বেড়াতে গিয়ে ১৩০ কোটি বছরের পুরনো পায়ের ছাপ আবিষ্কার

অস্ট্রেলিয়ার ব্রুমস কেবল বিচে গত রবিবার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন বিন্দি লি পোর্ট। সূর্য হেলে পড়েছে কেবল বিচের কোলে। দিগন্ত জুড়ে লাল আভা। এমন মনোরম দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন মা ও মেয়ে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাতই বেসামাল হয়ে পড়েন বিন্দি লি পোর্ট। নিচে তাকিয়ে দেখলেন অদ্ভুত কিছু গর্ত। লক্ষ্য করেই বুঝলেন এটা নির্ঘাত ভারী কেনো পায়ের ছাপ। মাপে তার নিজের পায়ের প্রায় দ্বিগুণ। এবং সেটি একটি-দুটি নয়। কেবল বিচ বরাবর অনেকখানি জায়গা জুড়ে কাদার উপর এমন গভীর পায়ের ছাপ ছড়িয়ে রয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। বিন্দি বুঝতে পারলেন তিনি স্পেশাল কিছু দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু আঁচও করতে পারেননি কত বড় একটা আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি। বিন্দি এটুকু বুঝতে পারেন, এমন পায়ের ছাপ তাঁর চেনা কোনও প্রাণীর নয়। এ যে বিশাল কোনও জন্তুর পায়ের ছাপ হবে, এ নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন, কেবল বিচে কী এমন জন্তু ঘোরাফেরা করে, যাদের পায়ের ছাপ এত বিশাল?

এই রহস্যের উদ্ঘাটন করলেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ডক্টর সালিসবারি। কেবল বিচে এমন পায়ের ছাপের সন্ধান পেয়ে তাঁর গবেষণার নতুন দিশা পেল বলে মনে করছেন তিনি। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কিম্বারলে রিজিয়নে অনেক বছর ধরে ডায়নোসরের ফুট প্রিন্ট নিয়ে গবেষণা করছেন। তাই বিন্দি লির এই আবিষ্কারে তিনি আপ্লুত। সালিসবারি জানান, এই পায়ের ছাপগুলির ১৩০ কোটি বছর আগেকার। আর সে সময় পৃথিবীতে ডায়নোসরেরই অস্তিত্ব ছিল। তবে এগুলো মাঝারি মাপের থেরোপড ডায়নোসরের পায়ের জীবাশ্ম হবে বলে মনে করছেন সালিসবারি। কেমন দেখতে ছিল এই থেরোপড ডায়নোসর? তাঁর মতে, মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত এই ডায়নোসরেরা ছিল ৫ মিটার লম্বা। টাইরানোসরাসের মতো বড় না হলেও এরা মাংসাশী ছিল বলে জানান তিনি। যে পায়ের জীবাশ্ম মিলেছে সেগুলো ১-১.৬ ফুট লম্বা। এই ধরনের জীবাশ্মকে বলা হয় মেগালোসরোপাস ব্রুমেনসিস। সালিসবারি আরও জানিয়েছেন, কেবল বিচে পায়ের ছাপগুলো ২০-৩০ বছর ধরে বালির তলায় ছিল, সমুদ্রের ঢেউয়ে আস্তে আস্তে বালির স্তর সরে গিয়ে এগুলো প্রকাশ পাচ্ছে।

তবে আবিষ্কারক বিন্দি লি পোর্ট তো আপ্লুত। স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এইভাবে ডায়নোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার করে ফেলবেন। এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর তো রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। বিন্দি এখন ভেসে যাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছার জোয়ারে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ