পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয় তেলসমৃদ্ধ দেশ সংযু্ক্ত আরব আমিরাতের শিশুরা। মায়ের কোল থেকে কবর পর্যন্ত কোনো কিছুতেই তাদের ঘাটতি বা এসব নিয়ে ভাবতে হয় না। সেরা স্কুলে লেখাপড়া; সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা কিংবা অঢেল স্বাধীনতা- সবই তাদের জন্মগত অধিকার।
আমাদের দেশের অনেকটা উল্টো চিত্র আমিরাতে। সেখানকার ছেলেমেয়েদেরকে স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কখনো চাকরি নিয়ে ভাবতে হয় না। বরং চাকরি তাদের জন্য অপেক্ষা করে বা প্রস্তুত থাকে। আর চাকরি হারানোর ভয় তো তাদের কাছে আকাশ থেকে বজ্রপাত পড়ার মতো। বেতন ভাতাদি নিয়েও তাদেরকে কখনো ভাবতে হয় না। নিয়মিত বিরতিতে বেতন বাড়ছে।
তবে আমিরাতের অনেক ধনী তরুণই কাজ করতে চান না। শিকার, ক্যাম্পিং, মাছধরা, বাজপাখী ওড়ানো বা মরুভূমিতে ড্রাইভিংয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন এদের কেউ কেউ। এছাড়া পশ্চিমা গানবাজনা ও সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তারা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিন্নমতাবলম্বীদের নিপীড়নের বিষয় গুরুত্ব পাই না তাদের কাছে।
এত কিছুর পরও ব্যক্তিগত জীবনে সুখী নন আমিরাতে তরুণরা। তাদের ধারণা, একঘেঁয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে আমিরাতি তরুণদের। নিজেদের জীবনকে তারা 'অর্থপূর্ণ' মনে করতে পারেন না। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী ৯৩ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ আমিরাতি (আদি বাসিন্দা) রয়েছে। অর্থাৎ দেশটিতে বসবাসকারী ৯৪ শতাংশ মানুষই অভিবাসী।
এর মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ আমিরাতি যুবক-যুবতী বেকার জীবন যাপন করেন। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার এটি। লন্ডনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের হাসান হাকিমিয়ান এ বিষয়ে বলেন, 'আমিরাতে ১৫ থেকে ২৪ বছরের তরুণদের প্রতি ৫ জনের একজন বেকার। মেয়েদের ৫০ শতাংশই বেকার থাকেন।'
এর বিপরীত চিত্রও আছে। যেসব আমিরাতি তরুণ-তরুণী চাকরি করেন তারা অনেক বেশি সক্রিয়। অন্যান্য দেশের কর্মজীবীদের চেয়ে তারা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিশ্রম করেন এবং এর ফল ভোগ করতে পছন্দ করেন।
দুবাই ভিত্তিক গবেষণা একটি প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষক মোহাম্মদ বাহারুন বলেন, সম্প্রতি তরুণ আমিরাতিদের মধ্যে যারা চাকরি করছেন- তারা অনেক বেশি কর্মঠ এবং গতিশীল। আমিরাতি ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা লেখাপড়ায় ভালো এবং পরিশ্রমী। দেশটির তরুণ ব্যবসায়ী সুয়াদ আল-হোসানি (২৬) বলেন, 'আমি কখনো কাজে ক্ষান্ত দেই না। ব্যবসা শুরু করার পর থেকে গত ৫ বছরে আমি কখনো ছুটি নেইনি।'
আমিরাতে কর্মরত ওমানের সাংবাদিক আব্বাস আল-লাওয়াতি বলেন, 'সাধারণ কাজেও ১৫ হাজার দিরহাম বা ৪ হাজার ডলার বেতন পান আমিরাতিরা। প্রায়ই তাদের বেতন বাড়ে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো চাকরি থেকে তাদের বরখাস্ত করা হয় না। আমিরাতিদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির পরিমাণ বিপুল এবং এটি প্রাপ্য অধিকার বলেই মনে করেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, তরুণদের কাজে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে আমিরাত সরকার। এতে অভিবাসীদের ওপর নির্ভরতার সঙ্গে সঙ্গে কাজের গতিও কমছে। তবে আমিরাতি তরুণদের অনেকেই মনে করেন, অভিবাসীদের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে তারা। সূত্র: বিবিসি
বিডি-প্রতিদিন/ ৮ এপ্রিল ২০১৫/শরীফ