শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কৃষকের উন্নয়নে আসছে ১০ হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি

প্রতি বছর ৩ লাখ নতুন কৃষককে ঋণ দেওয়া হবে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কৃষকের উন্নয়নে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে, যেখানে থাকছে ফসল উৎপাদনে স্বল্প সুদে ঋণ, পশু ও মৎস্য চাষে সহায়তা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে সহায়তা, গ্রামপর্যায়ে কর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগ এবং কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এ কার্যক্রম গ্রহণ করবে। সম্প্রতি বিকেবি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। জানা গেছে, দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এ কার্যক্রম নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর একটি সভা করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যার সভাপতি ছিলেন  ওই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অরিজিৎ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিকেবি শুধু স্বল্প সুদে প্রান্তিক কৃষকদের ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিল। তাদের বলা হয়েছে, সরকারের এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন করে প্রস্তাব দিতে। আমরা বলেছি, যেহেতু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ ধরনের একটি কার্যক্রম প্রস্তাব করা হয়েছে, সে কারণে এতে কৃষি ঋণের পাশাপাশি এমন কিছু উদ্যোগ থাকবে, যা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি সহায়তার পাশাপাশি গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়তা করবে। ১০ হাজার কোটি টাকার এ কার্যক্রমে ৯ হাজার কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ থেকে এবং ১ হাজার কোটি টাকা সরকারের পক্ষে কৃষি ব্যাংক বহন করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। কর্মসূচিটির প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবে কৃষি ব্যাংক বলেছে, দেশে মোট কৃষি পরিবারের সংখ্যা ২ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার, যার মধ্যে মাত্র ১ কোটি ১ লাখ ৫৪ হাজার পরিবার বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে। ঋণপ্রাপ্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা মোট কৃষক পরিবারের মাত্র ৩৬ শতাংশ। ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে আবার ২৬ শতাংশ কৃষক বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশ এনজিও এবং  অন্যরা মহাজন ও অন্যান্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে থাকে, যার ন্যূনতম সুদের হার ২৪ শতাংশ। কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যারা ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিয়ে থাকে তাদের কমপক্ষে ৯ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হয়। ১০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলে আমরা ১ থেকে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ধরে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছরের ১৭ মার্চ থেকে পরবর্তী চার বছরের জন্য কর্মসূচিটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়ছে। এ কর্মসূচির আওতায় সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ঋণ পাবেন প্রতি কৃষক। প্রতিবছর ৩ লাখ নতুন কৃষককে ঋণ দেওয়া হবে। স্বল্প সুদে এই ঋণ সহায়তামূলক কর্মসূচিটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে এটি দেশের শস্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং দেশের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে বলে মনে করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বিবেচনা করা হয়। কৃষির পাশাপাশি এ খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ। শিল্প খাতে কর্মরত জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ ভাগই এসএমই খাত। গ্রাম পর্যায়ে এসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সহজেই দুই অংকের ঘরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

সর্বশেষ খবর