৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ধারণা করা হয়েছিল মেক্সিকো এলাকায় গ্রহাণু পতিত হয়ে বিশাল অগ্নিকান্ডে বিলুপ্ত হয়ে ছিল ডায়নোসরসহ পৃথিবীর ৮০ শতাংশ প্রাণ। কিন্তু এখন একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে গ্রহাণুর আঘাতে বিশ্বব্যাপী অগ্নিকান্ড ঘটা সম্ভব নয়।
গ্রহাণুর সঙ্গে সেই ভয়াবহ আঘাতে ঠিক কী হয়েছিলো পৃথিবীতে আর কী করেই বা ঘটে সেই মহাবিলুপ্তি? এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে গবেষণা চলছে অনেকদিন ধরেই। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা যায় গ্রহাণু পতনের কারণে শুরু হয় ভূমিকম্প, শক ওয়েভ, প্রচন্ড উত্তাপ এবং ধুলোর ঘন মেঘ। এর ফলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে পারে না এবং পৃথিবী হয়ে পড়ে শীতল। ২০১৩ সালে গবেষকেরা একটি হাইপোথিসিসে বলেন, এই গ্রহাণুর কারণে তৈরি হয় পৃথিবীব্যাপী বিশাল এক অগ্নিকান্ড যা মহাবিলুপ্তির একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই হাইপোথিসিসে ভুল বের করেছেন ব্রিটেনের একদল গবেষক। গ্রহাণু পতনের পর পৃথিবীতে কি অবস্থা বিরাজ করছিলো এবং আসলেই কোনো অগ্নিকান্ড ঘটেছিলো কিনা তা জানার জন্য কিছু সিমুলেটরের সাহায্য নেন তারা।
শক্তিশালী হ্যালোজেন ল্যাম্পের আগুন সৃষ্টিকারী একটি যন্ত্রের মাধ্যমে হিট পালস তৈরি করেন তারা। ওই গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্টি হওয়া তাপের মতো করে হিট পালস গাছপালার ওপর ফেলা হয়। এর তাপে গাছাপালায় আগুন ধরে যায় কিনা তা দেখার জন্যই মূলত এই সিমুলেশন। দেখা যায়, গ্রহাণু যে এলাকায় আঘাত করে সে এলাকার আশেপাশে থাকা গাছেও আগুন ধরে যাওয়া সম্ভব না এতো কম উত্তাপে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, এই তাপ বায়ুমন্ডলের মাঝে ছড়িয়ে গিয়ে অনেক দূরের গাছপালায় আগুন ধরে যাওয়া সম্ভব ছিলো। গবেষকদের মতে, এই উত্তাপের ফলে অনেক দূরের ইকোসিস্টেমে ক্ষতি হবার কথা। যেমন মেক্সিকোতে এসে পড়া গ্রহাণুর কারণে নিউজিল্যান্ডের বনভূমিতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবার কথা।
তবে সারা পৃথিবীতে এভাবে আগুন ছড়িয়ে যাবার কথা নয়, সমুদ্রের কারণে এই আগুনের বিস্তার থেমে যাবার কথা। তাহলে এই গবেষণা আসলে কী বলছে? মহাবিলুপ্তির জন্য যেভাবে বিশ্বব্যাপী অগ্নিকান্ডকে দায়ী করা হচ্ছিলো, তা আসলে দায়ী নয়। বরং গ্রহাণুর মাধ্যমে তৈরি হওয়া উত্তাপের পাশাপাশি অন্যান্য কারণগুলো, যেমন ভূমিকম্প, শক ওয়েভ ইত্যাদিও দায়ী ছিলো। খুব সম্ভবত চেইন ইফ ইভেন্টস অর্থাৎ একের পর এক দুর্যোগের কারনেই ঘটে এই মহাবিলুপ্তি।
বিডি-প্রতিদিন / ২৯ জানুয়ারি , ২০১৫ / নাবিল