রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনকে ঘিরে চীনের শান্তি পরিকল্পনা চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। তবে এই পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আগে ‘পশ্চিম ও কিয়েভকে’ প্রস্তুত হতে হবে। মঙ্গলবার মস্কোতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুই প্রেসিডেন্টের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ কথা বলেন। তার বক্তব্য ‘ইউক্রেন সংঘাত বন্ধের ভিত্তি হিসেবে চীনের দেওয়া শান্তি পরিকল্পনার অনেক কিছুই গ্রহণ করা যেতে পারে; তবে এর জন্য আগে পশ্চিম এবং কিয়েভকে প্রস্তুত হতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে শি জিন পিং চীন এবং রাশিয়াকে ‘শক্তিশালী প্রতিবেশী এবং ব্যাপক কৌশলগত অংশীদার’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ইউক্রেন সংঘাতে চীন নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন সবসময় শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে রয়েছে। এর আগে, ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধ ও শান্তি স্থাপনের জন্য ১২ দফা প্রস্তাব করে চীন। চীনের প্রস্তাব করা ওই দফাগুলোতে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। বরং এতে সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো এবং সব পক্ষকে ‘যৌক্তিক আচরণ’ করার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন চাইছে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনার আগে রাশিয়া যেন ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু সেজন্য রাশিয়া প্রস্তুত- এমন ইঙ্গিত এখনো পর্যন্ত মেলেনি।
সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন দুই নেতা : চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক জোরদারের পরিকল্পনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করেন দুই দেশের নেতা। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য, রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেন তারা। বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, চীনের সহযোগিতায় রাশিয়ার অগ্রাধিকার হলো বাণিজ্য ও অর্থনীতি। তিনি বলেন, রাশিয়ার শীর্ষ বৈদেশিক বাণিজ্যিক অংশীদার হলো চীন। দুই দেশে অর্থ, পরিবহন ও লজিস্টিকস খাতে নিজেদের সম্পর্ক গভীর করবে। জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাস বাণিজ্যও বাড়ছে দুই দেশের। পুতিন আরও বলেছেন, রাশিয়া ও চীন পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অগ্রগতি চালিয়ে যাচ্ছে। চীনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতা করছে রাশিয়া। এর আগে শি চীন ও রাশিয়াকে ‘প্রতিবেশী শক্তি ও ব্যাপক কৌশলগত অংশীদার’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। পুতিনের পর সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান শি জিন পিং।মস্কোতে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সময় কাটানো এবং রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী আতিথেয়তা ও উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ‘খুব খুশি’ হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, ‘দুই নেতা একে অপরকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সমর্থন করে যাচ্ছেন এবং তা অব্যাহত থাকবে। আমাদের আলোচনা হয়েছে খোলামেলা, অবাধ ও বন্ধুত্বপূর্ণ।’
বেইজিংয়ের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গত মাসে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে চীন তার অবস্থান প্রকাশ করেছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে জাতিসংঘের সনদ মেনে চলছি’।