পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহর সৃষ্টি। সব সৃষ্টির প্রতি দয়া করতে হবে। বিশেষভাবে যে কোনো প্রাণীর প্রতি দয়া করতে হবে। অনুগ্রহ করতে হবে। সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া করা মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা সেই বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন, যেই বান্দা সৃষ্টিজীবের প্রতি বেশি দয়াবান। প্রিয় নবী (সা.) সব সময় প্রাণীর প্রতি দয়া ও মেহেরবানির করতে সাহাবাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ মেহেরবান। তিনি মেহেরবানিকে পছন্দ করেন। মেহেরবানির জন্য তিনি যা দান করেন কঠোরতার জন্য তা দান করেন না। মেহেরবানি ব্যতীত অন্য কিছুতেই তা দান করেন না। -মুসলিম শরিফ। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহতায়ালা ওই বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন, যে বেশি মেহেরবান। বেশি দয়ালু। কাজেই আমাদের দয়ালু হতে হবে। মেহেরবান হতে হবে। অপর হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের ওই ব্যক্তির সংবাদ দেব না, যার ওপর দোজখের আগুন হারাম এবং যে ব্যক্তি দোজখের জন্য হারাম।
সে হলো ওই ব্যক্তি যে ভদ্্র, মিশুক এবং বিনম্র। -আবু দাউদ, তিরমিজি। অর্থাৎ ভদ্র ব্যক্তি, মিশুক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রিয়। নম্র ব্যক্তি এবং বিনয়ী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রিয়। আরও এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, অনুগ্রহকারীদের প্রতি পরম করুণাময় অনুগ্রহ করে থাকেন। তোমরা দুনিয়াবাসীর ওপর অনুগ্রহ কর, এতে আসমানে অবস্থানকারী তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করবেন। -আবু দাউদ, তিরমিজি।
পৃথিবীার সব মানুষ, এমনকি অন্যান্য জীবজন্তু মহান আল্লাহর সৃষ্টি। এরা আল্লাহর পরিবারের মতো। আমাদের পরিবারের কোনো সদস্যের প্রতি কেউ দয়া করলে আমরা যেমন খুশি হই, আনন্দিত হই, তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি খুশি হন মহান আল্লাহ যখন তাঁর কোনো বান্দা অপর বান্দাকে সাহায্য করে। দয়া করে। অনুগ্রহ করে। এমনকি অন্যান্য সৃষ্টিজীবের ওপর দয়া করার কারণে আল্লাহতায়ালা কঠিন গুনাহও মাফ করে দেন। এ বিষয়ে হাদিসে একটি ঘটনা এসেছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলছিল। তার খুব পিপাসা পেল। তারপর একটি কুয়া পেল। সে তাতে নেমে পানি পান করল। কুয়া থেকে বেরিয়ে দেখল, একটি কুকুর পিপাসায় বারবার জিভ বের করে কাদামাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বলল, পিপাসার কারণে আমার যে অবস্থা হয়েছিল কুকুরটিরও সেই অবস্থা হয়েছে। তারপর সে আবার কুয়ায় নেমে নিজের পা-মোজায় পানি ভরে ওপরে নিয়ে এলো এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল।
এর ফলে আল্লাহতায়ালা তাকে প্রতিদান হিসেবে মাফ করে দিলেন। সাহাবিরা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল, চতুষ্পদ প্রাণীর কারণেও কি আমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে? রসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর উপকারের মধ্যেই সওয়াব রয়েছে। -বোখারি ও মুসলিম। প্রিয় পাঠক! সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া করা যেমন সওয়াবের কাজ, তেমনি সৃষ্টিজীবকে কষ্ট দেওয়া গুনাহের কারণ।
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে যাবেন। কেননা সে তাকে বেঁধে রেখেছে আর কোনো খাবার দেয়নি। জমিনে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য তাকে সে ছেড়ে দেয়নি। -বোখারি ও মুসলিম। এ হাদিস থেকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি যে কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। চাই তা যত ছোট প্রাণী হোক না কেন। প্রাণী ও জীবজন্তুকে আটকে রাখা যাবে না। আমার আপনার মনে আনন্দদানের জন্য কোনো প্রাণীকে, মাছকে, পাখিকে বদ্ধ করা যাবে না। খাঁচায় আবদ্ধ করা যাবে না। পশুপাখিকে তাদের নিজের মতো করে ছেড়ে দিতে হবে। তারা তাদের ভুবনে বেঁচে থাকবে। তাদেরকে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বাধা দেওয়া অন্যায়।
আমরা পৃথিবীতে এসেছি খুবই সামান্য সময়ের জন্য। এই অল্প সময়ে আমরা যদি কারও উপকার করতে না-ও পারি তাহলে কমপক্ষে কারও ক্ষতি যেন না করি। কারও কষ্টের কারণ না হই। সবার উপকার করার চেষ্টা করব। সব মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলব। কারণ ভালো কথা বলার বিনিময়েও রয়েছে সওয়াব। এ বিষয়ে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, উওম কথাও সদকা। -বোখারি। অর্থাৎ সদকা করলে যেই সওয়াব, উত্তম কথা বললেও সেই সওয়াব। মহান আলাহ যেন আমাদের সেই তৌফিক দান করেন। আমিন।
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা