সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

যাদের জন্ম সেনা ছাউনিতে তারা গণতন্ত্র শেখায় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যাদের জন্ম সেনা ছাউনিতে তারা গণতন্ত্র শেখায় : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেতারা প্রায়ই বক্তৃতা দেন বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র নাকি ধ্বংস করে ফেলেছি। তাদের গণতন্ত্রের ডেফিনেশনটা কী? যাদের জন্ম জনগণের মধ্য থেকে হয়নি, হয়েছে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতা দখলকারী পকেট থেকে, তারা এখন আমাদের গণতন্ত্র শেখায়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতির ভাষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির নেতা কে? বাংলাদেশের জনগণ ওদের ভোট দেবে কেন? এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী অথবা গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, অর্থ পাচারকারী সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে তাদের (বিএনপি) দলের নেতা। সেই দলকে মানুষ কেন ভোট দিতে যাবে? মানুষ তো ভোট দেবে না। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল ছিল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল ছিল অবৈধ। কারণ, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, এমনকি তারা সামরিক আইন ভঙ্গ করে নিজেদের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে, তারপর আবার ‘হ্যা’-‘না’ ভোট করেছেন। প্রথমে ক্ষমতায় উত্তরণ, তারপর রাজনীতিতে আসা। তারা রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে আসেন। পরে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যান। সেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারীর হাতেই বিএনপির জন্ম। বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে গেছে জিয়াউর রহমান, যে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল করেছিল, রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সেনাসদস্যদের হত্যা করেছে। কত পরিবার তাদের আপনজনের লাশটিও পায়নি। হাজার হাজার সেনাসদস্যকে যারা হত্যা করেছে, তাদের থেকে আজ আমাদের গণতন্ত্রের সবক শিখতে হবে, এটাই জাতির দুর্ভাগ্য।

সরকারের উন্নয়ন যারা দেখে না তাদের চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আছে দেশে কোনো উন্নতি দেখে না। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। এখন বলতে হয় আমরা তো একটি আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় না, চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ একটু পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পারে উন্নয়ন হয়েছে কি না। বিএনপিসহ যারা সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখে না তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চোখে পড়ে না যে শতভাগ বিদ্যুৎ, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ তারাও নিচ্ছে। এটা উন্নতি নয়? আজকে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এগুলো চোখে পড়ে না। এগুলো উন্নয়নের লক্ষণ নয়? দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে সেটা তাদের চোখে পড়ে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা তাদের চোখে উন্নয়ন নয়।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিনা পয়সায় করোনার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশও এটা পারেনি। বাজেটে আলাদা করে হাজার হাজার কোটি টাকা রেখে দিয়েছি। আমাদের কথা যত টাকা লাগুক, যেখান থেকেই হোক ভ্যাকসিন আনব। দেশের মানুষকে দেব। আমরা সেটা দিতে সক্ষম হয়েছি। ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। আগামীকাল থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত আবারও গণটিকা দিতে হবে। যারা দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি সেটা আমরা দেব। আমরা একদিনে ১ কোটি ২৩ লাখ করোনার টিকা দিয়ে রেকর্ড করেছি। এবার কেউ যেন ভ্যাকসিন নিতে বাদ না থাকে সেটা দেখতে চাই। প্রথম ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ, তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

খাদ্য ও জীবিকার চাহিদা সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, করোনার ধাক্কা ও যুদ্ধাবস্থা সবকিছু মিলে খাদ্যভাবটা সারা বিশ্বে দেখা দিতে পারে। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য আমি আগেই বলেছি কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না থাকে। যার যেটুকু আছে সেটুকু করবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আমরাই করে দিয়েছি, এখন তা সম্প্রসারণ করছি। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। খালেদা জিয়া ঘুমাচ্ছিলেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের দিকে আমরা সরকারের আগে ছুটে গিয়েছিলাম। বিএনপি যায়নি। মিথ্যা কথা বলে তাদের সঙ্গে আমরা পারব না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণভবন থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান। 

শিগগিরই সব গৃহহীনের আবাসন নিশ্চিত হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের বিনা পয়সায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার চলমান প্রক্রিয়ায় শিগগিরই দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিত হবে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমরা ২০২১ সালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের জন্য বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সেদিন বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশের একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। অন্তত তাদের বেঁচে থাকার একটু সুযোগ আমরা করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশটাকে আবার আমরা স্বাধীনতার চেতনায় ফিরিয়ে আনব। আমরা স্বাধীনতার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে। বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার যে সুযোগটা পেয়েছি এবং এর পূর্বে আমরা স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীও উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ আমাকে দিয়েছে বলেই আজকে এই সৌভাগ্য হয়েছে যে, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পেরেছি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত এ সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজের বিশিষ্টজন, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে চেতনা জাগ্রত হবে : গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কার্যালয়ে স্থাপিত ‘মুজিব কর্নার’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে তারা যেমন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে তেমনি দেশও সামনে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভিতর একটা চেতনা জাগ্রত হবে, দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে এবং মানুষের কল্যাণে তারা আরও কাজ করতে অনুপ্রেরণা পাবে।

তিনি বলেন, আজকে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেননা ২১ বছর আমাদের বিজয়গাথা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, নতুন প্রজন্মের অনেকে সে ইতিহাস জানতেই পারেনি। আজকে তা আবার ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন সরকারে থাকার ফলে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনেক দেশ এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদ্যের ভূমিকার প্রশংসা করে। বিদেশি অতিথিরা দেশে এলে তাঁদের নিরাপত্তায় থাকা এসএসএফ সদস্যদেরও ভূয়সী প্রশংসা করে থাকেন বলে তিনি জানান।

 তিনি এসএসএফ সদস্যদের জন্য তাঁর দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে বলেন, তিনি যখন দোয়া করেন শুধু নিজ পরিবারের জন্যই নয়, সহকর্মী এবং দেশবাসীর জন্যও দোয়া করেন। বিশেষ করে যাঁরা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরও মঙ্গল কামনা করেন তিনি। আমাদের দেশ অনেক রক্তপাত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তা যেন বৃথা না যায় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর