ভারতজুড়েই কোভিড-১৯ সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যাও। এই আবহেই দেশটির পাঁচ রাজ্য- উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, গোয়া এবং মণিপুর’এ বিধানসভার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। ভোট নেওয়া হবে পাঁচ রাজ্যের মোট ৬৯০টি বিধানসভার আসনে। মোট ভোটারের সংখ্যা ১৮ কোটি ৩৪ লাখ, যার মধ্যে ৮ কোটি ৫৫ লাখ নারী ভোটার। নতুন ভোটারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৯০ হাজার। ভোট শুরু হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। চলবে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভোট গণনা আগামী ১০ মার্চ।
করোনার আবহে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিলেও শনিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছেন কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হবে নির্বাচনের সব কাজকর্ম। সেক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি প্রচারের ওপরই কার্যত বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র জানান ‘কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে আগামী ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত ওই পাঁচ রাজ্যে কোনো রোড শো, পদযাত্রা, সাইকেল বা বাইক র্যালি, মিছিল করা যাবে না। পরবর্তীতে পরিস্থিতির বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অতিমারির দিকে তাকিয়েই পাঁচ রাজ্যেই ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে এবং একটি বুথে সর্বাধিক ১২৫০ জন ভোটারকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। বাড়ি বাড়ি প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রার্থীসহ সর্বাধিক ৫ জন ব্যক্তি থাকতে পারবেন। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি, নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করার অভিযোগ পেলে ১০০ মিনিটের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে কমিশন। ভোটের সাথে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তিকে করোনা টিকার দুইটি ডোজই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাড়ছে পোলিং স্টেশনের সংখ্যাও। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনলাইনেই মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে।
এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সাথে সাথেই ওই রাজ্যগুলোতে নির্বাচনী বিধি লাগু হয়ে গেল। যে রাজ্যগুলোতে ভোট হবে তার মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশ। দেশটির হিন্দি বলয়ে আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কৌশলগত গুরুত্বের দিক থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়ে থাকে যে, এই রাজ্যটিতে যে দল সরকার গঠন করবে, লোকসভার নির্বাচনেও সেই দল তত বেশি অ্যাডভান্টেজ পাবে। স্বাভাবিকভাবেই ২০২৪ সালে ভারতে পরবর্তী লোকসভার নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন প্রতিটি দলের কাছেই সেমিফাইনাল। একদিকে মোদি-অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি, অন্যদিকে রয়েছে অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (সপা), মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন ‘বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বসপা), এছাড়াও কংগ্রেস তো রয়েছেই।
শেষবার ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনও সাত দফায় সম্পন্ন হয়েছিল। সেসময় ৪০৩ আসনের মধ্যে ৩১২ আসনে জিতে সরকার গঠন করেন বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেন যোগী আদিত্যনাথ। এবারও হিন্দিবলয়ের এই রাজ্যটিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা বলে পরিচিত যোগী।
দেশটির বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মোট বিধানসভার আসন ৪০৩ টি। মোট ৭ দফায় চলবে ভোট প্রক্রিয়া। প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি, এর পরের দফাগুলো যথাক্রমে ১৪, ২০, ২৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ৩, ৭ মার্চ।
উত্তরাখণ্ডে (৭০ আসন), পাঞ্জাব (১১৭ আসন) এবং গোয়া (৪০ আসন) একটি মাত্র দফায় ভোট নেওয়া হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে ৬০ আসনে ভোট হবে দুই দফায়। প্রথম দফার ভোট ২৭ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দফার ভোট ৩ মার্চ।
উত্তরপ্রদেশের মতো উত্তরাখণ্ড, গোয়া ও মণিপুরেও সরকারে আছে বিজেপি। একমাত্র পাঞ্জাবে সরকারে আছে কংগ্রেস।
উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতা ধরে রাখতে গত বছরই এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে বদল আনে বিজেপি। পাহাড়ি এই রাজ্যটিতে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে কংগ্রেস এবং এই রাজ্যে প্রথমবারের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। শেষবার ২০১৭ সালের নির্বাচনে ৭০ টি আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ৫৬টি, কংগ্রেস জয় পায় ১১ টি আসনে।
গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্ত নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার এবারও ভারতের উপকূলবর্তী রাজ্যটিকে নিজেদের দখলে রাখতে যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেপির সাথে এরাজ্যে প্রধান লড়াই কংগ্রেসের। তবে সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে একাধিক নেতা ও সমাজের বিভিন্ন পেশাপেশীর মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির একসময়ের শরিক দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির (এমজিপি) সাথে গাঁটছড়া বেধে গোয়ার নির্বাচনী ময়দানে পা রাখতে চলেছে তৃণমূলও। সেই সাথে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি।
মণিপুরে ২০১৭ সালের বিধানসভার নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে উঠে আসে কংগ্রেস, তাদের ঝুলিতে আসে ২৮ টি আসন। যদিও পরবর্তীতে একাধিক কংগ্রেস নেতা দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেয়। পরে ‘নাগা পিপলস ফ্রন্ট’ (এনপিএফ), ‘ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’ (এনপিপি), ‘লোক জনশক্তি পার্টি’ (এলজেপি), স্বতন্ত্র দলের সমর্থন নিয়ে সেখানে সরকার গঠন করে বিজেপি। গত পাঁচ বছরে এই রাজ্যে নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দলের ফলে নিজেদের শক্তি বেশ খানিকটাই কমেছে কংগ্রেসের, সেই সাথে রয়েছেন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের অভাব।
অন্যদিকে পাঞ্জাবে ফের সরকার গড়তে মরিয়া কংগ্রেস। অন্যদিকে রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাবেক কংগ্রেস নেতা ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং’এর সাথে অ্যালায়েন্স করে নির্বাচনী ময়দানে ঝড় তুলতে প্রস্তুত গেরুয়া শিবিরও। নির্বাচনী লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন দলকে টক্কর দিতে পারে শিরোমনি আকালি দল, আম আদমি পার্টির (আপ) মতো দলগুলো।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ