১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১২:১২

কোরআনের প্রথম শব্দ পড়া এবং আমাদের পড়া

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআনের প্রথম শব্দ পড়া এবং আমাদের পড়া

প্রতীকী ছবি

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের আগের সময়টাকে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়া তথা মূর্খতার যুগ। ইতিহাসবিদরা বলেন, ওই সময়ে মানুষ ও পশুর জীবনপদ্ধতির মাঝে কোনো পার্থক্য ছিল না। মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেললে মানুষ পশু হয়ে যায়। আর নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেললে মনুষ্যত্ব চলে যায়। 

ওই সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল রক্তের হোলি খেলা আর উদ্দাম যৌনতা। মাদক ছিল তাদের নিয়মিত খাবারের অংশ। শিশু ও নারীর প্রতি চলত চরম নিষ্ঠুরতা। হেন নির্মমতা নেই যা মানুষ মানুষের সঙ্গে করত না। এমন ঘোর মূর্খতার যুগ থেকে মানুষকে জ্ঞানের দিকে আলোকিত যুগে নিয়ে আসে কোরআন। 

কোরআনের প্রথম নাজিল হওয়া শব্দটি নিয়ে একটু চিন্তা করা দরকার। কোরআন প্রথমেই মানুষকে বলেনি, ইবাদত কর, ভালো হও, মন্দ ছাড়...। কোরআন বলেছে ‘ইকরা’- পড়। পৃথিবীর জ্ঞানীরা ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে যাচ্ছে, এত এত বিষয় থাকতে কোরআন ইকরা দিয়ে নাজিল হলো কেন? এর উত্তর একটাই- মানুষকে মানুষ হতে হলে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পড়া হলো আলোকিত জগতে, শান্তির জগতে প্রবেশের প্রথম পদক্ষেপ। 

‘ইকরা’- পড়। এ পড়া মানে শুধু কোরআন কিংবা ইসলামী জ্ঞানার্জন নয়। ইকরা মানে হলো পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরে পড়া বলতে যত বিষয় আছে সেসব পড়ে ফেলা। তবে সুফিরা বলেন, পড়া মানে কোনো গ্রন্থ পড়া নয়। পড়া হলো প্রভুর সৃষ্টিরাজি পড়ে, দেখে, বিশ্লেষণ করে প্রভুকে চেনার পথে হেঁটে চলা। এটা হলো সর্বোচ্চ স্তরের পড়া। এ স্তরে আসার আগে নিচের স্তরের অর্থাৎ কাগজের বই পড়ে নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে নিতে হয়। তবেই প্রভুকে চেনার পাঠশালায় ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যাবে।

খুব আফসোসের সঙ্গেই বলতে হয়, ‘ইকরা’র ধারক-বাহক মুসলমান আজ আসমানি পড়া থেকে বহু দূরে সরে আছে। প্রভুকে চেনার পড়া তো এখন আর হয় না বললেই চলে। আজকালকার পড়া হয়ে গেছে সার্টিফিকেটের পড়া। পরীক্ষায় পাস করে ‘এ প্লাস’ পাওয়ার ধান্ধায় ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাই এখন পাগল। শিক্ষার্থী কতটুকু জ্ঞান অর্জন করল, কাগুজে পড়া কতটুকু হজম করল সেই ধান্ধা। 

প্রভুকে চেনার বিশ্বজোড়া পাঠশালায় ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা কতটুকু অর্জন করল সে খবর না শিক্ষক রাখেন, না অভিভাবক তলিয়ে দেখেন। ফলে আজকের বাংলাদেশে সার্টিফিকেটধারীর প্রাধান্য। যে কারণে দেশের সেরা মেধাবীরাই সেরা অন্যায় করে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ভাষার মাসে অক্ষরের উৎসবে মেতে ওঠার এই বর্ণিল আনন্দে শরিক হওয়া নিঃসন্দেহে ইবাদত। 

বই পড়তে, বই কিনতে, বইয়ে প্রচার-প্রসারে মানুষকে উৎসাহ দেওয়া অর্থাৎ বইসংক্রান্ত যে কোনো পদক্ষেপ ‘ইকরার’ প্রথম স্তরের কাজের অন্তর্ভুক্ত। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কর্তব্য বইমেলায় আসা। পুঁজিবাদী বিশ্বে বইকে বাঁচিয়ে রাখা ও জ্ঞানচর্চার প্রবাহিত স্রোতের স্বাভাবিক গতি ধরে রাখার জন্যও বইয়ের ব্যপক প্রচার-প্রসার প্রয়োজন।

প্রতিদিন কত বাজে কাজেই তো অফুরন্ত সময় নষ্ট করি আমরা। একটি ভালো বইয়ের এক পৃষ্ঠা করেও যদি দৈনিক পড়ি, মাস শেষে বইটি শেষ হয়ে যাবে। দৈনিক ১০ পৃষ্ঠা করে যদি পড়ি, বছর শেষে বিরাটসংখ্যক বই পড়ে ফেলতে পারব। ১০ বছরের কয়েকটি লাইব্রেরির জ্ঞান আমাদের মাথায় থাকবে। আমাদের আত্মার জগৎ জ্ঞানের আলোয় চমকাতে থাকবে। আল্লাহ আমাদের আত্মায় জ্ঞানের আলো দান করুন।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

বিডি প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর