ইরান যে কোনো নতুন সামরিক হামলার কঠোর জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন। খামেনি বলেন, গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘর্ষে যেভাবে পাল্টা আঘাত হানা হয়েছিল, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে তার চেয়েও বড় জবাব দিতে সক্ষম ইরান।
তার ভাষ্যমতে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানের সংবেদনশীল কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আমাদের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, জনগণের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাস্তায় নামিয়ে এনে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। গত মাসের ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইরান একযোগে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের দিকে। যদিও এর বড় একটি অংশ প্রতিহত করে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা- তেহরান এটিকে ‘প্রতিরক্ষামূলক ও বৈধ জবাব’ বলে উল্লেখ করেছে।
খামেনির সাম্প্রতিক বক্তব্যে আত্মবিশ্বাস, প্রতিরোধের বার্তা এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ বক্তব্য ইসরায়েলসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি কূটনৈতিক বার্তা এবং একই সঙ্গে ইরানের অভ্যন্তরে মনোবল সৃষ্টির একটি কৌশল। এ বক্তব্যের মাধ্যমে খামেনি ইরানের ‘স্বতন্ত্র ও অদম্য প্রতিরোধনীতি’-র ওপর দেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বার্তা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও উসকে দিতে পারে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা নয় : ইরানের পার্লামেন্ট বলেছে, পূর্বশর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফের পরমাণু আলোচনা শুরু করা তেহরানের উচিত হবে না। গতকাল শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তাদের এ বিবৃতি এসেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ‘ইরানকে ধোঁকা দিতে ও জায়নবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) আকস্মিক হামলাকে আড়াল করতে যুক্তরাষ্ট্র যখন আলোচনাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন আগের মতো আলোচনা হওয়া উচিত নয়। সুনির্দিষ্ট পূর্বশর্ত ঠিক করতে হবে এবং সেসব পুরোপুরি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো নতুন আলোচনা হতে পারে না,’ বিবৃতিতে বলেছে ইরানের পার্লামেন্ট। বিবৃতিতে পূর্বশর্ত নিয়ে বিস্তারিত বলা না হলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, ইরানের ওপর আর হামলা হবে না-এমন নিশ্চয়তা না দিলে তারা আলোচনায় রাজি হবেন না। তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে- এমন দাবি করে গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তেহরান শুরু থেকেই বারবার বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্যই হচ্ছে বেসামরিক উন্নয়ন, অস্ত্র বানানো নয়। রয়টার্স ও আলআরাবিয়া
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের গত মাসের ১২ দিনের আকাশ যুদ্ধের আগে ওমানের মধ্যস্থতায় তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পাঁচ দফা পরোক্ষ আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ঘরোয়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধের দাবি তুললে ওই আলোচনা কার্যত থমকে যায়। তেহরানের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে দিনকয়েক আগেই আরাগচি বলেছেন, তারা এমন কোনো পরমাণু চুক্তিতে রাজি হবেন না যেখানে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকবে না। পরমাণু কর্মসূচির বাইরে কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা হলে সেখানেও তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মতো কিছু নিয়ে কথা বলবেন না। এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাড়া নেই তার কারণ তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তিন ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওয়াশিংটনও একটি চুক্তির জন্য আগস্ট পর্যন্ত ইরানকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পক্ষে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ নোয়েল বারোও মঙ্গলবার বলেছেন, আগস্ট শেষ হওয়ার আগে চুক্তির পথে কোনো অগ্রগতি দেখা না গেলে প্যারিস, লন্ডন ও বার্লিন জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকরের পদ্ধতি চালু করে দেবেন। তেমনটা হলে তেহরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ফের বলবৎ হবে।