ছোট একটি গ্রাম লাঙ্গডান। পেছনে সুবিশাল পাহাড় বলে দেয় মন উদাস করা কোন একটি গ্রাম ছিলো এটি। কিন্তু এখন সেটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিনত। বাতাসে লাশের গন্ধ। গ্রামে ঢুকে মনে হলো কেউ যেন বড় কোন ক্রেন ক্রাসার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে গ্রামটি। পুরো গ্রামের ৬৮টি ঘরের একটিও নেই। শুধুমাত্র মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি! সেটিও বিধ্বস্থ।
নেপালের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা ছিলো গতকাল শনিবার। গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন, গৌতম বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্তির দিন এবং গৌতম বুদ্ধের দেহাবসানের দিন। নেপাল দেশের কপিলাবস্তু রাজ্যে রাজা শুদ্ধোধন এবং রাণী মহামায়ার সংসারে জন্মগ্রহণ করেন রাজপুত্র সিদ্ধার্থ। রাজপুত্র সিদ্ধার্থই জীবনের সত্য অনুসন্ধান করার মানসে তরুণ বয়সে রাজপ্রাসাদ, পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্রের সাথে মায়ার বন্ধন কাটিয়ে বের হয়েছিলেন, গ্রহণ করেছিলেন সন্যাসধর্ম। একটানা ৪৯ দিন ধ্যান করে সিদ্ধি লাভ করেন, আবির্ভূত হন সিদ্ধপুরুষ মহামতি গৌতম বুদ্ধ। আজ গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নেপাল বিধ্বস্ত। তাই নেপালে নেই কোন উৎসবের আমেজ। যে লাঙ্গডান গ্রামের কথা বলেছি সেই লাঙ্গডান গ্রাম পুরো নেপালের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই গ্রামের মানুষ যেভাবে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়ে নিথর হয়ে বসে আছে তেমনি নিথর হয়ে আছে পুরো নেপাল।
লাঙ্গডান গ্রামে মারা গেছে ১৭ জন আর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন ২৭ জন। গ্রামের মানুষের কাছে ত্রান এখনও পৌঁছেনি। আশাহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন আর নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসস্তুপ সরাচ্ছেন। এছাড়া আর কিইবা করবেন তারা!
গ্রামের রাজেন্দ্র (৫৫) নামের একজন বললেন, যেখানে পুরো গ্রাম মাটির সাথে মিশে গেছে সেখানে কীভাবে ধর্মীয় উৎসব হবে! ৩৫ বছরের রঙ্গলাল, যিনি তার স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে হারিয়েছেন ২৫ এপ্রিলের ভয়াবহ ভূমিকম্পে, তিনিই বা কীভাবে ধর্মীয় উৎসবে সামিল হবেন!
লাঙ্গডান গ্রামের গল্পটি আসলে এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার আর ৩ কোটি মানুষের দেশ সৌন্দর্যের পুন্যভূমি নেপালের গল্প। বৌদ্ধ পূর্ণিমার রাতে অন্যান্য স্থানের মতো নেপালের গোডাওয়ারী পাহাড়ের উপরও বিশাল চাঁদ মাথা তুলে দাঁড়ায়। পূর্নিমার চাদ যতোটা উজ্জ্বল থাকে হয়তো ততোটাই ছিল। তবু যেন সেই চাঁদ অনেকটা নিস্প্রভ! মনে হচ্ছিল নেপালের মানুষের জন্য চাঁদ তার আলো কমিয়ে উদয় হয়েছে আকাশে! যেখানে নেপালের ৩ কোটি মানুষ অন্ধকারে পথ হাঁতড়ে বেড়াচ্ছেন, আশাহীন হয়ে বেঁচে আছেন, সেখানে চাঁদের আলো কিভাবে আলো ছড়াবে সেখানে?
বিডি-প্রতিদিন/০৪ মে ২০১৫/ এস আহমেদ