৬ অক্টোবর, ২০২১ ১১:৫৪

পাখিরাই বদলে দিয়েছে গ্রামের নাম

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পাখিরাই বদলে দিয়েছে গ্রামের নাম

পঞ্চগড় থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দুরে দেবীগঞ্জ-ডোমার উপজেলার সীমান্তরেখার একটি গ্রামের নাম পশ্চিম ডাঙ্গাপাড়া। কাগজে কলমে এই গ্রামের নাম ডাঙ্গাপাড়া হলেও স্থানীয়রা বলছেন প্রায় দুইশ বছর ধরে এই গ্রামের একটি বাড়ির বাঁশ বাগানে বাস করছে অসংখ্য পাখি। গ্রামে পাখিদের আনাগোনায় এখন বদলে গেছে এই গ্রামের নাম।

পাখিদের অবাধ বিচরণের কারণে এই গ্রামের নাম হয়েছে পাখিনাগা। এখন সবাই এই গ্রামকে পাখিনাগা বলেই ডাকে। প্রাকৃতিক ভাবেই পাখিদের এই অভয়াশ্রম গড়ে উঠলেও দিন দিন বাশবাগান এবং গাছপালা ধ্বংস হওয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পাখিরা।

চিলাহাটি ইউনিয়নের পাখিনাগা গ্রামের অধিবাসীদের ঘুম ভেঙ্গে যায় অসংখ্য পাখির কিচির-মিচির ডাকে। আর সন্ধ্যা আসে পাখিদের বাড়ি ফেরার ডাকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে প্রায় দুশ বছর ধরে এই গ্রামে পাখিদের বসবাস। এই গ্রামের মজিদুল শেখ এবং রফিকুল শেখের বাড়িতে প্রায় দুই একর এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা বাঁশ বাগানে বাস করছে হাজার হাজার পাখি।

বক, পানকৌড়ি, শালিক, দোয়েল, ঘুঘু, শ্যামা, রাত চড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাস করছে এখানে। বাড়ির মালিকেরা বলছেন প্রায় দুশ বছর ধরে তাদের বাড়িতে পাখিরা বসবাস করছে। পাখিদের বসবাসের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিয়মিত পাখিদের যত্ন নিচ্ছেন তারা। দেশের নানা এলাকার অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে পাখিদের এই গ্রাম দেখতে। বাড়ির মালিকেরা চান এই এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকারি উদ্যোগ। 
মজিদুল শেখ জানান বৈশাখ মাসের শুরুতে পাখিরা আসতে শুরু করে। অগ্রহায়ণের  শেষ দিকে আবার বড় পাখিরা চলে যায়। দাদুর কাছে গল্প শুনেছি তার দাদুর কাছে তিনি পাখিদের এই আবাসের কথা শুনেছেন। স্বাধীনতার আগে এক সুবেদার পাখি শিকার করতে এসেছিলেন। আমার দাদু তার বিরুদ্ধে মামলা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। পাখিরা এখানেই বাসা করে। ডিম পাড়ে। বাচ্চা লালন পালন করে। বাচ্চা পাখিদের উড়তে শেখায়। তিনি বলেন বংশগত ভাবেই আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। কিন্তু এর জন্য দরকার সহযোগিতা।
 
স্থানীয়রা জানায়, বাড়ির মালিক পাখি প্রেমী মজিদুল শেখ এবং রফিকুল শেখ নিয়মিত পাখিদের যত্ন নেন। বাঁশ গাছ থেকে কোন পাখি পড়ে গেলে তারা আবার বাসায় তুলে দেন। এছাড়া মাঝে মাঝে খাবারের ব্যবস্থাও করেন তারা। পাখিদের যত্ন আত্তিতে গ্রামবাসীরাও সচেতন। তারা কেউই এই এলাকায় পাখি শিকার করতে দেন না। তারা আরও জানান দিন দিন বাঁশ বাগান কমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক বাঁশগাছ মরে গেছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গাছ পালা। ফলে পাখিরাও হুমকিতে পড়েছে। অচিরেই উদ্যোগ না নিলে হারিয়ে যাবে পাখির এই অভয়াশ্রম। তারা চান পাখিদের সংরক্ষণে সরকারী সহযোগিতা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পাখিদের বিচরণের কারণে বদলে গেছে এই গ্রামের নাম। এই গ্রামের সকল মানুষ পাখি প্রেমী। তাই গ্রামটির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে তারা সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। চিলাহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, ছোটবেলা থেকেই এই গ্রামকে পাখিনাগা হিসেবেই চিনি। পাখিদের সাথে থাকতে থাকতে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই পাখিদের প্রতি তাদের আলাদা দরদ আছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ছাড়া পাখিদের এই আবাসকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।  

প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক দেশের নানা এলাকা থেকে দেখতে আসে পাখিদের এই গ্রামটি। কেউ কেউ ছবি তুলে নিয়ে যায়। কেউ কেউ নির্মাণ করে প্রামাণ্যচিত্র। কিন্তু কোনোভাবেই পাখিদের সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পর্যটকরাও আশা করছেন সরকারি উদ্যোগ। সাংস্কৃতিক কর্মী রফিকুল ইসলাম জানান, অনেকদিন থেকে এই গ্রামের কথা শুনেছি। যখন সশরীরে দেখলাম তখন মুগ্ধ হয়েছি। মানুষ এবং পাখিদের একসাথে বসবাস দেখে আমি অবাক হয়েছি। 

পাখিদের সংরক্ষণ এবং গ্রামটির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনা শবনম। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি নিজে পাখিনাগায় গিয়েছি। পাখিদের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। আমি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পাখিদের এই অভয়াশ্রমটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা দরকার হবে তাই উদ্যোগ নেব। 

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর