বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের যত হাসির রাজা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের যত হাসির রাজা

চলচ্চিত্র হচ্ছে বিনোদনের প্রধান মাধ্যম আর কৌতুক হচ্ছে চলচ্চিত্রের প্রাণরস। কৌতুক অভিনেতারা এ বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রের সূচনালগ্ন থেকে কৌতুক অভিনেতারা দর্শকদের বিনোদিত করেছেন সুঅভিনয় দিয়ে। বেশ কয়েকজন কৌতুক অভিনেতার কথা এখানে তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

খান জয়নুল

ষাটের দশকে ‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবির মাধ্যমে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে বড় পর্দায় আসেন খান জয়নুল। নাচের পুতুল সিনেমায় বাবুগিরি করে বেড়ানো নায়িকার ছোট ভাই, ছন্দ হারিয়ে গেল-তে সেই অর্থকষ্টে থাকা অথচ প্রফুল্ল বন্ধু, অবুঝ মন’-এর কম্পাউন্ডার ইত্যাদি চরিত্রগুলোতে লাফালাফি-ঝাপাঝাপি না করে শুধু ভ্রু আর মুখের ভাঁজের অনবদ্য অভিনয় দিয়ে প্রচণ্ড  হাস্যমুখর পরিবেশ তৈরি করতে পারার অসামান্য ক্ষমতা তার। বশীর হোসেন পরিচালিত ‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমার কাহিনিকার এবং সংলাপ রচয়িতা। ১৯৭৬ সালের ১৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান এ কৌতুক অভিনেতা।

 

আশীষ কুমার লৌহ

বিশিষ্ট নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, লেখক, অভিনেতা ও কৌতুক অভিনেতা আশীষ কুমার লৌহ। ১৯৫৫ সালে বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় ও কৌতুক প্রদর্শন করে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। এ সময় তিনি বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী হয়ে যান। শিল্পী হিসেবে তিনি বেতার ও টেলিভিশনে বিভিন্ন নাটকে অভিনয় এবং নাটক লেখা শুরু করেন। ষাটের দশকে টেলিভিশনে প্রথম ধারাবাহিক কৌতুক নাটক ‘হীরা-চুনি-পান্না’ নাটকে হীরার ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে দারুণ সাড়া জাগিয়েছিলেন। ষাটের দশকেই তিনি চলচ্চিত্র জগতে অভিনয় শুরু করেন।

 

সাইফুদ্দিন

কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন ঢাকার প্রথম সবাক বাংলা ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ (১৯৫৬)-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রে নিয়মিত ছিলেন। এ সময় তিনি প্রায় ৪০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে মুখ ও মুখোশ, চাওয়া-পাওয়া, আঁকাবাঁকা, ময়নামতি, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জল ছবি, মধু মিলন, বধূ বিদায়, আরাধনা, সুন্দরী, শহর থেকে দূরে, শেষ উত্তর, বড় ভালো লোক ছিল, চন্দ্রনাথ, দহন ও বেদের মেয়ে জোসনা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৯ সালে সুন্দরী ছবির জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

 

রবিউল

১৯৫৯ সালে ‘আকাশ আর মাটি’ ছবির মাধ্যমে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক প্রকৌশলী রবিউল আলমের। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা এ অভিনেতার অন্যতম গুণ ছিল তিনি কুলার মতো কান দুটোকে তালে তালে নাচাতে পারতেন। উল্লেখযোগ্য ছবি ছুটির ঘণ্টা (১৯৮০), গু-া (১৯৭৬), আলোর মিছিল (১৯৭৪), চৌধুরী বাড়ী (১৯৭২), নীল আকাশের নিচে (১৯৬৯), আকাশ আর মাটি (১৯৫৯) প্রভৃতি। ১৯৮৭ সালে মারা যান রবিউল।

 

আনিস

১৯৬০ সালে বিষকন্যা ছবিতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন আনিস। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আনিস অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহমান পরিচালিত ‘এই তো জীবন’। তার পর থেকে তিনি অভিনয় করেই গেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি অভিনয় করেছেন। নবাব সিরাজদ্দৌলা নাটকে গোলাম হোসেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি মঞ্চে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আড়াই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

 

টেলিসামাদ

টেলিসামাদ ১৯৬৬ সালে ‘কার বউ’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চারুকলা ও সংগীতেও রয়েছে এ গুণী অভিনেতার পারদর্শিতা। দিলদার আলী ও মনা পাগলা ছবির প্রযোজনা, সংগীত পরিচালনা ও প্লেব্যাক করেছেন তিনি। এ দুই ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক নজর কাড়েন এ অভিনেতা। ২০১৫ সালে তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় ‘জিরো ডিগ্রি’। গত শনিবার মারা যান এ জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা।

 

হাসমত

হাসমত ছিলেন একাধারে পরিচালক ও কৌতুক অভিনেতা।

মঞ্চাভিনয় থেকে সত্তরের দশকে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। হাবা হাসমত নামে একটি ছবি পরিচালনা ও এতে মর্মস্পর্শী অভিনয় করে এ নামেই খ্যাতি পান তিনি। নতুন বউ (১৯৮৩),  আলোর মিছিল (১৯৭৪), রংবাজ (১৯৭৩) অবুঝ মন (১৯৭২) নীল আকাশের নিচে (১৯৬৯)-সহ শতাধিক ছবিতে অভিনয় এবং ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, এখানে আকাশ নীল, হাসি-কান্না, নকল মানুষ, মধুমিতা, হাবা হাসমত শিরোনামের ছবিগুলো নির্মাণ করেন তিনি। ২০১৪ সালে না ফেরার দেশে চলে যান এ অভিনেতা।

 

দিলদার

দিলদার চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কেন এমন হয় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তিনি ২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০০১ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

 

আরও যারা

চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে আরও যারা দর্শক মাতিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেনÑ ব্ল্যাক আনোয়ার, আফজাল শরীফ, লালু ও মন্টু, ফরিদ আলী, আবদুল আজিজ, শেখর আহমেদ, কাজল, জ্যাকি আলমগীর, রতন, সুরুজ বাঙালি, গিট্টু আজিজ, চিকন আলী, ববি, বেবী জামান, মতি, সোনা মিয়া প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর