চোখে না দেখলে কি হবে,জীবনের কাছে হার মানেননি তিনি। বেঁচে থাকার জন্য কারও কাছে হাত পাতেননি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফরিদুল ইসলাম ওরফে হেলপেটু। ১০ বছর বয়স থেকেই দৃষ্টিহীন দুচোখ নিয়ে নেমে পড়েন জীবিকার সন্ধানে। পারিবারিক নির্যাতনে দিশাহীন হেলপেটু স্বপ্নের মাধ্যমেই অনেকটা অলৌকিকভাবেই পেয়ে যান বেঁচে থাকার পথ।
পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার জয়তুন পখুরি গ্রামের মৃত গোলামউদ্দিনের ছেলে হেলপেটু জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারের বোঝা হয়ে ওঠেন তিনি। একসময় বাবা, মাসহ পরিবারের অন্য সকলেই তাকে ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে রাস্তায় নামতে বলেন।
হেলপেটু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান,‘পরিবারের সবাই আমাকে ভিক্ষা করতে বলে। নানা রকম নির্যাতন করে। একদিন আমি মসজিদে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্না শুরু করি। প্রার্থনা করি হে আল্লাহ আমাকে ২ ঘণ্টার জন্য পৃথিবী দেখতে দাও।’ তিনি জানান ওইদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে গ্যাস লাইটার দেখেন। পরদিন সকাল থেকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি গ্যাস লাইটার সংগ্রহ করে মেরামত করতে থাকেন। গ্রামের ফরিদা পারভীন নামের এক গৃহিনীর কাছে ৪০ টাকা ধার করে গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে লাইটারে ভরতে শেখেন। তারপর থেকে শুরু হয় গ্যাস লাইটের জীবন। দীর্ঘদিন তিনি জেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে গিয়ে গ্যাস লাইটার মেরামত করে সংসার চালিয়ে আসছেন। চোখে দেখেন না কিন্তু হাতে নিলেই বুঝতে পারেন নষ্ট লাইটারের সমস্যা। একা একাই হাটে বাজারে চলে যান। সঙ্গে থাকে একটি লাঠি।
গ্যাসলাইটার মেরামত করে দিনে আয় করেন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। তাই দিয়েই চলে হেলপেটুর স্ত্রী আর এক মেয়েসহ তিনজনের সংসার। সরকার বা স্থানীয়ভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা এখনও পাননি তিনি। মেয়ে ফরিদা আকতার গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে ১ম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়েকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ মে, ২০১৫/ রশিদা