দ্রুজ সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিন শর বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল ও সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের দূত। বুধবার ইসরায়েল দামেস্কে বিমান হামলা চালায় ও দক্ষিণে সরকারি বাহিনীর ওপর তুমুল আঘাত হানে। সুইদা থেকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের বাহিনীকে সরতে হবে দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্যই হচ্ছে সিরিয়ার দ্রুজদের সুরক্ষিত রাখা। এদিকে সুওয়াইদা প্রদেশে চলমান সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) এই তথ্য জানিয়েছে।
সিরিয়ায় দ্রুজরা সংখ্যায় অল্প হলেও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বেশ প্রভাব রয়েছে; লেবানন ও ইসরায়েলেও শিয়া ইসলামের এ শাখার অনেকে বসবাস করেন। ‘আমরা দ্রুজ, বেদুইন ও সুন্নিদেরকে অস্ত্র নামিয়ে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি এবং অন্য সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি নতুন ও ঐক্যবদ্ধ সিরিয়ান পরিচয় নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি,’ তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টম বারাক শুক্রবার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমনটা বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে এ যুদ্ধবিরতিতে তুরস্ক, জর্ডান ও অন্য প্রতিবেশীরা সমর্থন দিয়েছে, বলেছেন তিনি। এ নিয়ে রয়টার্স ওয়াশিংটনের ইসরায়েল দূতাবাস এবং কানাডার সিরিয়ান কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক থেকে সাড়া পায়নি। তবে শুক্রবার নাম প্রকাশ করতে রাজি না হওয়া এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, দক্ষিণ সিরিয়ার সুইদাতে সরকারি বাহিনীকে আগামী দুই দিনের জন্য সীমিত প্রবেশাধিকার দিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। পরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের সংঘর্ষ থামাতে একটি বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করবে কর্তৃপক্ষ। তারা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সহিংসতা ফিরে আসা ঠেকাতে কাজ করবে। বেদুইন যোদ্ধা ও দ্রুজদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংঘর্ষের পর সিরিয়ার সুইদা প্রদেশে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা দেখা যাচ্ছে। আহমেদ আল-শারা নেতৃত্বাধীন দামেস্কে ক্ষমতাসীনরা প্রথম দিকে যুদ্ধ থামাতে সুইদাতে সরকারি বাহিনী পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওই বাহিনীর বিরুদ্ধেই দ্রুজদের ওপর বিস্তৃত হামলার অভিযোগ ওঠে। পরে ইসরায়েল সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করে। দ্রুজদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর বুধবার সরকারি বাহিনী ওই এলাকা ত্যাগ করে। ইসরায়েল বারবার বলেছে, তারা সিরীয় বাহিনীকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে মোতায়েন হতে দেবে না। তবে শুক্রবার তেল আবিব আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বলে, সুইদায় নতুন সংঘাত বন্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা শারার বাহিনীকে দুই দিন সময় দিচ্ছে। শুক্রবার ভোরের আগেও তেল আবিব সুইদায় একাধিক হামলা চালিয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদকরা সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউনিটগুলোর একটি বহরকে দারা প্রদেশের রাস্তায় দেখেছেন, এ প্রদেশটি সুইদার পূর্বে অবস্থিত।-আলজাজিরা ও এফপি
এক নিরাপত্তা সূত্র সে সময় রয়টার্সকে বলেছিল, তারা সুইদায় প্রবেশে ‘চূড়ান্ত সবুজ সংকেতের’ জন্য অপেক্ষা করছেন। এদিকে শুক্রবারও কয়েক হাজার বেদুইন যোদ্ধাকে সুইদাতে ঢুকতে দেখা গেছে, যে কারণে বাসিন্দারা সংঘাত সহসা থামবে না বলেও আশঙ্কা করছেন। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তারা গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে চিকিৎসাকর্মী, নারী, শিশুসহ ৩২১ জন নিহতের তথ্য নথিভুক্ত করেছে। সিরিয়ার জরুরি পরিষেবা মন্ত্রী জানিয়েছেন, ৫ শতাধিক আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, কয়েক শ পরিবারকে সুইদা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রদেশটির উত্তর ও পশ্চিমে সংঘাত অব্যাহত আছে বলে এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সুইদা টোয়েন্টিফোরের প্রধান রায়ান মারুফও জানিয়েছেন।