ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে সরকার পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আঘাত লাগে। দেখা দেয় নৈরাজ্য। বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘাত, লুটপাট চলে। প্রধান সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানানো হলেও কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। ব্যক্তি বা দলগত শত্রুতায় হামলা চালানো হয়েছে। জেল ভেঙে পালিয়েছে কয়েদিরা। ডাকাতদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লুটপাট হয়েছে বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। অপরাধী চক্র হঠাৎই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে যেন ‘মগের মুল্লুক’ কায়েম করতে চেয়েছে। আত্মরক্ষার তাগিদেই এদের প্রতিরোধে সক্রিয় হয়েছেন সাধারণ জনতা। লাঠিসোঁটা নিয়ে বেরিয়ে এসে দল বেঁধে, রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন নিজেদের এলাকা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যখন নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছিল, তাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে মন্দির-উপাসনালয় পাহারা দিয়েছেন ছাত্র-জনতা। যাদের মধ্যে মাদরাসার ছাত্ররাও আছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় হিন্দু মহাজোট নেতা গণমাধ্যমকে জানান, তারা ভালো আছেন, তাদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে- কারা হামলা-ভাঙচুর, লুটতরাজ, ডাকাতি নৈরাজ্য চালিয়ে ছাত্র-জনতার বিজয়কে ম্লান করতে চাচ্ছে? তাতে কাদের লাভ? এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। জাতির কঠিন ক্রান্তিকালে পুলিশ দায়িত্ব পালনে বিরত থাকায় তাদের অভাবটা পূরণ হয়নি। এ সুযোগটাই নিয়েছে অপরাধী চক্র এবং স্বার্থান্বেষী মহল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পুলিশের চেইন অব কমান্ড ঠিক করার নির্দেশ দিয়ে, তারা যেন সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সেনাপ্রধান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, যারা এসব অপরাধ করছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। জরুরি নির্দেশনা দিয়ে নতুন আইজিপি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে বলেছেন। ছাত্র-জনতা সজাগ, সেনা টহল জারি রয়েছে, পুলিশ দায়িত্বে সক্রিয় হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব দ্রুতই সুশৃঙ্খলায় ফিরে আসবে বলে আশা করছে সবাই। এটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।