সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই দুনিয়ার শীর্ষ ধনী দেশগুলোর একটি। এক সময়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা ছিলেন নিতান্তই গরিব। তেল ও গ্যাসের কল্যাণে সে দুবাই এখন মরু প্রান্তরে গড়ে ওঠা একখণ্ড বেহেশত হয়ে উঠেছে কয়েক দশক ধরে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীদের অসৎ অংশের অর্থ পাচার এবং সম্পদ মজুদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ওই উপসাগরীয় মরুরাজ্যটি। তারা এখানে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসৎ রাজনীতিক, ব্যাংকের অর্থ লুটে নেওয়া ঋণখেলাপি এবং অসৎ আমলাদের হিস্সাও কম নয়। অতি সম্প্রতি একটি বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্প ‘দুবাই আনলকড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দুবাইয়ে থাকা বিশ্বের সম্পদশালীদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস করে দেয়। ফাঁস হওয়া তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র এ মরু শহরে বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য বিপুল সম্পদ গড়েছেন তারা। ব্যাংক লুট করে বিসমিল্লাহ গ্রুপের খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরীসহ অন্তত ২০ ঋণখেলাপির সম্পদ এখন দুবাইয়ে। তালিকায় আরও রয়েছে সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিক, অপরাধী এবং অর্থ পাচারকারীদের নাম। ওয়ান-ইলেভেনের প্রভাবশালী সাবেক সেনা কর্মকর্তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। তাদের রয়েছে বাড়ি, দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা। আমলাদের অনেকেই বিত্তের ঘাঁটি গড়েছেন দুবাইয়ে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক তালিকা অনুযায়ী আমিরাতে বাংলাদেশিদের নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে জুন দুবাই চেম্বার অব কমার্সে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সদস্যপদ নেওয়ার হার ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ নিয়েছে। দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের কোম্পানির মোট সংখ্যা এখন ১০ হাজার ৯৭৫টি। দুবাইয়ে যেসব বাংলাদেশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তাদের সিংহভাগ অবৈধ পথে অর্জন করেছেন তা বলার সুযোগ নেই। দেশবাসীর আপত্তি সম্পদ পাচারকারীদের নিয়ে। সে লুটেরাদের চিহ্নিত করে কীভাবে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে।