যে দিকে তাকানো যায় শুধুই গাড়ি আর গাড়ি। এক ইঞ্চি সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। চার দিকে গাড়ির হর্ন, চিৎকার। সকলেই চান, এগিয়ে যেতে। কিন্তু তীব্র যানজট কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার উপায় নেই!
এমনই ছবি দেখা গেল ভারতের উত্তরপ্রদেশের মহানগর প্রয়াগরাজে। প্রশ্ন উঠছে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে।
মহাকুম্ভে কোটি কোটি মানুষের ভিড় হবে, তা আগে থেকেই ধারণা করেছিল সরকার। মেলা শুরুর আগে থেকেই পুণ্যার্থীদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বও দিচ্ছিল যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এমনকি, কোটি কোটি পুণ্যার্থীর ‘নিশ্ছিদ্র সুরক্ষা’র আয়োজনের দাবি করেছিল তারা।
মহাকুম্ভে ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিতে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর ভিড় প্রয়াগরাজে। কিন্তু লম্বা যানজটে আটকে অনেকেই ফিরতি পথ ধরেছেন। অনেকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই জ্যামের মধ্যেই আটকে থাকলেন। শুধু ছোট, বড় যাত্রিবাহী গাড়ি নয়, পণ্যবাহী লরি, ট্রাক, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সও আটকা পড়েছে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে।
ভুক্তোভোগীদের দাবি, ‘বিহার পেরোতেই গাড়ি আটকে পড়ছে তীব্র যানজটে।’
মধ্যপ্রদেশের মাইহারের পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু যানজটের কারণে প্রয়াগরাজের দিকে যাওয়া প্রায় অসম্ভব! পুলিশই ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের পরিসংখ্যান জানিয়েছে।
অনেকেরই দাবি, ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও যানজট কাটেনি। অনেকে আবার মহাকুম্ভের পথের এই যানজটকে ‘বিশ্বের বৃহৎ যানজট’ বলেও মনে করছেন।
অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লখনৌয়ের উত্তর রেলের কর্মকর্তা কুলদীপ তিওয়ারি জানান, স্টেশনের বাইরে এতই ভিড় যে পুণ্যার্থীরাও স্টেশন ছেড়ে বার হতে পারছেন না। সব দিক বিবেচনা করেই শুক্রবার পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এদিকে, আগামী বুধবার পড়েছে মাঘী পূর্ণিমার স্নান। তার আগে লাখো লাখো ভক্ত কুম্ভ যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। প্রয়াগরাজগামী প্রায় সব ট্রেন বাদুড়ঝোলা হয়ে চলেছে। অন্যদিকে, বিমান ভাড়া অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ধনীরাও টিকিট কাটতে পারছেন না। ফলে অনেকে বাস, ট্রেনে, যেতে না পেরে যাদের নিজেদের গাড়ি রয়েছে, তারা গাড়ি নিয়ে কুম্ভের দিকে যাচ্ছেন। লরি, ভাড়া করা বাস, টেম্পো, হাতি গাড়ি যে যা পারছেন তাতে করে প্রয়াগরাজ যেতে গিয়ে ৩০০ কি.মি দীর্ঘ যানজটে আটকে রাস্তাতেই দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উত্তরপ্রদেশের কাটনি থেকে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ কি.মি। সেই রাস্তা পুরো গাড়ি ও মানুষজনে ভরে রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও অন্যান্য রাজ্য থেকে জোড়া সড়কগুলোর সবকটিই গাড়ির ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে গতকাল রবিবার থেকে।
তীব্র যানজটের নানা ছবি, ভিডিও রবিবার থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি এবং পুণ্যার্থীদের দুর্ভোগের কথা তুলে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ‘অব্যবস্থাপনা’ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, ‘যানজটে আটকে থাকা ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত তীর্থযাত্রীদের মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখা উচিত।’ তিনি তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারে জরুরি ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে।
সূত্র : আনন্দবাজার ও হিন্দুস্তান টাইমস।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত