২ এপ্রিল, ২০২৩ ১৫:০৬

অবয়ব নাট্যদলের ২৭ বছরে পদার্পণ

অনলাইন ডেস্ক

অবয়ব নাট্যদলের ২৭ বছরে পদার্পণ

অবয়ব নাট্যদলের কর্মীদের একটি মঞ্চ পরিবেশনা। ফাইল ছবি

অবয়ব নাট্যদলের ছাব্বিশ বর্ষপূর্তি আগামী ৪ এপ্রিল। সেদিন ২৭ বছরে পদার্পণ করবে এই নাট্যদল। পবিত্র মাহে রমজানের কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কোনো জমকালো আয়োজন না থাকলেও ঘরোয়াভাবেই ইফতার এবং জন্মদিনের মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে কেক কেটে আনন্দ প্রকাশ করবেন অবয়ব নাট্যদলের কর্মীরা।

১৯৯৭ সালের ৪ এপ্রিল ১৯ জন তরুণ ‘ভালো মনের মানুষ হব’ এই স্লোগান নিয়ে নিজেদের উৎকর্ষ সাধন আর দেশীয় কৃষ্টি শিল্প সাহিত্য ঐতিহ্য বিকশিত করার লক্ষ্যে মিরপুর দুই নম্বরে চম্পা পারুল স্কুলের একটি কক্ষে শহিদুল হক খান শ্যাননের নেতৃত্বের অবয়ব নাট্যদল প্রতিষ্ঠিত হয়। দলে খাতা-কলমে ২০০ জনের বেশি সদস্যের নাম থাকলেও বর্তমানে দলের নিয়মিত সদস্য ২০ থেকে ২৫ জন।  ২৬ বছরে অবয়ব নাট্যদলের ৩২টি প্রযোজনা রয়েছে।

প্রথম প্রযোজনা ময়মনসিংহ গীতিকাব্য অবলম্বনের ‘বাইদানির গান’, যা রচনা করেন ইমান আলী বয়াতি, নির্দেশনায় ছিলেন তানভির আহমেদ সিডনি। প্রথম প্রযোজনার প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১৯৯৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সেগুনবাগিচার কচি-কাঁচার মিলনায়তনে। সর্বশেষ প্রযোজনা- কাকতাড়ুয়া, যা রচনা করেন শহিদুল শ্যানন, নির্দেশনায় কাজী দেলোয়ার হেমন্ত।

অবয়ব নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক কাজী দেলোয়ার হেমন্ত বলেন, ‘অবয়ব নাট্যদল প্রযোজনা তৈরির ক্ষেত্রে মৌলিক নাটকের প্রাধান্য দিয়েছে। নিজস্ব সংস্কৃতির অন্যতম ময়মনসিংহ গীতিকাব্য অবলম্বনে যেমন কাজ করেছে তেমনি প্রকৃতি-পুরাণ, ইতিহাস-দেশ ও মাটি, স্যাটায়ার, দ্রোহ-প্রেম ও শ্রেণিসংগ্রাম, মিথলজি এমনকি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নাটক প্রযোজনা করেছে। প্রাধান্য পেয়েছে দলীয় নাট্যকারের নাটক। বাঙালির বিশ্বাস বা মিথলজির জায়গা থেকে দলের ‘জলপরী’ নাটক  দর্শকের হৃদয় জয় করেছিল। সবাই যখন মলিয়ের কমেডি নাটক বা বিদেশি নাট্যকারদের নাটক মঞ্চে প্রাধান্য দিয়েছে তখন অবয়ব নাট্যদল দলীয় নাট্যকারের স্যাটায়ার নাটক ‘সে এক রাজ্য’ কে বেছে নিয়েছে। যে নাটকের প্রত্যেকটি প্রদর্শনী তে হাউসফুল দর্শক থাকতো। দর্শক দেড় ঘণ্টা মৌন শব্দের হাসতো। উচ্চ শব্দে হাস তো না যেন পরের  সংলাপটি উপভোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। মহাকাব্য নিয়ে কাজ করার সাহসও অবয়ব নাট্যদলের রয়েছে।’

মহাভারত অবলম্বনে ‘কর্ণ কথা’ এবং মীর মশাররফ হোসেনের মহাকাব্যিক উপন্যাস অবলম্বনে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ দলের জনপ্রিয় প্রযোজনা।  ২০০৪ সালে ১৪ ডিসেম্বর অবয়ব নাট্যদল মিরপুরের চল্লিশটি বিভিন্ন সংস্কৃতিক সংগঠনের ১৫০ জন শিল্পীকে নিয়ে বুদ্ধিজীবী নিধনের ওপর সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো ( শব্দ আলো ও শরীর কথন) ‘দুন্দুভি’ প্রদর্শনী করেন। অবয়ব নাট্যদল নবীন হলেও প্রবীণ, সাহসিকতায় আর সৃষ্টিতে। এই পরিচয় দিয়েছে শুরু থেকেই। দলের বেশ কয়েকটি পথনাটক রয়েছে যেগুলো শততম’র বেশি প্রদর্শনী হয়েছে। পুকুরচুরি, সৌভাগ্যের থলি, লালি দলের অতি পরিচিত পথনাটক। প্রতিটি মঞ্চনাটকের ২০-৩০ টির বেশি প্রদর্শনী রয়েছে, অন্ত্যজের প্রেম, দ্রোহ আর জাতির ঐতিহ্য রক্ষার নাটক ‘ফেরিওয়ালা’ করোনার শুরুর আগের তিন বছরে অর্ধশত প্রদর্শনী করেছে।

করোনার সময় বাদে অবয়ব নাট্যদল গত ২২ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নাট্যোৎসব’ এবং দেশীয় শিল্প সাহিত্য ও ঐতিহ্যমূলক আয়োজন করেছে। উৎসবে সারাদেশের জনপ্রিয় নাটক নিয়ে প্রথম শ্রেণির দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে। দেশের জাতীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কে দিয়েছে দলের প্রয়াত সভাপতি ‘বিনতা হক সম্মাননা স্মারক’। প্রতি বছর দলীয় কর্মীদের মধ্যে থেকে একজনকে দিয়েছে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘শ্রেষ্ঠ নাট্যকর্মী পদক’। 

অবয়ব নাট্যদল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরামসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত সদস্য পদ। অংশগ্রহণ করেছে জাতীয়, আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবসহ ঢাকায় এবং বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন দলের নাট্যোৎসবসহ নিয়মিত জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোতে।

কাজী দেলোয়ার হেমন্ত বলেন, মহামারি করোনা দলের কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। দীর্ঘদিন দলের কার্যক্রম না থাকায় দলীয় কর্মীরা অনিয়মিত ছিল। বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল দলের কার্যক্রম। জমেছিল মহড়া কক্ষের ভাড়া। এসেছিল বাড়ি ছাড়ার নোটিশ। বাধ্য হয়েছিলাম মহড়া কক্ষ ছাড়তে। একটি ছোট গোডাউন ভাড়া করে সেখানে দলীয় ও প্রযোজনা দ্রব্যসামগ্রী রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিনের মহড়া কক্ষ হারিয়ে আমরা যেখানে মহড়া কক্ষের জন্য শরণাপন্ন হয়েছি সেখান থেকেই নিরুৎসাহিত হয়েছি। সর্বশেষ যে জায়গাটায় আশ্রয় নিয়েছিলাম তারাও অবয়ব নাট্যদলের ভার বহন করতে অক্ষমতা স্বীকার করেছেন।

এই দুঃসময় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগছে আমাদের। তাই বলে আমাদের দমনো সম্ভব নয়। আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই ।এই পরিস্থিতিতে মঞ্চনাটক নিয়মিত করতে না পারলেও নিয়মিত পথনাটক প্রদর্শনী করে যাচ্ছি। দ্রুত আমরা মহড়া কক্ষ নির্ধারণ করে মে মাস থেকে নিয়মিত মঞ্চ নাটকের প্রদর্শনতে যাচ্ছি আমরা। এ বছরই নাট্য উৎসব আয়োজনের এর ইচ্ছে রয়েছে আমাদের। আমরা এখন সংগ্রামের মধ্যে আছি। আর সংগ্রাম ছাড়া সৃষ্টি হয় না। শুধুমাত্র অবয়ব নাট্যদল নয়, যেকোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গেলে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কঠিন লড়াই করতে হয়। বাধা অতিক্রম করতে হয়। আর সবকিছু জয় করে নিজেদের সৃষ্টি নিজেদেরই করতে হয়। অবয়ব নাট্যদল তার ব্যতিক্রম নয়। সব বিরূপ পরিস্থিতি জয় করে অবয়ব নাট্যদল দীর্ঘ ২৬ বছর কাজ করছে নিজেদের উৎকর্ষ সাধন আর সৃষ্টির পথে।
 
তিনি আরও বলেন, পরিশেষে আমি একটি কথাই বলবো- ‘আমার অবয়বেই আমার শিল্পচেতনা’। আর এই চেতনার আলো জ্বলে উঠবে সকল আঁধার গলিয়ে। কল্যাণ হোক মঙ্গল হোক সকলের।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর