বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে আস্থার জায়গা ধরে রাখতে হবে

আম্বারীন রেজা, সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফুডপ্যান্ডা বাংলাদেশ

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে আস্থার জায়গা ধরে রাখতে হবে

দেশের ৬৪টি জেলায় চলছে ফুডপ্যান্ডার কার্যক্রম। বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতে শীর্ষস্থানীয় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ফুডপ্যান্ডা। ই-ক্যাবের পরিচালক ও ফুডপ্যান্ডার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আম্বারীন রেজা কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সাইফ ইমন

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি ইক্যাবের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, ই-কমার্সে প্রতারণা নিয়ে কী বলবেন?

আম্বারীন রেজা : মূল জায়গাটা হচ্ছে গ্রাহকরা যাতে প্রতারিত না হন এ জন্য সচেতনতা তৈরি করা। গ্রাহককে ডিজিটালি লিটারেট করতে হবে। যাতে তারা অনলাইনে কেনাকাটায় আরও সচেতন থাকেন। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোরও নিজেদের আস্থার জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের ই-কমার্সে অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে নিয়ম মেনে আস্থার জায়গাটা ধরে রেখে ই-কমার্স ব্যবসা করার উদাহরণও কিন্তু আছে। কিছু কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া খুবই সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা সচেতন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা কঠিন। এ জন্য সচেতনতা তৈরি জরুরি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ফুডপ্যান্ডা নিয়ে আপনার শুরুটা কীভাবে হলো? অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আম্বারীন রেজা : ফুডপ্যান্ডা যত উন্নতি সাধন করছে ততই মনে হচ্ছে এখনো কত কিছু করার বাকি। মনে হয় কেবল শুরু, এখনো অনেক কিছুই করতে হবে। কারণ এখন সমস্যাগুলোকে আরও গভীরভাবে বুঝতে পারছি। কীভাবে আমাদের রাইডারদের জীবন আরও সহজ করতে পারি। তাদের কীভাবে আরও ভালো আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারি। যাতে তাদের জীবনমান আরও উন্নত হয়। টেক কোম্পানি চালানোর জন্য একটা সাসটেইনেবল বিজনেস মডেল তৈরি করা, একই সঙ্গে আমাদের রেস্টুরেন্ট পার্টনারদের ওপর যাতে প্রেসার না হয় তাও খেয়াল রাখা। আমরা যত বড় হব, ততই ইকোসিস্টেমটা বড় হবে। আমাদের দায়িত্ব বাড়বে। দায়িত্বের ভার বাড়বে। আমার মনে হয়, তখনকার আম্বারীন খুবই প্যাশনেট ছিল। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যখন দেশে থ্রিজি আসে তখন আমরা স্টার্টআপ শুরু করি। তখনকার দিনে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট পাওয়া কত কঠিন ছিল। টেক ইন্ডাস্ট্রিতে আমার এই ১০ বছরের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নতুনদের সাহায্য করতে চাই। শুরুর দিকে আমরা অনেক সুযোগ পাইনি, নতুনদের জন্য এমন সুযোগ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। নতুন স্টার্টআপ যখন উন্নতি করবে তখন ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গ্রো করবে। ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে। একা উন্নতি করে লাভ নেই। শুধু ফুডপ্যান্ডা একা করতে পারবে না। দেশের ২-৩ কোটি মানুষকেও যদি টোটালি ডিজিটালি কানেক্ট করা যায়। ধরেন তারা প্রতিদিন ডিজিটালি গ্রোসারি কিনছে, খাবার কিনছে, শপিং করছে, ফিনটেক ইউজ করছে, লোন প্রোডাক্ট সবকিছু তারা ডিজিটালি করছে, এটাই তো একটা বিশাল ইকোসিস্টেম। তাহলে ডিজিটালি আমরা দেশের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাব। আজকের আম্বারীন রেজার সেই প্যাশনের পাশাপাশি এই দায়িত্ববোধের জায়গাগুলো তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নারীর প্রতি প্রতিবন্ধকতা মানুষ হিসেবে কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?

আম্বারীন রেজা : আমার বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। কোনো কিছুতে বাধা হয়ে দাঁড়াননি। আমি যখন স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়ার সুযোগ পাই তখন অনেকেই আমাকে বিদেশে যেতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু আমার বাবা-মা আমার পাশে ছিলেন। তাদের কারণে আমার এই কাজগুলো করা সম্ভব হয়েছে। আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে, আমার বাবা-মা আমাকে সমান অধিকারের সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের সমাজে এখন নারী আর পুরুষের ভেদাভেদ কমে আসছে। আমাদের চিন্তার পরিবর্তন হচ্ছে। আমি সমান অধিকারে বিশ্বাসী। আমাদের প্ল্যাটফরমে সব লিঙ্গের মানুষই সমান সুযোগ পেয়ে থাকেন। নারীরা নিরাপদে রাইডার পার্টনার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা অনেক হোমমেকারদের হোমশেফ হিসেবে আয় করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। লিঙ্গবৈষম্য নিরসনের একমাত্র উপায় হলো নিজের মেধা এবং দক্ষতার পরিচয় দেওয়া।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশে অনলাইনে খাবারের ব্যবসার সম্ভাবনা কেমন মনে করছেন?

আম্বারীন রেজা : গত ১০ বছরে রেস্টুরেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া এখন মানুষের জীবনের আনন্দের অন্যতম উৎস। আবার খাবার বাংলাদেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। একই সঙ্গে আমাদের জীবনযাপনে ডিজিটাল নির্ভরতাও বেড়েছে। মানুষ অনলাইনে তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় খাবার অর্ডার করছেন। এটাও তাদের আনন্দের অংশ হয়ে গেছে। জীবনে যত গতি আসবে, মানুষ ততই স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ডিজিটাল সার্ভিসে অভ্যস্ত হবে। বিশ্বজুড়েই অনলাইন ফুড ডেলিভারি ইন্ডাস্ট্রি একটি বিকাশমান খাত। বিগত বেশ কয়েক বছরে এ খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশেও এ খাতের প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। করোনা মহামারি এ সেক্টরের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ডিজিটাল সার্ভিস নিচ্ছেন। দেশের টেকনোলজিরও উন্নয়ন হচ্ছে।  ফলে আমাদের দেশের ফুড ডেলিভারি আগামীতে আরও বিকশিত হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশে ফুডপ্যান্ডার বর্তমান কার্যক্রম?

আম্বারীন রেজা : আমরা দেশের ৬৪ জেলায় ফুড ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ ছাড়াও আমাদের গ্রোসারি ডেলিভারি সেবার ডার্কস্টোর প্যান্ডামার্ট দেশের সব বড় শহরে চালু রয়েছে। গ্রাহকদের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা দিতে নতুন সেবা ও ফিচার চালু করছি।

সর্বশেষ খবর