বলিউডের এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী নীলম। গুজরাটি-ইরানি পরিবারে নীলমের জন্ম ১৯৬৯ সালের ৯ নভেম্বর, হংকংয়ে। তার বাবা ছিলেন প্রথম সারির ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার নির্মাতা। হংকংয়ের আইল্যান্ড স্কুলে নীলমের পড়াশোনা। হংকং থেকে নীলমের পরিবার পাড়ি দিয়েছিল ব্যাংকক।
মুম্বাইয়ে পরিজনদের কাছে ছুটি কাটাতে এসে কিশোরী নীলম অভিনয়ের সুযোগ পান। তার প্রথম ছবি ছিল রমেশ বহেলের পরিচালনায় ‘জাওয়ানি’। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে নীলমের বিপরীতে ছিলেন টিনা মুনিমের আত্মীয় করণ শাহ। বক্স অফিসে এই ছবি মুখ থুবড়ে পড়লেও প্রশংসিত হয় নবাগত নীলমের অভিনয়।
‘জাওয়ানি’-র পর থেকে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসতে থাকে নীলমের কাছে। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘ইলজাম’। এই ছবিতে নীলমের বিপরীতে নায়ক ছিলেন নবাগত গোবিন্দ।
পর্দায় সুপারহিট হয় গোবিন্দ-নীলম জুটি। একসঙ্গে মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তারা। তাদের সুপারহিট ছবির মধ্যে ‘লাভ ৮৬’, ‘খুদগর্জ’, ‘হত্যা’, ‘তাকতাবর’ অন্যতম।
চাঙ্কি পাণ্ডের সঙ্গেও নীলমের জুটি ছিল জনপ্রিয়। ‘আগ হি আগ’, ‘পাপ কি দুনিয়া’, ‘খাতরোঁ কে খিলাড়ি’, ‘মিট্টি আউর সোনা’, ‘ঘর কা চিরাগ’ চাঙ্কি-নীলম জুটির বক্স অফিস সফল ছবি। হিন্দির বাইরে আঞ্চলিক ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছেন নীলম। তার অভিনীত বাংলা ছবির নাম ‘বদনাম’।
শুধু বড় পর্দাতেই নয়। গোবিন্দ-নীলম সম্পর্ক একসময় ছিল ইন্ডাস্ট্রির বহুচর্চিত গুঞ্জন। পরে অবশ্য সেটি গুঞ্জনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। গোবিন্দ স্বীকার করেন তিনি নীলমের প্রেমে পাগল ছিলেন। অথচ তার আগেই গোবিন্দর জীবনে এসে গিয়েছেন সুনীতা।
কিন্তু নীলমের জন্য সুনীতার সঙ্গে এনগেজমেন্ট ভেঙে দিয়েছিলেন গোবিন্দ। তিনি চেয়েছিলেন নীলমকে বিয়ে করতে। কিন্তু আপত্তি জানান তার মা। বাগদান হয়ে যাওয়ার পর সুনীতার সঙ্গে ছেলের বিয়ে ভেঙে যাক, চাননি গোবিন্দর মা।
পরে এক সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানান, সামাজিক অবস্থানের দিক দিয়েও তাদের দু’জনের পরিবারের মধ্যে অনেক ফারাক ছিল। নীলমের পরিবার ছিল উচ্চবিত্ত। পাশাপাশি, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের দিক দিয়ে উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন নীলম নিজেও। তিনি প্রতিবারই বিয়ের প্রস্তাব হেসে উড়িয়ে দিতেন। ফলে সম্পর্ক থেকে সরে এসে ১৯৮৭ সালে গোবিন্দ বিয়ে করেন প্রেমিকা সুনীতাকেই।
নীলম অবশ্য এরপর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে বিয়ের জন্য। তিনি ক্যারিয়ারকে সময় দিতে চেয়েছিলেন। গোবিন্দর সঙ্গে বিচ্ছেদ তার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারেনি। নব্বইয়ের দশকেও চুটিয়ে অভিনয় করেন তিনি। তার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য নাম হল ‘অগ্নিপথ’, ‘জখম’, ‘ফার্জ কি জং’, ‘রণভূমি’, ‘ইন্দ্রজিৎ’, ‘পরম্পরা’ এবং ‘সাওদা’।
নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে ছবিতে অভিনয় কমিয়ে দেন নীলম। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায় তার ছবি ‘কুছ কুছ হোথা হ্যায়’ এবং তার পরের বছর ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’। এই ছবির শুটিংয়ে বিতর্কিত কৃষ্ণসার হরিণ হত্যাকাণ্ডে সালমান খান, সাইফ আলি খান, সোনালি বেন্দ্রে, টাবু-সহ প্রথমে অভিযুক্ত হন নীলমও। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতে নীলম অভিযোগমুক্ত হন।
২০০০ সালে ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী ঋষি শেঠিয়াকে বিয়ে করেন নীলম। তবে সে বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
এক দশকেরও বেশি সময় একা থাকার পর নীলম আবার বিয়ে করেন ২০১১ সালে। তার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী সমীর সোনি একজন অভিনেতা। ২০১৩ সালে একটি কন্যাসন্তান দত্তক নিয়েছেন সমীর ও নীলম। তার নাম রাখা হয়েছে ‘অহনা’।
পারিবারিক ব্যবসা ছিল অলঙ্কারের। নিজে শখের বশে এসেছিলেন অভিনয়ে। প্রতিভার জোরে আশির দশকে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গাও করে নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু বেশিদিন থাকতে চাননি প্রতিযোগিতায়। অভিনয়ের ক্যারিয়ার শেষে পারিবারিক ব্যবসাতেই ফিরে যান অভিনেত্রী নীলম। তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত জুয়েলারি ডিজাইনার।
বর্তমানে জুয়েলারি জিজাইনিং আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত আশির দশকের এই হার্টথ্রব। নায়িকা পরিচয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও সাফল্য পেয়েছেন নীলম কোঠারি সোনি। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম