২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:১২

নগর জীবনের ইতিহাস খুঁজে বেড়ানো যার নেশা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

নগর জীবনের ইতিহাস খুঁজে বেড়ানো যার নেশা

ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর

কুমিল্লা নগরীর প্রাচীন স্থাপনার একটি বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। এটির ইতিহাস তিনি খুঁজে বের করেন তিন বছর সময় লাগিয়ে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এলিসনকে হত্যা করা হয়। সেই বিপ্লবী বীরের পরিচয় তিনি খুঁজে বের করেন। কিংবা ১৭শ’ শতকের প্রথম দিকের বিপ্লবী পুরুষ সমশের গাজীকে তুলে আনেন। এরকম ৪০০-৫০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসকে তিনি যুক্তির নিরিখে জীবন্ত করে তোলেন। 

ইতিহাসের নতুন ব্যতিক্রম তথ্য তুলে ধরে এর পাঠকও তিনি সৃষ্টি করেন। ইতিহাস সংগ্রহ করতে গিয়ে তার বাড়িকে লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকা, দলিল সংগ্রহ করেছেন সারা দেশসহ ভারতের আগরতলা ও কলকাতা থেকে। শহরের প্রাচীন কোন তথ্যের জন্য অনেকে ছোটেন তার কাছে। 

বলছি ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীরের কথা। তিনি কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নামে একটি বই লিখেছেন। কুমিল্লার ডেলনি হাউজ ও কুমিল্লার টাউনহল ইতিহাস নিয়ে বই প্রকাশ করবেন। নগর জীবনের ইতিহাস খুঁজে বেড়ানো তার নেশা।

নগরীর রাজগঞ্জ ইউসুফ হাই স্কুলের পাশে তার বাসা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তার আলাদা লাইব্রেরি থাকলেও দুই ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম ও বেড রুমেও বই ম্যাগাজিনের স্তূপ। সংখ্যা তা ৫ হাজার ছাড়াবে। তার বেড রুমেও রয়েছে ডজনখানেক ডায়েরি। সেখানে তিনি বিভিন্ন বই থেকে নোট নেন। কখনও চেয়ারে কখনও খাটে বসে কাজ করেন। 

ব্যক্তি জীবনে কলেজ শিক্ষক আহসানুল কবীর বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। যখন প্রাইমারিতে পড়ি তখন বাবা অ্যাডভোকেট আবদুল মতিনের আলমিরা থেকে নিয়ে প্রথম পড়েছি নীহার রঞ্জন গুপ্তের ছোটদের রাজনীতি। পাঠ্য বই থেকে ইতিহাস জানার বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি ছিল। কুমিল্লার ইতিহাস নিয়ে কাজ করা কঠিন। কারণ এখানে লিখিত এভিডেন্সস কম। এখানে ১০০ বছরের ইতিহাস পাওয়া যাবে। তবে ২০০-৩০০ বছরের আগের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যাবে না। 

ইতিহাস লেখার আনন্দ স্মৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, কোথাও গেলে মানুষ গল্প নয় আমার নিকট ইতিহাস শুনতে চায়। তারা এজন্য আমাকে নির্ভরযোগ্য মনে করে এটা আনন্দের। লিখতে চাই সমসাময়িক অনেক কিছু। কিন্তু নানা পারিপার্শ্বিকতায় লিখতে পারি না। এটা অনেক বেদনার।  

তিনি আরো বলেন, ইতিহাস নিয়ে এই খোড়াখুড়ি আর লেখালেখি নিয়ে পরিবার প্রথমে আপত্তি করলেও এখন তারা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা পাই বলে কাজ করতে পারছি।

কুমিল্লার সাবেক পুলিশ সুপার ও ইতিহাস লেখক মালিক খসরু বলেন, কুমিল্লায় চাকরিকালে একটা পুরাতন ভবন ভাঙা হয়। সেখানে মাটির নিচে একটা ফলক পাই। ফলকে উল্লেখ ছিল, বৃটিশ সরকারের সময় কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এলিসনকে গুলিতে হত্যা করা হয়। কে হত্যা করেছে তা জানি না। অনেক খোঁজ নিয়েছি। পরে ‘হে অতীত কথা কও’ শিরোনামে একটি লেখা লিখি। সেই লেখায় অজ্ঞাত বিপ্লবী বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সেই বিপ্লবীকে কয়েক দশক পরে আবিষ্কার করেন স্নেহের আহসানুল কবীর। তার ইতিহাস খোড়ার এই প্রাণান্তকর চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর