বাড়ির ভেতর থেকে জমিদারের দরাজ কণ্ঠ আর শোনা যায় না। নেই খানসামা, বাইজিদের দৌঁড়ঝাপ। আছে শুধু শেকড়ের গন্ধ। বাংলার ইতিহাসের গন্ধ, যা আজ বিলীন হবার পথে। খসে পড়ছে চুন মেশানো ১২৯ বছরের পুরনো ইট-সুড়কি।
কথা হচ্ছে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার কাছারি বাডিটির। একসময় এখানে সকাল-সন্ধ্যা মানুষে গমগম করত। দিনভর চলত বিচার-সালিশ। শোনা যেত ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ। আজ অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটি ধ্বংস হতে চলেছে।
অতীত ঐতিহ্যের নিরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার এই কাছারি বাড়িটি দীর্ঘদিন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ বাড়িটি সংস্কার না করে পাশেই নির্মান করা হয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস ভবন। এতে এর নান্দনিক সৌন্দর্যহানি ঘটেছে। একইসঙ্গে সংস্কার না করায় ক্রমেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে শত বছরের ইতিহাস ধারণকারী পুরনো এ জমিদার বাড়িটি।
জানা যায়, ১৮৮৬ সালে নির্মিত এই ভবনটির পাথরে খোদাই করে দুইটি বাঘের ছবি, নির্মাণের সাল এবং বাড়ির মালিকের নাম লেখা রয়েছে। বাড়িটিতে দুইটি বড় বাঘের ছবি থাকায় এটি বাঘ মার্কা বাড়ি বলে অত্র এলাকায় পরিচিত। বাড়িটি সাত কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন। প্রতিটি দেয়াল ৩০ ইঞ্চি পুরু এবং চুন-সুড়কি দিয়ে নির্মিত।
এলাকার সাংবাদিক ও প্রবীণ শিক্ষা অনুরাগিরা জানান, প্রজা সাধারণের যাতাযাতের সুবিধার্থে ছোট যমুনা নদীর পাড়ে এই কাছারি বাড়িটি নান্দনিক নির্মাণ শৈলীতে জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরা তৈরি করেছিলেন। দেশ বিভাগের পর জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলে বাড়িটি উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই ভবনটি ছিল উপজেলা ভূমি অফিস। কিন্তু ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কারণে কর্তৃপক্ষ এই ভবনটি সংস্কার না করে তার পিছনে একটি নতুন ভবন নিমার্ণ করে সেখানে উপজেলা ভূমি অফিস স্থানান্তর করে। বর্তমানে এ জমিদার বাড়িটি মাটির সঙ্গে ধুলো হয়ে মেশার প্রহর গুনছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ মে ২০১৫/ এস আহমেদ