বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আর্থিক মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা

আবারও সতর্কবার্তা দিল আইএমএফ

মানিক মুনতাসির

আর্থিক মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে আর্থিক মন্দাও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ জন্য সংস্থাটি আবারও সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য গত ২৬ অক্টোবর থেকে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করছে। সংস্থাটি বলছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকিটা অনেক বেশি। এ জন্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজস্ব খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো, ব্যাংক সুদের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়াসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ কিছু সংস্কার আনারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একদিকে করোনা মহামারির প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে দেশে শুরু হয় জ্বালানি সংকট। বাড়তে থাকে পণ্যমূল্য। এতে অস্বাভাবিক হারে বাড়া মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়। অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানি খাতে কড়াকড়ি আরোপ করা সরকার। তবুও ডলার সংকট কাটেনি। বরং টানা পতনের পথেই রয়েছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাত।

এ ছাড়া আসন্ন মন্দার প্রধান ধাক্কা এখনো ্আঘাত হানেনি বিশ্ব অর্থনীতিতে। আগামী বছরের শুরুতেই এ আঘাত আসবে বলে ধারণা করছে আইএমএফ। এই সংকটকে প্রকট আকার ধারণ করিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এজন্য বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ফলে এই সংকট অন্যবারের চেয়েও দীর্ঘায়িত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি সত্ত্বেও গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হয়েছিল। এডিবি বলছে, এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। তার আগে টানা কয়েক বছর ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যেও স্থান করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ চলতি বছর শেষে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, এটা হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকও বলছে, চলতি বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। অবশ্য গতকাল সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তিন খাতে সংস্কারের কথা বলছে বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এসব খাতে সংস্কার না হলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি কমার পাশাপাশি ২০৩৫ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে। আর মোটামুটি ধরনের সংস্কার হলে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভালো রকম সংস্কার হলে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

অন্যদিকে জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপে চিঁড়েপ্যাপ্টা হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যদিও মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য সরকার প্রকাশ করছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম এবং মানুষের জীবনধারণের অবস্থা দেখলে মূল্যস্ফীতির চাপ যে অনেক বেশি তা খুব সহজেই অনুমিত হয় বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং সে কারণে তাঁর সরকার ইতোমধ্যেই আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এর আগে গত মাসেই বিশ্বব্যাংকও তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছিল যে, বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৩ সালের দিকে মন্দার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং আসন্ন এই মন্দা অন্যবারের তুলনায় বেশ দীর্ঘায়িত হতে পারে। মূলত দুই বছরের করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরেই বিশ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যা মোকাবিলায় দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার হিমশিম খাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর