটাই আমাদের গ্রামের হাটের মতো অবস্থায় কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। তবু চাপে পড়ে ঢেঁকি গেলার মতো সমকালের জন্মদিনে শুভকামনা জানিয়েছি। আল্লাহর কাছে পবিত্র মনে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন সমকালকে আরও অনেক বেশি জনপ্রিয় করেন, মানুষের পাশে দাঁড়াবার শক্তি দান করেন।
৮ তারিখে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। ৯ তারিখ ময়মনসিংহ টাউন হলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বৃহত্তর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি সভা ছিল। চমৎকার সে সভা হয়েছে। তার আগে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া একসময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। অভাবনীয় সুন্দর মানুষ। এ রকম ১০ জন মহিলা কর্মকর্তা থাকলে অনেক ভালো হতো। আমাদের একজন রাজনৈতিক নেতার মেয়ে। তাকে আমি সন্তানের মতোই ভালোবাসি অনুভব করি। আল্লাহ তাকে নিরাপদে রাখুন, স্বস্তিতে সমৃদ্ধিতে রাখুন। ময়মনসিংহ আমাদের শিকড়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছিল ব্রিটিশ ভারতের সব থেকে বড় জেলা। অন্তত আমি এখনো বৃহত্তর ময়মনসিংহের সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি। আগামী পর্বে ময়মনসিংহ নিয়ে লিখব। সম্প্রতি ময়মনসিংহের নেতা সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার আগে শামসু ভাই চলে গেছেন। নান্দাইলের রফিক উদ্দিন ভূইয়া ছিলেন এক দুর্দান্ত সংগঠক। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতি। আমাদের বিপ্লবী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, হাতেম আলী তালুকদার, ন্যাপের আলতাফ আলী আরও কত নেতা ময়মনসিংহের মানুষ। সাহিত্য ও সিনেমা জগতের প্রবাদপুরুষ সত্যজিৎ রায়, রবীন্দ্রসংগীতের জর্জ বিশ্বাস, দুর্গাপুরের কমিউনিস্ট নেতা মণি সিং, মহারাজা তৈলক্ষনাথ চক্রবর্তী এঁরা সবাই ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ। তাই এসব নিয়ে আগামী পর্বে অবশ্যই লিখব।
লেখক : রাজনীতিক
www.ksjleague.com