দিনাজপুরে লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে কলা চাষ

স্বল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে লাভজনক হওয়ায় দিনাজপুরের কৃষক ঝুঁকছে কলা চাষে। দিনাজপুরের উৎপাদিত মেহের সাগর কলার খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে সাগর কলা নয় সবরী, মালভোগ, চিনি চম্পা কলার চাহিদাও ব্যাপক। 

এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম কলার পাইকারি হাট বসে দিনাজপুরের কাহারোলের দশ মাইল এলাকায়। এখানে সকাল থেকেই চাষী, ব্যবসায়ী ও পাইকারদের হাক-ডাকে কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠে। এ হাটে বিভিন্ন কলার সরবরাহ বেশী হওয়ায় গত এক সপ্তাহে কলার দাম কিছুটা কমলেও সবাই লাভবান হচ্ছে।

চাষী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মাঠ জুড়ে সাজানো সারি সারি কলার কাদি। পাইকারদের সঙ্গে চলে দর কষাকষি। কেনাবেচা শেষে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা ট্রাকে কলা তোলা হয়। শ্রাবণ মাসের শুরুতে কলার দাম ছিল বেশী। প্রকার ভেদে প্রতি একশ' কাদি বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। এখন সেই কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় হাটের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর অনুরোধ জানান তারা।

চাষীরা বলছেন, কলা চাষে আরেক সুবিধা হলো কলা ক্ষেতে ছয় মাস পর্যন্ত সাথী ফসল হিসেবে নানা জাতের সবজি চাষ করা যায়। যা বিক্রি করে সহজেই কলা ক্ষেতে পরিচর্যা করতে পারেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতেও পারেন। 

উত্তরাঞ্চলের কলার বাজার বলে খ্যাত দিনাজপুরের দশ মাইল মোড়, তের মাইল গড়েয়া এবং রানীরবন্দর বাজার থেকে কখনও প্রতিদিন ২০-২৫ ট্রাক কলা চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ট্রাকে এক হাজারের উপরে কলার কাইন তোলা হয়। সব উপজেলাতেই কলা চাষ হলেও কাহারোল উপজেলায় সাগর কলাসহ স্থানীয় জাতের কলা বেশী চাষ হয়। তাই এ অঞ্চলের বড় কলার হাট বসে কাহারোলের দশমাইল এলাকায়। 

কাহারোলের চাষী সুকুমার জানান, এক একর কলা আবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকা লাভ হয়েছে।

কলার হাট ইজারাদার আব্দুল জলিল জানান, স্থান সংকুলান হওয়ায় কলা বেচা-কেনাসহ বাইরের বেপারী এবং ট্রাক রাখার জায়গা না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কলার হাটে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। আর এখানে পাইকার, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, পরিবহনসহ ২ হাজার মানুষ জড়িত। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, জেলায় উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের মধ্যে মেহের সাগর, সাগর, চিনি চম্পা, সবরী ও সুন্দরী (মালভোগ) জাতের উল্লেখযোগ্য উচ্চ ফলনশীল কলার চাষ হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত কলা গাছের চারা রোপণ করা হয়। প্রতি একরে হাজার কলা চারা রোপণ করা যায়। ১৪ মাস পর চাষিরা ওই কলা ক্ষেত থেকে ১ হাজার কলার কাঁদি সংগ্রহ করতে পারেন।

তবে কলাচাষীদের মধ্যে অধিকাংশই ভূমিহীন কৃষক, পরিত্যাক্ত ও অনাবাদী জমি লীজ নিয়ে তারা কলা চাষ করছেন। চারা রোপণের ৩/৪ মাসের মধ্যে গাছে কলার থোর আসে, এক একটি পির/কাদি থেকে ৬-৮ কলার ছড়ি পাওয়া যায়। জেলায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির