রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা চরে বোরো ধানের ব্যাপক চাষ করেছে চাষীরা। হ্রদ জুরে এখন কাঁচা-পাকা ধানের সমারোহ। প্রতি বছর এই মৌসুমে রবিশস্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে জেগে উঠা জলেভাসা জমিতে বোরো ধানের চাষ শুরু করে স্থানীয় চাষীরা। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় পুরুষের সঙ্গে নারীদেরও ব্যস্ত সময় কাটছে এসব চাষাবাদে। সারাদিন কেটে যায় ফসলি জমি প্রস্তুত করতে। শুস্ক মৌসুমে লেকের পানি কমে গেলে ভেসে ওঠে বিস্তৃত পলিভরা জমি। সেসব জমিতে চাষাবাদ করেন স্থানীয় চাষীরা। ধান ছাড়াও শাক-সবজি এবং তরমুজ, বাংগীসহ মৌসুমি ফলের চাষ হয় ওই জমিতে। কাপ্তাই হ্রদে জলেভাসা জমিতে ধান উৎপাদনের রেকর্ড ভেঙেছে। ঘটেছে নিরব কৃষি বিপ্লব।
স্থানীয় চাষীদের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসূমে কাপ্তাই হ্রদ ঘেষে জলেভাসা চর জেগে উঠে। তাছাড়া এসব চরে পল্লী মাটি জমার করণে ফলন ভাল হয়। তাই প্রতি বছর বর্ষা মৌসূমের আগে এসব জমিতে বোরো ধান চাষ করে থাকে। চাষীরা আশা করছে প্রতি বছরের মত এবছরও ভাল লাভবান ফলন পাওয়া যাবে। আগের বছরগুলোয় খরার কারণে ফলন মোটেও ভালো ছিল না। গত বছর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল পাকা ধানের ক্ষেত। তবে গেল বছরের অতি বৃষ্টির কারণে পলি জমায় এবার ফলন এসেছে আশাতীত হারে। আর অনাবৃষ্টির কারণে লেকের পানি বাড়তে না পারায় অবাধে ঘরে তোলা যাচ্ছে ফলিত ফসল। এখন পাকা ফসল তোলার ভর মৌসুম।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমনি কান্তি চাকমা জানান, চলতি বছর রাঙামাটির ১০ উপজেলা মিলে ৭হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ধানের ফলনও হবে ব্যাপক। আবার কোন কোন উপজেলায় কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তুলছে। আবার অনেকগুলো এখনো আধাপাকা রয়েছে। চলতি মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে চাষীরা যে হারে ধানের আবাদ করেছে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে এই মৌসুমেই ধানের উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেকাংশে ছাড়িয়ে যাবে। তাছাড়া কৃষকরা যাতে সঠিকভাবে গাছের পরিচর্চা করতে পারে, সে জন্য প্রযুক্তিগত সব ধরণের সেবা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি বিভিন্ন উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বিশাল জলে ভাসা জমি জেগে উঠেছে। আর জেগে উঠা এসব জমিতে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে চাষ উপযুগী করে ধানের চারা রোপন করছে স্থানীয় চাষীরা। সেচের ব্যবস্থা রয়েছে আবাদকৃত ধানী জমিতে। তবে সারের যদি সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আবাদকৃত জমিতে সারের বিকল্প হিসেবে ছাই দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিভাগ। এ পরামর্শ কাজে লাগিয়ে চাষীরা চাষাবাদ করলে মড়ক থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। এতে করে ফলনও বাম্পার হবে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক ছবি হরিদাশ জানান, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কৃষি জমিগুলোকে দেশের অপরাপর এলাকার জমিগুলোর সাথে আলাদা করার কোনো উপায় নেই। পাহড়ের বোরো আবাদের ফসল রক্ষায় সেচ সুবিধা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে জরীপ চলছে। সেচের সুবিধা বাড়িয়ে পাহাড়ের পতিত নীচু জমি গুলোতে চাষাবাদ বাড়ানো গেলে রাঙামাটিতে ধানের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩০ এপ্রিল ১৫/ সালাহ উদ্দীন