নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তবে তিনি আশা করেন, আমেরিকার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা এসব (নিষেধাজ্ঞা আরোপ) করবে না। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কাতার ইকোনমিক ফোরামে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে ভ্রমণ সতর্কতাকে ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা হবে কি না, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। ওরা (আমেরিকা) আমাদের বলে কয়ে কিছু করে না...। তবে এটি নির্ভর করে স্ব স্ব সরকারের ওপর। এটি যদি হয়, তবে বিষয়টি হবে দুঃখজনক। আমেরিকা হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, আমেরিকার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা এসব করবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক সফর ও বিভিন্ন ফোরামে তাদের বক্তব্য অত্যন্ত পজিটিভ ছিল। এবং অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ছিল এবং পরিপক্ব ছিল।
একটি দৈনিক পত্রিকার নাম উল্লেখ করে আবদুল মোমেন বলেন, এখানে একটি মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এটি আমাদের সরকারের জন্য অপমানজনক। মিথ্যা তথ্যটি হচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানে আমি, মন্ত্রী হওয়ার আগে চাইনিজ লবিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। এটা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা। কোনো দিন কোনো চাইনিজ কোম্পানিতে কাজ করেননি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বরং বলতে পারেন, আমি সারা জীবন আমেরিকায় ছিলাম এবং সেখানে কাজ করেছি। আমি জানি না, তারা কেন এটি করল। খুব অদ্ভুত! জেনে-শুনে এ মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিবিদরা অনেক কিছু বলেন, যাতে অন্যদের জন্য সতর্কবাণী থাকে। এবং সেটার আক্ষরিক অর্থে কীভাবে হবে, আমি বলতে পারব না। তিনি বলেন, আমরা ফেলে দেওয়ার দেশ না। আমরা মোটামুটিভাবে এখন আগের মতো দরিদ্রক্লিষ্ট, দানের ওপরে নির্ভর দেশ না। আমাদের জাতির গর্ব আছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও অবস্থান নিয়ে গর্বিত। আমরা বিভিন্ন রকম প্রতিকূল পরিবেশেও আমরা বিজয়ের জাতি, আমরা অর্জন করেছি। সুতরাং কেউ চোখ রাঙিয়ে আমাদের দিকে তাকালেই আমরা ভড়কে যাব, আমরা এমন না। এটা হচ্ছে ইঙ্গিত যে, বাংলাদেশ হচ্ছে বিজয়ের জাতি, আমরা কোনো ধরনের প্রলোভনে, কোনো প্রতিকূল পরিবেশে ঘাবড়ে যাব না, আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব, মোকাবিলা করার ক্ষমতা আছে। সে বক্তব্যটাই বোধহয় বেসিক্যালি বলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে ভ্রমণ সতর্কতাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আজকে থেকে প্রায় সাত-আট মাস পর নির্বাচন হবে আর ইতোমধ্যে মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। এটা তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কেন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ঠিক কোনো ধরনের হত্যা নেই, রাস্তাঘাটে কেউ গুলি করে কাউকে মারে না, কোনো সভা-সমিতিতে কাউকে কেউ মারে না, আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অজ্ঞাতভাবে রাস্তার ওপরে প্রায় শূন্য আর পূর্বে যদি শত্রুতা থাকে, তাহলে হয়। আর মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে তারা এত ক্ষেপবে কেন, কোনো অন্যায় তো মার্কিন নাগরিকরা এখানে করছে না। এটা খুবই অ™ভুত। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উন্নত’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এগুলোর কোনো কারণ নেই যে, এ সহিংসতা হবে, যার জন্য অগ্রিম একটা সতর্কতা দিতে হবে। বরং কেউ কেউ হয়তো সতর্কতা দেওয়া উচিত যে, আমেরিকায় গেলে মলে কিংবা বারে কিংবা স্কুলে সাবধানে থাকবে। এটা হয়তো সতর্কতা দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হবে। যা-ই হোক, এটা তাদের ব্যাপার। নিশ্চয়ই তাদের কোনো বিষয়-আশয় আছে, সেটা তারা ভালো বলতে পারবে।